সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

শাহরিয়ার কবির : রামনাথ বিশ্বাসের ভিটা আল বদরের দখলে, এটা লজ্জার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা আল বদর পরিবারের দখলে রয়েছে, যেটি লজ্জার বলে উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যকরী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে এটা খুবই লজ্জার, আল বদর পরিবারের দখলে রয়েছে রামনাথের বসতভিটা। এই বসতভিটার পুরো জায়গাটিই পুনরুদ্ধার করার আন্দোলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি পাশে থাকবে এবং যেখানে যা বলা লাগে, তাই বলবে। রামনাথের জায়গা পুনরুদ্ধার করতেই হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে রামনাথ বিশ্বাসের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত ‘ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস: বিশ্বজোড়া পাঠশালা তার শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন শাহরিয়ার কবির।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও লেখক মফিদুল হক, লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর।
রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বলের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ কায়েস, কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক রাজিব নূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- সাংবাদিক দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু ও ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রুমা মোদক।
শুরুতে রামনাথ বিশ্বাসকে নিয়ে নিজের লেখা গান গেয়ে শোনান বাউল বশিরউদ্দিন সরকার। একক বইমেলার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জলপড়ে ডট কম।
শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলা সাহিত্যে অনেক ভ্রমণ কাহিনী লেখককে আমরা চিনি, আমার নিজেরও বেশকিছু ভ্রমণবিষয়ক বই আছে। কিন্তু রামনাথ বিশ্বাস সেখানে আলাদা, সেটি হলো তিনি ছিলেন একেবারেই সাধারণ একজন
পর্যটক। যার কাছে ছিল না আড়ম্বরপূর্ণ উচ্চশিক্ষা, প্রয়োজনের চেয়ে খুব বেশি অর্থও ভ্রমণের সময় সঙ্গে নিতেন না তিনি। তার যেটি ছিল সেটি হচ্ছে অসম্ভব সাহস আর অসীম কৌতূহল।
তিনি বলেন, রামনাথ বিশ্বাসের ভ্রমণকাহিনী লেখার অসাধারণ হাতকে আমি আবিষ্কার করতে পারি ‘তরুণ তুর্কী’ বইটি পড়ে। ততদিনে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে কামাল আতাতুর্ক সেখানে বিপ্লব করে ফেলেছেন। রামনাথ বিশ্বাসের ওই ভ্রমণকাহিনী পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি যেন এক নতুন তুরস্ককে দেখছি।
মফিদুল হক বলেন, রামনাথ বিশ্বাসের বই যারা পাঠ করবেন, তারা কখনোই ভুলতে পারবেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলে পড়ার সময় ষাটের দশকে প্রথম রামনাথকে পড়েছিলাম। আর ভুলিনি। মৌলভীবাজারেও নীলা রায়ের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বানিয়াচংয়ে রামনাথের স্মৃতিও মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস যে মুছে ফেলা যায় না, সেটি রামনাথের ঘটনার মধ্য দিয়ে আবার স্পষ্ট হলো। মৌলভীবাজারে লীলা রায়ের বসতভিটা, বানিয়াচংয়ে রামনাথের বসতভিটা এবং মানিকগঞ্জে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের স্ত্রী প্রমীলার বাড়িও পুনরুদ্ধার করা হোক।
রামনাথকে উপনিবেশবাদ বিরোধী উল্লেখ করে মফিদুল হক বলেন, রামনাথ বিশ্ব ঘুরেছেন এবং চেয়েছিলেন কালো মানুষেরা যেন জেগে উঠে। আফ্রিকায় গিয়ে একেবারে মানুষের ভেতরে থেকে জীবন দেখেছেন। সেই দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই রামনাথ উপনিবেশবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন।
জালাল আহমেদ বলেন, বানিয়াচংকে কেন্দ্র করে পর্যটন পরিকল্পনা করার প্রতিশ্রæতি আছে সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। রামনাথের নামে সেখানে মিউজিয়াম করার উদ্যোগ নিতে পারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
আহসানুল কবীর বলেন, সর্বকালের সেরা বিশ্ব ভূপর্যটকদের নাম লিখলে রামনাথ বিশ্বাসের নাম আসবে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বাঙালি জাতি ঘরকুনো, তারা বিশ্ব দরবারে ভ্রমণ করতে জানে না, এ অপবাদ ঘুচিয়েছেন রামনাথ।
তিনি বলেন, পৃথিবী বিখ্যাত ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস, যিনি সাইকেলে ৫৩ হাজার, পায়ে হেঁটে সাত হাজার, রেলগাড়িতে দুই হাজার, জাহাজে ২৫ হাজার, মোট ৮৭ হাজার মাইল এবং এক লাখ ৪০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছিলেন। রামনাথকে পাঠ করতে হবে। তার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ভিনদেশি ইবনে বতুতাকে চিনি, স্বদেশী রামনাথকে জানি না, ভিনদেশি সিরাজউদ্দৌলার জন্য অশ্রæপাত করি, ভূমিপুত্র সমশের গাজীকে ডাকাত বলি, রবার্ট ব্রুসের অধ্যবসায় সম্পর্কে জানি, এই মাটির সন্তান ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্তের সংগ্রামমুখর সাধনার কথা বলি না, হাজী মুহম্মদ মহসীনের দানশীলতার কথা বলি, কিন্তু মহেশ ভট্টচার্য্যরে নামও উচ্চারণ করি না। এই দায় কার? রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থার?
আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে রামনাথ বিশ্বাসের বেদখল হওয়া বসতভিটার এক একর ১৬ শতাংশ ভূমি উদ্ধারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়ে এসেছে। রামনাথ ছিলেন অকৃতদার। তার স্বজনদের কেউ আর নেই। তিনি বাংলাদেশের গৌরব। তাই তার স্মৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার করে সেখানে ভ্রমণবিষয়ক বইয়ের বিশেষায়িত পাঠাগার, বাইসাইকেল জাদুঘর এবং অতিথিশালা নির্মাণের দাবি জানানোর পাশাপাশি ১৩ জানুয়ারি রামনাথের জন্মদিনকে ‘রামনাথ দিবস’ ঘোষণা করেছে ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কমিটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়