কাগজ প্রতিবেদক : সরকারি হিসেবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার যেভাবেই দেয়া হোক না কেন প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝরে পড়ে। ১২ বছর শিক্ষা জীবনে টিকে থাকা শিক্ষার্থীর হার ২৫ শতাংশের বেশি হবে না বলে দাবি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মালালা ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের (পপি) নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম সরকার।
তিনি জানান, হাওর, চরাঞ্চল ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকার শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার নারী ও শিশুরা।
এসব অঞ্চলে জানুয়ারি থেকে দুই মাস ধান চাষ ও কাটার সময় থাকায় জীবিকা নির্বাহে শিক্ষার্থীরা মাঠে কর্মরত থাকে। ফলে শিক্ষাবর্ষের বিশাল একটি সময় তাদের নষ্ট হয়। শিক্ষাবর্ষের সময় পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন সময় অবহিত করা হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ জানান, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির হার ৬০ শতাংশ, দশম শ্রেণি পর্যন্ত তা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আসতে পারে ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আবার এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা উত্তীর্ণ হয়ে ফেরেন তাদের শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে সংশয়। ২০১৫ সালে ২০৩০ সাল পর্যন্ত শিক্ষার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্ধেক সময় চলে গেলেও অর্জন কাক্সিক্ষত লক্ষমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে। করোনার দুই বছরে এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা আরো পিছিয়ে পড়েছি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক পরিকল্পনা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবার শিক্ষার সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছি। তবে বর্তমানে সংস্কার নয়, রূপান্তর প্রয়োজন।
শিক্ষায় প্রথম বাধা অর্থায়ন, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব নয়।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা এই তিন ভাগে বিভক্তি করণকে শিক্ষার মানোন্নয়নের অন্যতম আরেকটি বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
মূল বক্তব্যে মালালা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ইনচার্জ মোশাররফ তানসেন বলেন, বাংলাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকে ভর্তির হার ৫১ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ। তবে ঝরে পড়ার হারও ৪২ শতাংশ। ভর্তির দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে।
তবে ঝরে পড়ার হারও বেশি। এ সময় নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে মালালা ফাউন্ডেশন থেকে চারটি দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- মেয়েদের মতামতের মূল্যায়ন, ন্যায্যতাভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক বৈশ্বিক কর্মপন্থা তৈরি করা, নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং আফগানিস্তানের নারীদের জন্য অবস্থান নেয়া।