স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল : হামলায় ‘অতি উৎসাহী’ কোন কর্মী জড়িত থাকলেই ব্যবস্থা

আগের সংবাদ

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে

পরের সংবাদ

অবৈধভাবে বালুু উত্তোলন বন্ধ, উলিপুরবাসীর স্বস্তি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমান। গত শনিবার তিনি হাতিয়া ইউনিয়নের পালেরঘাট ও হাতিয়ার নয়া ডারা গ্রামে স্বপ্নসিঁড়ি নামে দুটি অবৈধ বালু মহাল সরজমিন পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশ দেন। তিনি বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত বালু উত্তোলন ছাড়া অবৈধ পন্থায় এক মুঠো বালু অন্য কোথাও যাবে না । তাছাড়া এটা কোনো স্বীকৃত বালুমহাল নয়। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের ঘোষণাকে এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। সদ্য জেগে ওঠা চরের মানুষরাও এ সিদ্ধান্তে আনন্দিত।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদরের পূর্বদিকে হাতিয়া ইউনিয়নের অবস্থান। বিগত তিন দশকের ব্যবধানে ইউনিয়নটির সিংহভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজারটি ব্রহ্মপুত্র নদের একদম কিনারে রয়েছে ।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এলাকাটির নামি-দামি-বিত্তশালী, মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত অসংখ্য মানুষ ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙনে বসতভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এভাবেই হাতিয়া ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে স্বাধীনতা পরবর্তীকালের প্রত্যেকটি সরকার আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ ভাঙন থেকে এলাকাটি রক্ষায় নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান। কিন্তু এলাকাবাসীর দুর্ভাগ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সীমাহীন দুর্নীতি, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঠিকাদারদের প্রাক্কলন অনুযায়ী সঠিক সময়ে ঠিকভাবে কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি ও স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙন বন্ধের পরিবর্তে ভাঙন আরো ত্বরান্বিত হয়। আর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও বসতভিটা, নিঃস্ব হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। করালগ্রাসী নদীর ভয়াবহ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারিতে নদী পারের বাতাস এক সময় ভারি হয়ে উঠত।
এরকম করুণ পরিস্থিতির মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের মতো বেআইনি কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাব খাটাতেন বলে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রæতি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অবৈধ ব্যবসায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য বালুর প্রয়োজন উল্লেখ করে তারা নির্বিঘেœ একাধিক ভলগেট ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু তুলে শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করে আসছিল। অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তাদের অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সা¤প্রতিক সময়ে জেগে ওঠা রামখানা ও নীলকণ্ঠ চরের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে ওই চরের মানুষ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বালু উত্তোলনে বাধা দিলে সিন্ডিকেটের লোকজন তাদের নানাভাবে হুমকি- ধামকি দিত। একপর্যায়ে তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করেন। এরই প্রেক্ষিতে স¤প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) উলিপুর কাজী মাহমুদুর রহমান সরজমিন তদন্ত শেষে হাতিয়ার পালের ঘাট, অনন্তপুর বাজার ব্রিজ পয়েন্ট ও নয়াডারা স্বপ্নসিঁড়ি পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে নদীর পাড়ের মানুষ আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়