নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

শিবগঞ্জে তিন দশক ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে : গরিবের জন্য রশিদ মাস্টারের পাঠশালা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতিক ইসলাম সিকো, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে : শিবগঞ্জে টানা ৩১ বছর বিনামূল্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন আবদুর রশিদ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় এইচএসসি পাস করেই থেমে যান শিক্ষাজীবনে। তবে ঝরে পড়া ও অসহায় শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দুটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেও ষড়যন্ত্রের কারণে বেশিদিন থাকতে পারেননি। অবশেষে নিজের বাড়িতে খোলা আকাশের নিচেই শুরু করেন পাঠদান। পরবর্তীতে দুটি টিনের ঘর তৈরি করেন। যার নাম দেয়া হয়েছে রশিদ মাস্টারের পাঠশালা। আবদুর রশিদ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর দাড়িপাড়ার ইদ্রিশ আলীর ছেলে। ৩১ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। তার পাঠশালায় এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার শিশু-বৃদ্ধ জ্ঞান অর্জন করেছেন। তারা এখন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাহাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে আবদুর রশিদ ভর্তি হন মনাকষা হুমায়ন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বাবা ও ভাই অসুস্থ থাকায় থেমে যায় পড়াশোনা। চার বছর পর ভর্তি হন আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজে। ১৯৭২ সালে পাস করেন এইচএসসি। নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন চাঁনতারা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতার পর ষড়যন্ত্র করে বাদ দেয়া হয় তাকে। সেখান থেকে মনোহরপুর এলাকায় চলে যান কৃষি কাজের সন্ধানে। পরে কৃষি কাজে মন না বসলে কিছুদিন পরে পাঁচজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে আবারো প্রতিষ্ঠা করেন মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে বিদ্যালয়টি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে এবং শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করেন। আবারো একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে তাকে বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করে। এরপর ভেঙে পড়েন আবদুর রশিদ। ছেলে শিক্ষকতা করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েন তার মা উমেতুন্নেছা। ১৯৯১ সালে মাকে সান্ত¡না দিতে নিজ বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে শুরু করেন শিক্ষকতা। খোলা আকাশের নিচে পাটি বিছিয়ে শুরু করেন শিক্ষকতা। প্রথমে ঝরে পড়া শিশুদের পড়ানো হতো। এরপর প্রাইভেটের মতো করে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। বয়স্করাও তার কাছ থেকে শিক্ষা নেন। বর্তমানে তার পাঠশালায় দেড়শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। রশিদের ছেলে হোসেন আলী স¤্রাট ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সবিন্দ্র নাথ দাসও মাঝে মধ্যে পাঠদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ওষুধের দোকানও চালান রশিদ।
আবদুর রশিদ মাস্টার জানান, প্রথমে বাড়ির পেছনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বাড়ির বাইরে টিন দিয়ে দুটি ঘর করে পড়ানো হচ্ছে। কখনো কারো থেকে টাকা নেননি। দোকানে ওষুধ বিক্রির আয়ে সংসার চলে। আট ছেলে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। পাঠদান করিয়ে আনন্দ পান তিনি। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সবিন্দ্র নাথ দাস বলেন, আবদুর রশিদ মাস্টার বিনা পারিশ্রমিকে ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। সমাজে এটি বিরল। শরীর সুস্থ থাকলে তাকে সাহায্য করতে স্কুলে গিয়ে শিশুদের পড়াই। তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিসা খাতুন জানায়, ‘স্কুলের শিক্ষকরা বাড়ির জন্য যে পড়া দেন, প্রতিদিন রশিদ স্যারের পাঠশালায় গিয়ে পড়ে আসি। সেখানে কোনো টাকা পয়সা লাগে না। পড়তেও ভালো লাগে। স্থানীয় এক কেজি স্কুলের শিক্ষক মোস্তাকিম বলেন, আশপাশের প্রাথমিক ও কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীরা রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে প্রাইভেট পড়তে পারে। ফলে দ্রুতই ওই এলাকায় বাড়ছে শিক্ষিতের হার। সাহাপাড়া বাজারের সৈয়ব আলী নামে এক দোকানি বলেন, আমার পরিবারে কেউ শিক্ষিত ছিল না। কেউ আমাকে পড়াশোনার জন্য বলেনি। নিজে স্বাক্ষরও করতে পারতাম না। দোকান দেয়ার পর হিসাবের জন্য লোক রাখতে হতো। পরে রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় গিয়ে রাতে পড়েছি। বেতন দিয়ে এখন আর লোক রাখতে হয় না। আবদুল খালেক নামে আরেক মুদি দোকানি বলেন, পড়াশোনা না জানায় দোকান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। গ্রাহকরা বাকি নিয়ে টাকা দিত না। নিজে লিখেও রাখতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে রশিদ মাস্টারের পাঠশালায় যাই। সেখানে বছরখানেক পড়ার পর এখন নিজেই সব হিসাব লিখতে পারি। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষ জানান, রশিদ একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এলাকার অসহায়, দুস্থ শিশু-কিশোর ও বয়স্করা তার বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়