জেলেনস্কির অভিযোগ : পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য রুশ সমাজকে প্রস্তুত করা হচ্ছে

আগের সংবাদ

লোডশেডিং দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা : দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না, গ্যাসের স্বল্পতা ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন ব্যাহত

পরের সংবাদ

বদলে যাওয়া টাইগ্রেসদের গল্প

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০১৮ সালের ১০ জুন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিনারা একাডেমি ওভাল। নারীদের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালের মহারণ। নারী ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। বিস্ময়করভাবে সে ম্যাচে ভারতকে হটিয়ে দেয় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা, যা ছিল ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা। সেই থেকে সারাবিশ্বের ক্রিকেট দুনিয়ায় অন্যতম এক পরাশক্তি হিসেবে হাজির হয় বাংলাদেশ। এ যেন এক বদলে যাওয়া টাইগ্রেস। ঠিক যেন পৌরাণিক রূপকথার ফিনিক্স পাখি। তখনকার সেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি জ্যোতি-সালমা-ফারজানারা। পরের নামগুলো লিখতে গেলে একটা মহাকাব্য লেখা হয়ে যাবে। মহাকাব্যকে একটা গণ্ডির মধ্যে আটকানোর সাধ্য ক্ষুদ্র মানুষের নেই। এই দলটাই আমাদের ক্রিকেটে একটা মহাকাব্যিক অধ্যায়। শামীমা সুলতানা, শারমিন সুপ্তা, রুমানা আহমেদ, লতা মন্ডল, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন- একেকটা জ্বলজ্বলে তারা। এদের মাঝে নবদিগন্তের আলো নিয়ে হাজির মুর্শিদা খাতুন, নাহিদা আকতার, ফারিহা তৃষ্ণা, সানজিদা আকতার মেঘলারা।
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর- বাঙালির জাতীয় জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের এ উক্তি মেনে চলা হয়নি। আদিকাল থেকেই নারী শব্দটা পৃথিবীতে অবহেলিত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই ধারাটা বদলে গিয়ে স্বপ্নের পেছনে ছুটছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্নচারিনীদের দল। যে ধারাটা এদেশের বুকে অগ্নিকনার ন্যায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। যে ধারাটা প্রত্যেক নারীর অন্তরে গেঁথে দিয়েছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। সেই ধারাটা ধরে আজ এই বঙ্গদেশে আলোর মশাল হাতে ছুটে চলেছেন আমাদের জাহানারা-সালমা-জ্যোতিরা। তা সত্ত্বেও নারী ক্রিকেট বঞ্চিত। খেলোয়াড়রা পান না তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও। ছেলেদের ক্রিকেটের প্রতি এদেশের মানুষের যতটা আগ্রহ, তার ছিটেফোঁটাও নেই মেয়েদের ক্রিকেটে। এমনকি বেতন, সুযোগ-সুবিধা, সম্মান সবকিছুতেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে। কয়েক দিন আগে খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্বীকার করেছেন নারী ক্রিকেটকে অবহেলার কথা। দীর্ঘদিন ধরে নারী দল ভালো খেললেও সেভাবে তাতে মনোযোগ দিতে না পারার আপেক্ষ তার।
২০১৮ সালে এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের পর সেই সময়ের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। সেবার ঘোষণা করা হয়েছিল নারীদের জন্য একটি জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি করার। এরপর বোর্ড নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়িয়েছে, তবুও একটি শক্তিশালী পাইপলাইন নিশ্চিত করার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো ‘এ’ দল তৈরি করা হয়নি।
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অর্জনের পাল্লাটা নেহাত কম ভারি নয়। সম্প্রতি নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে আয়ারল্যান্ডকে ১২১ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় খেলতে নেমে বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয় আইরিশ ব্যাটাররা। এর মধ্যে এ প্রতিযোগিতায় তিনবারের চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এছাড়া মূল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ, এশিয়ান গেমসে দুইবার রৌপ্যপদক, অতঃপর এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। এর মাঝে নারীদের আইপিএল, বিগব্যাশের মতো টুর্নামেন্টেও জাহানারা-রুমানাদের অংশগ্রহণ। কি নেই নারীদের অর্জনের ভাণ্ডারে? এ যেন সর্বজয়ী জয়িতাদের দল।
ঘরের মাঠে চলছে এশিয়া কাপের আসর। এবার আরেকটি এশিয়া কাপ জয়ের হাতছানি টাইগার মেয়েদের সামনে। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। থাই মেয়েদের দেয়া ৮২ রান তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেট এবং ৫০ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ছন্দপতন হয় সালমা খাতুনদের। এ ম্যাচে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের কাছে ৯ উইকেটের হার দেখে। তবে তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় জ্যোতি বাহিনী। এ ম্যাচে মালয়েশিয়াকে ৮৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
দলগত সাফল্যের পাশাপাশি আছে ব্যক্তিগত সাফল্যও। আইসিসির নারী বিভাগের ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ এর সেরা তিন ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পান বাংলাদেশি অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। নিগারের নেতৃত্বে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ নারী দল। অধিনায়কত্বের সঙ্গে ব্যাট হাতেও নিগার টেনেছেন দলকে। হয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। নকআউট পর্বে ব্যাট হাতে জ্বলে না উঠলেও তিনি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে পাঁচ ম্যাচে ১৮০ রান করেছেন, ৪৫ গড় এবং ১০৫.২৬ স্ট্রাইক রেটে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৭ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে দারুণ জয় এনে দেন তিনি।
এবারের এশিয়া কাপে আরেক কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার ফারিহা তৃষ্ণা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার উপলক্ষটা দারুণভাবে রাঙান তিনি। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ফারিহা।
– মোহাম্মদ আল মুকিত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়