সাগর-রুনি হত্যা মামলা : তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল ৯৩ বার

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট তীব্র হওয়ায় শঙ্কা : ৩৮০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিতরণ ২৬০ কোটি ঘনফুট

পরের সংবাদ

চাকরিবিমুখ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা : বাবা হারালেও থেমে যাননি মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান ও আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী থেকে : রুয়েটে চান্স নিয়ে প্রকৌশলী হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণের আকাক্সক্ষা থাকলেও ভর্তি পরীক্ষাতেই অংশ নিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটিতে। অসুস্থ বাবাকে বাঁচাতে দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের কাছে ছোটাছুটি করতে করতেই হাতছাড়া হয় ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ। শেষ পর্যন্ত বাবাকেও বাঁচাতে পারেননি। বাবার মৃত্যুতে সাময়িক ভেঙে পড়লেও আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
চাকরিবিমুখ হয়ে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা তৈরির স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অবিচল। বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও প্রযুক্তির শিক্ষক তিনি। গল্পটা নওগাঁর মান্দা উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমানের। রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা আবু বকর ছিলেন মান্দার একটি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। ২০১৬ সালে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। বাবাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটির মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা দেন মোস্তাফিজ। কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন রাজশাহীতে। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেও বাবা অসুস্থ থাকায় নিয়মিত ক্লাস না করেই বসতে হয় এইচএসসি পরীক্ষায়। উচ্চ মাধ্যমিকেও উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। রাজশাহী ও ঢাকার বেশ কয়েকজন চিকিৎসক অপারগতা প্রকাশ করায় বাবাকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ফিরিয়ে আনতে হয় সেখান থেকেও। একমাত্র ছেলে হিসেবে সার্বক্ষণিক বাবার পাশে থাকায় প্রস্তুতি নিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। অংশ নিতে পারেননি স্বপ্নের রুয়েট ভর্তি পরীক্ষায়। সবশেষ রাজশাহীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মোস্তাফিজ। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তার বাবা। বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদের মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ভেঙে পড়েন একমাত্র সন্তান। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ান। মনোবল শক্ত করে ফিরে আসেন রাজশাহীতে। আইটি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রথমে শুরু করেন ইউটিউবে যাত্রা। এরপর ভার্চুয়াল ক্লাসে প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করছেন তরুণদের। মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, এ বছরের ২০ মে ওয়েব এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট কোর্সের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
কোর্সটি গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। এ কোর্সে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থারত বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি ক্লাস করে প্রযুক্তি বিষয়ে শিখেছেন।
তিনি জানান, ইউটিউব ও ফেসবুকে তার আপলোড করা ভিডিওর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী শিখছেন ইউটিউব থেকে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়েছে, বাংলাদেশও ডিজিটাল হচ্ছে। সেজন্য তরুণদের প্রযুক্তির ওপর দক্ষতা না থাকলে চাকরির বাজারে হতাশ হয়ে ফিরতে হবে। তাই নিজে আইটি উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি আমার শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের মাঝেও উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে চাই।’ আইটি প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়