প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
শোকাবহ আগস্ট শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে তবে শোকের এ শক্তি যেন বছরজুড়ে আমাদের জাগিয়ে রাখে অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে। আজ গতকাল নয়, আগামী দিনও আজকের মতো হবে না, সামনে হয়তো অনেক সংকট আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুও রাজনৈতিক জীবনে সংকট মোকাবিলা করেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন- ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে চারদিকে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। ইংরেজরা ধান-চাল সৈন্যদের খাওয়াবার জন্য গুদাম জব্দ করেছে। যা কিছু ছিল ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করেছে। ফলে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমিও লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অনেক লঙ্গরখানা খুললাম। দিনভর কাজ করতাম আর রাতে কোনোদিন বেকার হোস্টেলে ফিরে আসতাম।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর নিঃস্বার্থ ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্ব ও যোগ্যতার শক্তি দিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার শিক্ষা দিতেন, যা বর্তমান সংকটকালীন সময়েও তারুণ্যকে পথ দেখায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার কাজটি চমৎকারভাবে জাতীয় চার নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সুসম্পন্ন করেছিলেন। যা আজ-কালকের নেতাদের মাঝে পদ-পদবি, পাওয়া না পাওয়ার কঠিন সমীকরণে আবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না।’
সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের (সরকার-বিরোধী) কী ভূমিকা হওয়া উচিত? কীভাবে এ সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশে দাঁড়ানো উচিত? তা এ কথা থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছিল বাংলাদেশ, কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ন খাতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দেশটির বন্ধকি বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের ঋণ নিয়ন্ত্রণ। যা ১৯৩০ সালের মহামন্দার সঙ্গে তুলনা করেন অনেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংকটের মধ্যেই তারা অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটিয়েছে, ২০০৮ সাল পরবর্তী বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা তখনো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নাড়া দিয়েছিল; দক্ষ ও সঠিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে, সক্ষমতা অর্জন করতে সহযোগিতা করেছিল। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে শেখ হাসিনার যেমন কৃতিত্ব আছে তেমনি তা বাস্তবায়নেও দল ছিল বদ্ধপরিকর। যদিও বাংলাদেশ তখন কেবল হাওয়া ভবনের দুর্নীতির জাঁতাকল থেকে নতুন পথে হাঁটছিল। যার ফলে দেশের অর্থনীতি মাত্র এক দশকে মিরাকেল ম্যাজিকে পরিণত হয়। দৃঢ় সংকল্পের কাছে সংকট, অভাব, কিংবা অর্থনৈতিক মন্দা বড় বাধা নয়। আপদকালীন সময় এদেশে অতীতেও ছিল, বর্তমানেও অতিক্রম্য, ভবিষ্যতেও থাকবে। আদর্শ, সৎ সাহস, মানবিক গুণসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে যে কোনো সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। জাতির পিতার জীবনীতে তা দেখা যায়। তিনি দেশমাতৃকার দুঃসময়ে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জনসাধারণের দুঃখ লাঘব করতে শেখ মুজিবুর রহমান তখন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খুলে কাজ করেছেন। দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে তিনি সুষম খাদ্য বণ্টনের আন্দোলন, ভুখা মানুষের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধেও কাজ করেন। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতায় মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে তরুণ মুজিব ছুটে বেড়ান দাঙ্গাকবলিত মুসলিম-হিন্দু দুই জনগোষ্ঠীকেই উদ্ধার করতে। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় : ‘দু-এক জায়গায় উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্তও হয়েছিলাম। আমরা হিন্দুদের উদ্ধার করে হিন্দু মহল্লায় পাঠাতে সাহায্য করেছি। মনে হয়েছে মানুষের মানবতা হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে। আমরা হলে কী করতাম?’
সংকট মোকাবিলায় দলীয় নেতাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক মনোভাব, দু-ই আমরা দেখতে পাই। সামান্য ডিমের হালি ৪০ থেকে হয়ে যায় ৬০ টাকা। সরকারের নিরন্তর তদারকি এবং মন্দা মোকাবিলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। কৃষকের দুর্দিনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ বা অন্যান্য আওয়ামী নেতারা কৃষকের ধান কাটা, মাড়াইসহ দুর্যোগকালীন সময়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে তা অব্যাহত রাখা। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখতেন সবার তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। তিনি বলতেন মেহনতি শ্রমিক, কৃষক, মজুর, গরিব, দুঃখী সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দুস্থ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ছাত্রলীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলো। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও নিশ্চয়ই তাদের ভূমিকা প্রশংসিত হবে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশবিরোধী অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে; তারপরও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে পিছপা হয়নি; রোল মডেল হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। করোনা মহামারি ব্যবস্থাপনায় সাফল্য আছে। করোনা টিকা দানে বাংলাদেশ ২০০ দেশের মধ্যে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে।
এর পরও আমরা যদি না জাগি! ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য তো জেগে ওঠার এখনই সময়। দেশের জন্য তো এখন আর জীবন দেয়ার দরকার নেই বরং দেশটাকে সোনার দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সব অপশক্তি, কালো ছায়ার বিরুদ্ধে আলোর মশাল হাতে রুখে দাঁড়ানোই এ প্রজন্মের মুক্তির সংগ্রাম। তারপরও জাতীয় সংকটকালীন সময়ে কিংবা মুক্তির সংগ্রামে সদা জাগ্রত থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কি শুধু একজন শেখ হাসিনার? দলের সব পর্যায়ে ত্যাগী, সৎ, কর্মীবান্ধব নেতাকর্মীদের কীভাবে দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তা জাতির পিতার আদর্শে সুস্পষ্ট। পাশাপাশি হাইব্রিড, সুযোগসন্ধানী ও দুর্নীতিবাজরা দলে থেকে কীভাবে দল ও দেশের ক্ষতি করে তাও সজাগ দৃষ্টিতে প্রতিহত করতে হবে। সংগঠনের সর্বস্তরে ত্যাগীদের মূল্যায়ন, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা; যারা সংকটকে পুঁজি করে নিজের সম্পদ গড়ায় বেশি ব্যস্ত তাদেরও আর ছাড় নয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কোনো দিন একসঙ্গে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশ সেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।