ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন ২ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

ভিত্তিহীন গুজবে ব্যাংকিং খাত > ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংক

পরের সংবাদ

গত বছরও পাননি ন্যায্যমূল্য : ঋণের বোঝা নিয়েই রসুন চাষে চলনবিলের কৃষক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। কাদা জলে চলছে আমন ধান কাটা। ধান কাটা শেষে জমি পরিষ্কার করে ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই কাদা মাটিতে সাদা সোনা খ্যাত মসলা জাতীয় ফসল রসুন লাগাতে শুরু করেছে চলনবিলের কৃষক। এক সপ্তাহের মধ্যেই রোপণকৃত রসুনের চারা বের হবে। গত বছর রসুনের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা চলনবিলের কৃষক। যার কারণে রসুনের আবাদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে এই এলাকার কৃষকরা।
চলনবিল অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় রসুনে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া চলতি বছরে বীজ, সার-কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি, শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৫/৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে চলনবিলে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়ায় মোট ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি বিঘায় বীজ বাবদ ১২ হাজার, সার-কীটনাশক বাবদ ১০ হাজার, শ্রমিক খরচ ৮ হাজার, সেচ বাবদ ৬ হাজার টাকা।
এছাড়া ক্ষুদ্র বর্গা চাষিরা প্রতি বিঘা জমি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বর্গা (লিজ) নিয়ে অধিক খরচে রসুন আবাদ করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০) জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘাপ্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানিসহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘাপ্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ রসুনের দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
একই এলাকার পাটপাড়া গ্রামের কৃষক সুকুমার সরকার জানান, তিনি চলতি বছরে ৬ বিঘা বর্গা (লিজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। কৃষিতে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে সমিতি (এনজিও) থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদ নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে ঋণের বোঝা ও সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
চলনবিলের রসুনচাষি আফজাল হোসেন ও জামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, গত প্রায় ২২ বছর ধরে চলনবিল অঞ্চলে ‘বিনাচাষে রসুন’ আবাদ শুরু হলেও রসুনের আশানুরূপ দাম না থাকায় ঋণ কর্জ করে জমি লিজ নিয়ে রসুন রোপণ করছেন তারা। এ বছরও দাম না পেলে পথে বসতে হবে তাদের।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চলনবিলে এ বছর ২২ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে রসুন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রসুন চাষ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ রসুন চাষ হয় চলনবিলের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহর ও সিংড়া বিলের কিছু অংশে। প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ এবং সার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়