হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

ছাত্রীদের খেলতে না দেয়ায় চুল কেটে প্রতিবাদ শিক্ষিকার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : অক্লান্ত পরিশ্রম করে কাবাডি টিম গঠন করে খেলার জন্য স্কুলের ছাত্রীদের তৈরি করেছিলেন সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। কিন্তু ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলায় কাবাডি টিমের ছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন করেন ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষিকা। এমনকি তিনি ছাত্রীদের কাবাডি ম্যাচেও অংশ নিতে দেননি। প্রধান শিক্ষিকার এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নিজের মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। চাকরি থেকেও অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি। নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন ফিরিঙ্গি বাজারস্থ ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
ওই বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক জাহিদা পারভীন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানানোর পর ভাইরাল হয়ে যায়। সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করেন জাহিদা। এ নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। স্টাটাসে তিনি লেখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?’
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানতে শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। তারা ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহ করেন।
জাহিদা পারভীন জানান, থানা পর্যায়ের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রীর একটি কাবাডি দল গঠন করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর ম্যাচ ছিল। কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী চুলে ক্লিপ লাগানো যায় না। চুল চোখের সামনে চলে আসায় মেয়েদের খেলতে অসুবিধা হয়। এ কারণে তারা ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণি করে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের একদিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তুলে কো-অর্ডিনেটরের কাছে জমা দিতে হয়। ছাত্রীদের মাঠে নামানোর আগের দিন (৭ সেপ্টেম্বর) স্কুলে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলি। তারা বেণি করে জার্সি পরে তৈরি হয়। এর মধ্যে আমি টয়লেটে যাই। সেখান থেকেই আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাই। টয়লেট থেকে বের হয়ে শুনি, প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের বকাঝকা করেছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেছেন। তখন দুই মেয়েকে কান্না করতে দেখি। প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমি ছাত্রীদের বেণি করতে বলেছি। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে ছাত্রীদের সান্ত¡না দেই। প্রধান শিক্ষিকার কারণে খেলার দিন আমরা নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে পৌঁছাতে পারিনি। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের দেরি করিয়ে দেন। এ কারণে ম্যাচে অংশ নিতে পারিনি। এতে প্রতিপক্ষ ওয়াকওভার পেয়ে যায়।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাবাডি দলের খেলোয়াড় মো. জাহাঙ্গীর আলমও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী ও কোতোয়ালি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর তার ফেসবুক পোস্টে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ধিক্কার জানাই খেলাধুলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে। এদের কারণেই স্কুল পর্যায়ে খেলাধুলার অয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়