হাজারীবাগের বিস্ফোরণ : পা হারানো দিলীপসহ শঙ্কাজনক অবস্থায় ২

আগের সংবাদ

পাঁচ কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু!

পরের সংবাদ

নন্দীগ্রামের আব্দুর রশিদ : এরশাদ আমলের দাপুটে নেতা এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময়ের দাপুটে জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুর রশিদ এখন নিঃস্ব। জমিজমা, বাড়িঘর, স্ত্রী-সন্তান সবই ছিল এক সময়। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করেছিলেন। তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবেও ব্যাপক সুনাম ছিল তার। কিন্তু বিধিবাম! সব হারিয়ে ৮৮ বছর বয়সি আব্দুর রশিদের ঠাঁই হয় বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনীতে। এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানেই থাকতেন।
আব্দুর রশিদের খোঁজ নিতে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুন্দারহাটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত। যাত্রী ছাউনী থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে। কোমরের হাড় ভাঙা, মানসিক সমস্যা, পানিশূন্যতা ও চর্মরোগ আছে। চলনশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণে যাত্রী ছাউনির ভেতরেই তিনি মলমূত্র ত্যাগ করতেন। সেই দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কোনো যাত্রী বসেন না, তার খোঁজ নিতেও তেমন কেউ যায় না আশপাশে। একসময়ের জাপার দাপুটে সেই নেতার খোঁজ রাখেনি কেউ। তবে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম দয়া বলেন, গত করোনার সময় লকডাউন চলাকালে বিষয়টি তার নজরে আসা মাত্রই খোঁজখবর নিয়েছেন। সেসময় থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় আব্দুর রশিদকে বাসস্থান ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তিনি রাজি ছিলেন না। তাকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঘর বরাদ্দ দেয়ার বিষয়েও দুইমাস আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলেছি। গত কয়েকদিন আগেও ভাটগ্রামের ইউপি সদস্যকে বলেছি, জাতীয় পার্টি তাকে সহযোগিতা করবে। বাসস্থান এবং মুদি দোকান করে দিতে চেয়েছি। বিষয়টি জেলা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। জানা গেছে, আব্দুর রশিদ ভাটগ্রামের বাসিন্দা। সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে সত্তরের দশকে ডিগ্রি ও বিএড সম্পন্ন করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে নিজ উপজেলার বিজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ও কুন্দারহাট ইনছান আলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তার সুখের সংসারে ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মেয়েকে বিয়ে দেন। কিছুদিন পর স্ত্রীও মারা যান। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বগুড়া শহরে।
তার ছোট ভাই আব্দুল জলিল জানান, তাদের দুই ভাইয়ের নামে জায়গা জমি ছিল প্রায় ১৪ বিঘা। রাজনীতি করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ বেশির ভাগ জমিই বিক্রি করে দেন। এরই মধ্যে ছেলে ও স্ত্রী মারা গেলে তার সবচেয়ে মূল্যবান দেড় বিঘা জমি লিখে দেন বড় বোনকে। তার আশা ছিল, বোন বা তার ছেলেমেয়ে তাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখবে, কিন্তু সেই বোনও মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং অবশিষ্ট জমি স্ত্রী, মেয়ে ও শাশুড়িকে লিখে দেন। দুই বছর আগে বাড়ির জায়গাসহ সেই জমি তারা বিক্রি করে দেন। এরপর করোনার সময় বৃদ্ধ মানুষটিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় দ্বিতীয় স্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত বলেন, পরিবারের প্রথম দায়িত্ব ছিল তার পাশে থাকা। তারা যেহেতু তা করেননি, তার চিকিৎসা, আবাসনসহ মানবিক সব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়