পুণ্যস্নানে শেষ হবে সুন্দরবনের রাসমেলা

আগের সংবাদ

মিলছে আইএমএফের ঋণ > বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো : রাহুল আনন্দ

পরের সংবাদ

নদী কমিশনের চেয়ারম্যান : কারো নাম ভাঙিয়ে কর্ণফুলী নদী দখল-দূষণ মেনে নেয়া হবে না

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে মেরিন একাডেমির কাছে কর্ণফুলী নদী তীরের বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নির্বিচারে ধ্বংস করে বেসরকারি ড্রাইডক নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং শাহ আমানত সেতুর কাছে নদীর জায়গাতেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বা ফিশারি ঘাট ও অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা দেখে চরম ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি এসব এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন নামে বেনামে সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে নদী দখল-দূষণ ও অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না জানিয়ে এসব দখলদারের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এসব অপরাধ কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না বলেও দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগড়ের মোহনার কাছে মেরিন একাডেমির পাশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অসংখ্য গাছ নির্বিচারে কেটে সেখানে কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড নামে একটি ইয়ার্ড তৈরির কর্মকাণ্ড দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। আনোয়ারা থেকে ভোরের কাগজের প্রতিনিধি শাহ সুমন জানিয়েছেন, এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কর্ণফুলী নদী দখল করে কোনো টার্মিনাল স্থাপন করার জন্য কখনো সরকার অনুমতি দেয়নি। কারো নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে নদী দখল করে গড়ে উঠা সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে ফেলা হবে খুব শিগগিরই। কোনো অপশক্তি এসব রক্ষা করতে পারবে না। এ সময় আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ্ আল মুমিন, মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেন ও কর্ণফুলী ড্রাইডক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিকালে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ মাছ বাজার ও বরফ কল পরিদর্শন শেষে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটা কর্ণফুলী নদী কিন্তু এখানে এখন মাছ বাজার এবং হাজারও অবৈধ স্থাপনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্য নদীর সঙ্গে কর্ণফুলীর তুলনা হবে না। অন্য নদী আর কর্ণফুলী এক নয়। কর্ণফুলী নদী দখল হয়ে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এই নদীর বায়োডাইভারসিটি যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে ভরাট করার যে বিষয়ে আপনারা যে কথা বলছেন তা আমরা মেনে নেব না। ড্রেজিং করা হয় নদী রক্ষা করতে। নদী ভরাট করতে নয়। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে মেরিন একাডেমির পাশে নির্মিতব্য কর্ণফুলী ড্রাইডকের ম্যানেজার মো. সোলায়মান নিয়াজী দাবি করেন, মেরিন একাডেমির জেটির পাশে বেজার প্রায় ২১ একর জমিতে গড়ে উঠা গাছগুলো কাটার জন্য কর্ণফুলী ড্রাইডকের অনুমতি রয়েছে। এছাড়াও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিসহ সব ধরনের কাগজপত্র তাদের রয়েছে।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকা পরিদর্শনে এসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষা কমিশন হচ্ছে নদীর অভিভাবক। নদী তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। নদী দখল করে যদি কেউ স্থাপনা, টার্মিনাল তৈরি করে বা নদী প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে নদী রক্ষা কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীর তীরে গড়ে উঠা গাছ কেউ কাটতে পারবে না। যদি কাটতে হয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
এদিকে গত শনিবার সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীর তীরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য নদীর প্রায় ২১ একর চরে ম্যানগ্রোভ বন কেটে উজাড় করে কর্ণফুলী ড্রাইডক। ম্যানগ্রোভ বন কাটার ফলে একদিকে হুমকির মুখে পড়ছে কর্ণফুলী নদী, অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বদলপুরা এলাকার ২১ একর জায়গা নেয়। কিন্তু এই জায়গা তাদের কাছে ছোট হওয়ায় তারা জায়গাটিতে জেটি নির্মাণ থেকে বিরত থাকে। এরপর কর্ণফুলী ড্রাইডক বেজার কাছ থেকে নিয়ে নির্বিচারে এসব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ কেটে কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরির কাজ শুরু করে। নির্বিচারে গাছ কেটে বন উজাড় ও নদী দখল করার ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়