পাইলিংয়ের সময় শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

প্রাথমিক শিক্ষায় তুঘলকি কাণ্ড : পাশাপাশি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একটি করা হচ্ছে > শিক্ষক প্রশিক্ষণ ৬ মাস

পরের সংবাদ

কোহ চাং : এক অজানা দ্বীপের সৌন্দর্য্য…

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক শহরের নাইট লাইফ, স্ট্রিট ফুড, সমুদ্র সৈকত, নয়নাভিরাম পাহাড়ের সৌন্দর্য, গাছ-গাছালিসহ প্রাণী জগত – সাশ্রয়ী খরচে বেড়াতে সেরা গন্তব্য থাইল্যান্ড। যারা ঘন ঘন থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন, তারা জানেন যে পাতায়া, ফুকেট এবং ক্রাবি বা কোহ সামুই দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। এর পেছনের কারণ হলো দক্ষিণ এশিয়ার এজেন্সিগুলো এসব এলাকায় তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে, কোহ চাং বা পূর্ব থাইল্যান্ড বাংলাদেশি বা ভারতীয়দের জন্য জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য নয়। বাদামী চামড়ার পর্যটকদের সাথে এই এলাকার মানুষও পরিচিত নয়!
মাজেদুল নয়ন

জুন জুলাই মাসে থাইল্যান্ডে ভেজা মৌসুম, অর্থাৎ বর্ষাকাল। তবে পূর্ব থাইল্যান্ডে বৃষ্টি আমার কল্পনার বাইরে ছিল। কোনো কোনো সময়ে এখানে সারাদিন রাত বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির বাইরে দিনের সময়টুকু রৌদ্রজ্জ্বল, পরিষ্কার আকাশ থাকে তবে। তাপমাত্রাও গরম থাকে।
এবার থাইল্যান্ড আমার কাছে নতুন এক পরিচয়। আমার ছেলের জন্ম এখানকার দক্ষিণ-পূর্বের ছোট শহর ট্রাটে। কার্ডামম পর্বত ঘেষে কম্বোডিয়া সীমান্তে থাইল্যান্ডের প্রদেশ ট্রাট। পশ্চিমে নীল পানির শান্ত সাগর গালফ অব থাইল্যান্ড। উপসাগরের উপকূল ট্রাট। প্রদেশটিতে সাদা-বালির সৈকত, কাল বালির সৈকত এবং প্রবাল প্রাচীরসহ অসংখ্য দ্বীপ রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপ মু-কো চাং। এখানে রয়েছে একটি জাতীয় উদ্যানও। ঘন জঙ্গল, জলপ্রপাত এবং উপকূলবর্তী প্রবাল প্রাচীরের জন্য পরিচিত কোহ চায়। এখানে রয়েছে দর্শনীয় ব্যাং বাও গ্রাম।
এটি একটি সবুজ শহর যেখানে জনসংখ্যা এবং ব্যস্ততা উভয়ই কম। মানুষ সাধারণত সন্ধ্যাতেই ঘুমাতে যায় এবং ভোরে ঘুম ভাঙ্গে। আমাদের ছেলে সন্তান, পেন এর জন্মের পর থেকে পুরোটা সময় সে দখল করে রেখেছিল। যখন তার বয়স মাত্র ১৬ দিন, আমার স্ত্রী কানলায়াউই ওয়ায়েক্লেহং (পে) এবং আমি কোহ চাং ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। হাতির শুঁড়ের আকৃতির কারণে কোহ চাং দ্বীপটি, ‘হাতিদের দ্বীপ’ নামেও পরিচিত।
কোহ চাংয়ের উদ্দেশ্যে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া ছিল উপভোগ্য। আমাদের গাড়ি উচুঁ-নিচু রাস্তায়, সবুজের মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছে। ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমরা আও থামমাচাট ফেরি স্টেশনে পৌছে গেলাম। সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিন না থাকায় ফেরিতে ভিড় ছিল না। এই ফেরিটি কোহ চাং পৌছাতে মাত্র ২০ মিনিটের কাছাকাছি সময় নেয়। দিনটি রৌদ্রোজ্জ্বল এবং সমুদ্র শান্ত থাকায় আমরা আমাদের ভাগ্য উপভোগ করেছি। ফেরি নীল ঢেউ ভেদ করে সমুদ্রের ফেনা তুলে দ্বীপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, কোহ চাং দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ দিক একটি হাতির শুড়ের মতো।
আমরা যখন কোহ চাং ফেরি স্টেশনে পৌছালাম, তখন বিকেল ৪টার কাছাকাছি। গাড়ি ফেরি ছেড়ে পাহাড়ের ওপরে উঠছে। দ্বীপটিতে পাহাড় ঢালু হয়ে মিশেছে সমুদ্র সৈকতে। দ্বীপে কয়েকটি সৈকত রয়েছে, হোয়াইট স্যান্ড বিচ, লোনলি বিচ, পার্ল সৈকত, নারকে সৈকত, ক্লাং প্রাও বিচ, ওয়াই চেক বিচ, লং বিচ। এছাড়াও চমৎকার একটি জাতীয় উদ্যান।
আমাদের রিসোর্ট হোয়াইট স্যান্ড সৈকতের পাড়ে ম্যাক। জাতীয় উদ্যানের আকাঁবাকা পাহাড়ী পথ ধরে আমরা পৌছালাম রিসোর্টে। সাপের লেজের মতো পাহাড়ি পথে একটু ভুল করলেও ঘটতে পারে বড় বিপদ। বিশেষ করে জাতীয় উদ্যান এলাকায়, কিছু বাঁক ধারালো ভি এর মতো। কোহ চাংয়ে তখন অফ সিজন, রাস্তাগুলি বেশ ফাঁকা, দোকান এবং বার টেন্ডাররা পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছে।
দীর্ঘ কোভিডকালীন সময়ে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন মনে হচ্ছে ব্যবসাগুলি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। এখন ধীরে ধীরে পর্যটকরা ফিরে আসছে এবং নতুন দোকানও খুলছে।
হোয়াইট স্যান্ডস সৈকত খুব সুন্দর এবং পর্যটকে ব্যস্ত। এই দ্বীপে প্রতিটি রিসোর্টের নিজস্ব সৈকত রয়েছে এবং তারা বিকেল থেকে সৈকতে চেয়ার, ঝুলন্ত বিছানা এবং বার পরিষেবা সরবরাহ করে। হোয়াইট স্যান্ডে একটি বাস্তব, শান্ত, শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়।
রিসোর্টে চেক-ইন করার পর আমরা সমুদ্র সৈকতের রেস্টুরেন্টে গেলাম। নারকেলের দুধ ও মুরগীর মাংস দিয়ে বানানো টম ইয়াম চিকেন, ভাত এবং মাছের অর্ডার দিলাম। সত্যি বলতে কি, আমরা বেশিক্ষন সমুদ্র আর নীল জল দেখতে পারিনি। পেনের জন্য ঠান্ডা বাতাশ ভাল হবে না। কয়েক দিন বয়সী শিশুর ডায়াপারও পরিবর্তনের সময়ও হয়ে গিয়েছে। তবে ছোট পেনকে আমরা সমুদ্রের কথা বলেছি, তার প্রথম সমুদ্রের ভ্রমণও আমরা চাইছিলাম উত্তেজিত করে তুলতে।
পশ্চিমে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে সুর বাজছিল। সমুদ্র সৈকতে অন্ধকার নেমে এলে হোটেলের কর্মীরা মশাল জ্বালিয়ে দেন। অন্ধকার সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন নীরবতাকে যেন ভেঙ্গে দিচ্ছিল।
সৈকতে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় ফায়ার প্লে। ফায়ার ড্যান্সাররা আগুন দিয়ে তাদের পারফরম্যান্স দেখায়। গালফ অব থাইল্যান্ডের পাড়ে আগুনের ফোয়ারা যেন ছিটকে উঠে। কিশোর ছেলেরা তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছিল আগুনের আর সমুদ্রের অন্ধকারে যেন এক বিভ্রম তৈরী হচ্ছিল।
কোহ চাং বা পূর্ব থাইল্যান্ড বাংলাদেশি বা ভারতীয়দের জন্য জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য নয়। বাদামী চামড়ার পর্যটকদের সাথে এলাকার মানুষও পরিচিত নয়। তবে থাইল্যান্ডের পূর্বে এই অঞ্চলটিও চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, পাহায়, সমুদ্র, বন, ঝর্ণা সবকিছুই রয়েছে এখানে।
শেষবার যখন আমি এই দ্বীপে গিয়েছিলাম, আমরাও জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে খলং ফ্লু জলপ্রপাতে হেঁটে গিয়েছিলাম। হ্রদের ওপর থেকে ঝরনার আঁছড়ে পড়া শান্ত জল একটি প্রশান্তি দেয়। রঙিন মাছ জলের নীচে সাঁতার কাটে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, মাছগুলো তাদের ছোট মুুখ দিয়ে আমাদের পায়ের কাছে এসে যেন খাবার খাচ্ছিল। এটি মাছ দিয়ে প্রাকৃতিক ম্যাসাজ করানোর মতো অনুভূতি। এই জাতীয় উদ্যানের ট্রেইলও মজার। জঙ্গলের ভিতরে হাইকিং করার সময় আমরা খুব সতর্ক ছিলাম। এই দ্বীপে হাতির সাফারি রয়েছে। মানুষ হাতির পিঠে চড়তে পারে, খাওয়াতে পারে, খেলতে পারে এবং গোসল করতে পারে। হাতির শাবকগুলো উৎসাহ নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে খেলায় মাতে। কায়াকিং, ম্যানগ্রোভ বনে বোটিং, স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিং করার ব্যবস্থা রয়েছে এই দ্বীপে। এছাড়াও কোহ চাং থেকে দুটি প্রতিবেশি দ্বীপ কোহ মাক এবং কোহ কুদে ভ্রমণ করা যায়।
যেভাবে যাবেন: থাইল্যান্ডে এখন ট্যুরিস্ট ভিসা আরো সহজ করা হয়েছে। থাইল্যান্ড ভ্রমনে কোন কোভিড সার্টিফিকেট বা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হয় না।
বিমান: বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ইউএসবাংলা, থাই এয়ারলাইন্স সরাসরি ঢাকা-ব্যাংকক রুটে যাতায়াত করছে। খুব শীঘ্রই চালু হবে এয়ার এশিয়া। বর্তমানে যাওয়া আসা মিলিয়ে ভাড়া পড়ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
লোকাল ট্রান্সপোর্ট: ব্যাংকক থেকে লোকাল ফøাইট বা বাস অথবা ভ্যানে যাওয়া যায় কোহ চাংয়ে। সেক্ষেত্রে সময় ও পরিবহন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারন হয়।
থাকার জায়গা: ২ জন মানুষ জনপ্রতি ১ বা ২ হাজার টাকায় কোহ চাংয়ে একটি রিসোর্টে থাকতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়