৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

নোয়াখালীতে বেদে পল্লী ঘিরে সক্রিয় ইয়াবা কারবারিরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদে পল্লীকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে ইয়াবা কারবারিরা। পল্লীর এবং পল্লীর বাহিরের ইয়াবা কারবারিরা অনেকটা নিরাপদে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা বেচাকেনা করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় থাকা এসব ইয়াবা কারবারিদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করে বেদেরা। এখানে বসবাসের পর বেদেদের মধ্যে একটি দল স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শুরু করে মাদক (ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা) ব্যবসা। অতি লাভের আশায় সাপের বাক্স, সস্তা চুড়ি বা কসমেটিকের ঝাপিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাবিজ-কবজের আড়ালে ওই মাদক বহন এবং বিক্রি করে আসছে তারা। পর্যায়ক্রমে তাদের এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় যুবকরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনেক সরদার বেদে পল্লীর পাশের এলাকা মন্তাজের বাপের দোকান, হানিফ চেয়ারম্যান বাজার, মান্নান হাই স্কুল, মান্নান নগর, খলিল মিয়ার দরজা, সাহেবের হাট, হায়দার মিয়ার হাট, খাসের হাট ও মমিন নগর এলকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের নিয়ে চক্র গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের সদস্যরা সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনে এনে বেদে পল্লীতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এওজবালিয়া বেদে পল্লী এলাকা থেকে ১৮০ পিস ইয়াবাসহ মো. নুর উদ্দিন (২৮) ও আবদুল মোতালেব মাসুম (২৫) নামের দুই ইয়াবা কারবারিকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেদে পল্লীর মাদক কারবারি তরিকুল হাসানকে মাদকের একটি চালানসহ গ্রেপ্তার করে জেলা ডিবি পুলিশ। এরআগে ২০১৪ সালে মাদক কারবারি মো. মোস্তাককেও মাদকসহ গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল বেদে পল্লীতে মাদকের বেচা-কেনা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। এছাড়া, মাদক কারবারিদের মধ্যে বেদে পল্লীর সুরত আলীর ছেলে ওসমান, রাখালের ছেলে আলমগীর ও রাজু মিয়ার ছেলে আরিফ ইয়াবার মামলায় জেল খেটেছেন।
বেদে পল্লীর বাসিন্দারা বলেন, গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও সেবীর কারণে আমাদের বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। তারা বহিরাগত মাদক কারবারিদের এখানে জায়গা করে দিচ্ছে কারবারের জন্য। এতে আমাদের শান্তিপূর্ণ পল্লীকে মাদকের আস্তানা হিসেবে অনেকেই বলাবলি করছে। কিন্তু আমরা এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। স্থানীয় যুবকরা এখানে আসলে আমরা বাঁধাও দিতে পারিনা। তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
এওজবালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযত ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিনিয়তই ইয়াবা কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠছে। বেদে পল্লীর ভিতরে এবং বাহিরের ইয়াবা কারবারিদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।
সুধারাম মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেদে পাড়ায় মাদকের বেচাকেনার ঘটনায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে-অন্যকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের সহযোগিতায় আশপাশের এলাকা থেকেও বেশ কিছু যুবক সেখানে গিয়ে মাদক বেচাকেনা করার খবর রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়