২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকা : টানা বৃষ্টিতে বাড়ি ও হাটবাজারে পানি, লাখো মানুষের ভোগান্তি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও হাটবাজারে পানি ঢুকে লাখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে বসতবাড়ি হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে ও রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধের ভেতরের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ী বন্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকার মানুষ। সরকারি নিয়ম কানুন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে ক্যানেল ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, ভবন ও বাড়ি ঘর নির্মাণ এ জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোনো কাজে আসছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, বিজয় নগর, বলাইখা, উত্তরপাড়া, মিয়াবাড়ি, নামাপাড়া, দক্ষিণপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশকয়েকটি নিচু এলাকায় প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩শ হেক্টর জমি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১শ এক কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভিতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগও।
দুই দিনের বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্পের এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পানি জমেছে। পুরো বর্ষা ও টানা বর্ষণ শুরু হলে কি হবে, এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রণীর ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠে অগ্রণী পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে অগ্রণী এলাকার মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে জলাবদ্ধতাও। বর্তমানে সেচ প্রকল্প দুটিতে কৃষি জমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউজ থেকে বরপা ব্রিজ হয়ে একটি মূল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযোগ হয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, গত কয়েক বছরে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘর-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে করে সামান্য বর্ষণ হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতোনা বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলানোর কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে দুটি প্রকল্পের জনগণের পিছু ছাড়ছে না জলাবদ্ধতা।
একতা ব্লাড ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মহসিন বলেন, বৃষ্টির কারণে গোলাকান্দাইল নতুন বাজার সড়ক ডুবে হাঁটু পানি হয়ে গেছে। পানি ভেঙে এখানকার মানুষ চলাফেরা করছেন। আমরা অনেকে বৃষ্টির কারণে দোকানপাট খুলতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
গোলাকান্দাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান তুহিন বলেন, আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ৫নং ক্যানেল ও নতুন বাজার এলাকাটি। এখানে বিভিন্ন শিল্প কারখানার হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে আমরা বৃষ্টির আগেই পানি যাতায়াতের ক্যানেলগুলো পরিষ্কার করেছি। সকাল থেকেই পানি সরানোর কাজ করছি। ক্যানেল পরিষ্কার করা না হলে পানি স্থায়ী রূপ নিতো। এছাড়া বাধের ভেতরের নিচু এলাকাগুলোতে উচু এলাকার পানি এসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়ে আমাকে কেউ অবহিত করেননি। যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার ও অগ্রণী সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়