মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

এশিয়া কাপের হাসি-কান্না

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পর্দা নামল ক্রিকেটে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপের। প্রতিযোগিতার পুরোটা সময় টান টান উত্তেজনাকর মুহূর্ত পার করেছে খেলোয়াড়-সমর্থকরা। হাসি-কান্নায় তৈরি হয়েছে নতুন নতুন মুহূর্ত। ভুরি ভুরি স্বপ্নভঙ্গ, হার-জিত, হাসি-কান্নার সাক্ষী এশিয়া কাপের দুই মাঠ শারজাহ আর দুবাই স্টেডিয়াম। গ্যালারি, প্রেস বক্স, কমেন্ট্রি বক্স, খেলার মাঠ- সর্বত্র উত্তাপ ছড়িয়েছে। লং অন, লং অফ বাউন্ডারিতে থাকা খেলোয়াড়দের আবেগ, স্নায়ুর চাপ ছুঁয়ে গেছে মাঠে উপস্থিত সবাইকে।
এবারের এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে শ্রীলঙ্কা। প্রায় নিখুঁত ফিল্ডিং, চাপের মুখেও দারুণ বোলিং, দুর্দান্ত অধিনায়কত্ব পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালের রাতটা নিজেদের করে নেয় লঙ্কানরা। ১৭০ রান করে ২৩ রানে জিতে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন তারাই। এ টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কাতেই। তবে দেশটি এমন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত যে এত দলকে আতিথেয়তা দেয়ার সামর্থ্য ছিল না। যে কারণে নিজেদের দেশে খেলার বদলে খেলতে হয় পরভূমে। একপেশে লড়াইয়ে আফগানিস্তানের কাছে হার দিয়ে শুরু আর ফাইনালে একপেশে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে মধুর সমাপ্তি এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে এই হলো শ্রীলঙ্কা! জয়ের পর সাবেক ক্রিকেটার সনাথ জয়াসুরিয়া লিখেছেন, চমৎকার জয়ের জন্য অভিনন্দন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই শ্রীলঙ্কান ব্রান্ডের ক্রিকেট ফিরে এসেছে, যার জন্য আমাদের সুনাম ছিল। পরিকল্পনামতোই তোমরা ট্রফি ঘরে নিয়ে এসেছ। এই মুহূর্তটা উপভোগ করো। পরবর্তী লক্ষ্য বিশ্বকাপ।
অন্যদিকে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচের মাঠের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। মন্থর উইকেটে স্লো স্কোরিং ম্যাচের রোমাঞ্চ তো ছিলই, আফগান পেসার ফরিদ আহমেদকে আসিফ আলী ব্যাট দিয়ে মারার ভঙ্গি করে মাঠ কাঁপিয়ে তোলেন। এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ডেনিস লিলির সেই বিতর্কিত ঘটনাকে। পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন একবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন সাবেক পাক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ ও অজি পেসার ডেনিস লিলি। মিয়াঁদাদ রান নিতে যাওয়ার সময় পথ আটকান লিলি। তারপর যা নিয়ে দুইজনের মধ্যে তর্ক হয়। পরের মুহূর্তে আম্পায়ারের কাছ থেকে সোয়েটার নেয়ার সময় মিয়াঁদাদকে লাথি মারেন লিলি। সে সময় রেগে গিয়ে ব্যাট দিয়ে লিলিকে মারতে যান মিয়াঁদাদ। মুহূর্তের জন্য এশিয়া কাপের সে ম্যাচের আসিফকে মনে হয় জাভেদ মিয়াঁদাদ আর আফগান পেসার ফরিদ যেন সেই ডেনিস লিলি। লিলি যেমন মিয়াঁদাদকে স্লেজিং করে রাগিয়ে তুলেছিলেন, এ ম্যাচে ফরিদও আসিফকে আউট করে কী যেন বলে ফেলেন, যা শুনে মেজাজ শান্ত রাখতে পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ফরিদকে মারতে যান আসিফ। দৃশ্যটি দেখে গ্যালারিতে দর্শকরাও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। রাগে-ক্ষাভে কয়েকটি পানির বোতল গ্যালারি থেকে মাঠে ছোড়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। শারজার ছোট্ট গ্যালারি থেকে ছোড়া পানির বোতল মাঠেও এসে পড়ে। এই লঙ্কাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের জয়ের জন্য যখন ৬ বলে ১১ রান দরকার, বোলার নাসিম শাহ হঠাৎই ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। ফজল হক ফারুকির শেষ ওভারের প্রথম ২ বলেই ২ ছক্কা মেরে মাতেন বুনো উল্লাসে।
নাসিমের এই ছক্কা মনে করিয়ে দেয় ৩৬ বছর আগে এই মাঠেই ভারত-পাকিস্তানের একটি ম্যাচকে। যেদিন জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। বড় মিঞাঁর শেষ বলে ছয়ের যন্ত্রণা দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে ছিল দুঃস্বপ্ন। এবার সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে দিলেন তরুণ পেসার নাসিম শাহ। শেষ ছক্কাটা যখন লং অফ ফিল্ডার রশিদ খানের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারির সীমানা ছাড়ায়, তখন বোলার ফারুকিসহ তিন থেকে চারজন আফগানিস্তানি ফিল্ডার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কান্নায়। ওদিকে নাসিমকে ঘিরে চলতে থাকে উল্লাস। সেই উল্লাসে যোগ দেন ধারাভাষ্য দিতে আসা কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামও। শারজার এ দৃশ্য দেখে মনে হবে, এক ক্যানভাসে যেন আনন্দ ও কান্না মিলেমিশে একাকার। এদিকে এবারের এশিয়া কাপে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় সাকিবরা। ২০১২ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ম্যাচে বাংলাদেশের হার সেই স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলে। সেবার প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ধূলিসাৎ হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন। ম্যাচ শেষে দেখা যায় সাকিবের চোখ ছল ছল করছে। মুখে হাত দিয়ে সেই কান্না লুকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
অনেকদিন ফর্মহীন থাকার পর এবারের এশিয়া কাপে নিজেকে ফিরে পেয়েছে বর্তমান সময়ের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। প্রায় তিন বছর পর পাওয়া সে সেঞ্চুরিতে দিয়ে মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এক যুগের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম সেঞ্চুরি।
– মোহাম্মদ আল মুকিত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়