করোনা পরিস্থিতি : সংক্রমণের হার ১১.৬০ শতাংশ

আগের সংবাদ

খোলা ছাদে খুশির নিনাদ : মেয়েদের ঘিরে শোভাযাত্রায় লাখো মানুষ

পরের সংবাদ

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী ফেনী থেকে : হারিয়ে যাচ্ছে ফেনীর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এক সময় জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ আঁধারমানিক গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পরিবার প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় আঁধারমানিক গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাল বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ পরিবার অনেক কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছে। তবে পুরুষরা অনেকে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই পুরুষ ও মহিলা শিল্পীরা হাতের ছোঁয়ায় সুনিপুণভাবে মাটি দিয়ে চাক ও অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে যাবতীয় মৃৎশিল্প তৈরি করেন।
সরজমিন দেখা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর আঁধারমানিক গ্রামের মৃত চিত্ত রঞ্জন পালের ছেলে দুলাল পাল বাড়িতে মেশিনের সাহায্যে কারুকার্যখচিত সুনিপুণভাবে মৃৎশিল্প তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দুলাল পাল বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া এই পেশা তিনি ধরে রেখেছেন। মৃৎশিল্প তৈরির মূল উপকরণ হলো মাটি। একসময় বিনা পয়সায় মাটি পাওয়া গেলেও বর্তমানে টাকার বিনিময়েও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না, আবার যা পাওয়া যাচ্ছে তা অধিক মূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে। প্রতি ট্রাক মাটি ক্রয় করতে তার খরচ পড়ে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এরপর মাটিকে বালু ও পানির সঙ্গে মিশ্রিত করে ওই মাটি দিয়ে প্রতিদিন মেশিনের সাহায্যে মাটির ফিল্টার, কলস, হাঁড়ি, পাতিল, ব্যাংক, বিভিন্ন পিঠা তৈরির চাঁচ, পুতুল, বদনা, দইয়ের পাত্র, প্রদীপ, ফুলের টপ, পাখির বাসা, ভাপা পিঠার বাটি, বাসন, কয়েলের বাটিসহ ২৫ থেকে ৩০টি পণ্য তৈরি করেন। প্রতিটি মাটির ফিল্টার ও কলস তৈরি করতে তার ৭ কেজি মাটি লাগে। এরপর তা সপ্তাহখানেক রোদে শুকিয়ে জ¦লন চুল্লিতে দিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আগুনে পোড়ানো হয়। সেখান থেকে তৈরি করা পণ্যগুলো চুন চুর্কি দিয়ে লালচে করে পাইকারি দামে বিক্রি করেন।
তিনি আরো বলেন, সব কিছুর দাম যে অনুপাতে বেড়েছে সে অনুপাতে মাটির তৈরি সামগ্রীর দাম বাড়েনি। পূর্বপুরুষের এই পেশা বাঁচিয়ে রাখতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে তার। বর্তমানে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী।
এসব সামগ্রীর দাম অনেক বেশি হলেও অধিক টেকসই হওয়ায় মানুষ মাটির তৈজসপত্র না কিনে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী ক্রয়ের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু মাটির তৈরি জিনিসপত্র সে রকম দামে বিক্রি করতে পারছেন না। মাটির এসব পাত্রের চাহিদাও আগের মতো নেই। দুলাল পাল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, বেসরকারিভাবে সহযোগিতা ও একটি পানির টিউবওয়েল পেলে হারিয়ে যাওয়া মৃৎশিল্পের অতীত ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে এমনটি আশা করছেন তিনি।
ক্রেতা মাসুম বিল্লাহ বলেন, একসময় উত্তর ও দক্ষিণ আঁধারমানিক গ্রামের শতাধিক পরিবার সুনিপুণভাবে হাত দিয়ে মাটির তৈরি মৃৎশিল্পের কাজ করতেন। কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ফলে মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগররা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আজ অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। সোনাগাজীর চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয় লাল দাস বলেন, এ অঞ্চলের মৃৎশিল্প পণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হতো। এখন চাহিদা কমার সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কামার-কুমারের হাতে তৈরি নান্দনিক এই শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অনেকে ভিন্ন পেশায় চলে গেলেও বেশিরভাগ কারিগর বেকার জীবন পার করছেন। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে আবারো চালু হতে পারে এখানকার মৃৎশিল্প তৈরির সেই কর্মযজ্ঞ।
সোনাগাজী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াতুল হক বিটু বলেন, চাহিদা কমার সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে জেলার সোনাগাজী উপজেলার বহদ্দারহাট, দাসেরহাট ও কুঠিরহাট এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তিনি আরো বলেন, এ শিল্পের কেউ উদ্যোগ নিলে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, এখানকার তৈরি মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া মৃৎশিল্পের অতীত ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আনতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়