জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা : সুনির্দিষ্ট করারোপ তামাক নিয়ন্ত্রণে বড়ো হাতিয়ার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী শিগগিরই একটি শক্তিশালী জাতীয় করনীতি প্রণয়ন করার সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মিয়া হলে গতকাল বুধবার ‘তামাক কোম্পানির বহুল প্রচারিত রাজস্ব মিথ এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই সুপারিশ করেন। যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ইপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ বিভাগের গবেষক ডা. মাহবুবুস সোবহান।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে মূলত দুইটি বিদেশি কোম্পানি দেশের তামাক ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই কোম্পানিগুলো তাদের বাণিজ্য প্রসারের জন্য আমাদের দেশকে বেছে নিয়েছে। তারা শুধু এদেশ থেকে লভাংশ্যই নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ দেশে যে রোগের ব্যয়, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি, তামাক চাষের কারণে অন্যান্য ক্ষতির দায় কোনোভাবেই তারা নেয় না। সুতরাং আমাদের তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর পণ্য কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারা বলেন, সরকার এবং তামাক কোম্পানির লক্ষ্য সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী। সরকার ২০৪০ সালে মধ্যেই দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং অন্যদিকে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছে। সরকারের উদ্দেশ্য সংবিধানের দায়বদ্ধতা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো। আর তামাক কোম্পানির লক্ষ্য মুনাফা অর্জন।
রাজস্ব নিয়ে তামাক কোম্পানির মিথ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অতি প্রচলিত একটি মিথ হলো তামাক কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি সরকারকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স দেয়। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের সিংহভাগ (২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা) আসে এই কোম্পানি থেকে। কিন্তু এই বিশাল অংকের রাজস্বের ৯৪ শতাংশেরও অধিক আসে জনগণের ভ্যাট থেকে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি দেয় মাত্র ৮১৬ কোটি টাকা। সুতরাং বহুদিন ধরে ভোক্তাদের দেয়া ভ্যাটকেও তামাক কোম্পানি তাদের দেয়া রাজস্ব বলে চালিয়ে আসছে। এছাড়া ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর তামাক খাত থেকে সরকারের উপার্জিত রাজস্বের বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ সরকারের ব্যয় হয় ৭ দশমিক ৫ হাজার কোটি টাকার অধিক।
তারা আরো বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে তামাকজাত পণ্যের মূল্য ও সুনির্দিষ্ট কর আরোপ হলে সরকার অতিরিক্ত ৯ হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। পণ্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপের বিধান বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ব্যাগেজ বিধিমালা- ২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাইরে থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য ব্যতিরেকে শুধু পরিমাণের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের বিধান রয়েছে। মোবাইল সিমের ক্ষেত্রেও এ বিধান বিদ্যমান।
সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত খুচরা মূল্যের আগে বা পরে সর্বোচ্চ/সর্বনিম্ন শব্দটি উল্লেখিত না থাকায় এবং খুচরা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের সুযোগ নিয়ে স্থানভেদে পণ্যের মোড়কে মুদ্রিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে। এই অতিরিক্ত মূল্যের উপর কোনো প্রকার কর ধার্য না হওয়ায় কারণে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর কাঠামো প্রণয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও শক্তিশালী জাতীয় করনীতি প্রণয়ন, তামাকের ওপরে নির্ভরশীলতা কমিয়ে কর আদায়ের অন্যান্য শক্তিশালী মাধ্যম খুঁজে বের করা, মূল্যস্তর এর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টি করা, খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, কর আদায় ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং সব ধরনের ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রেজিস্ট্রেশন ও করের আওতায় আসার সুপারিশ করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়