গাজীপুরে সালনা রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

পরের সংবাদ

অযৌক্তিকভাবে মুনাফা করছে সুপারশপগুলো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্যাকেটজাত পণ্যের দাম বাড়াতে সুপারশপগুলো অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাই সুপারশপগুলোর আউটলেটে মনিটর বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক শফিকুজ্জামান বলেন, ৫৮ টাকার চাল সুপার প্রিমিয়াম নামে বিভিন্ন সুপারশপে ৮২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া চাল, চিনি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি করে প্যাকেটের গায়ে লিখে দিতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুপারশপগুলো চাপ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ভোক্তারা প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতারিত হচ্ছে। অভিযানে গেলেই তা ধরা পড়ছে। এভাবে প্রতারণা চলতে পারে না। লাগাম টেনে ধরতে হবে। কেউ ছাড় পাবে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ভোক্তা-সুপারশপ ব্যবসায়ী পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিজিএফআইর সোহরাব আলী, ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাহনাজ সুলতানা, শামসুর রহমান, মো. শাহ আলম, আবদুল জব্বার মণ্ডল, বিকাশ চন্দ্র দাস প্রমুখ। সভা শেষে জানানো হয়, অতিরিক্ত মুনাফার বিষয়ে আজ বুধবার উৎপাদক, ভেন্ডর (সরবরাহকারী) ও সুপারশপের মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ডিম, পোল্ট্রিতেও ভোক্তার পকেট থেকে ৫০০ কোটি টাকা চলে গেছে। অভিযানে যাওয়ার পর তা ধরা পড়েছে। সুপারশপগুলো এমআরপির নামে লাভ বেশি করছে। তবে কেউ কোনো দায় নিচ্ছে না। বিক্রেতারা বলছেন, আমরা দায়ী না। উৎপাদকরা যেহেতু দাম নির্ধারণ করে। তাই বুধবার দুই গ্রুপকে মুখোমুখি করা হবে।
শফিকুজ্জামান বলেন, পণ্য প্যাকেটে ভরলেই লাভ বেড়ে হচ্ছে দ্বিগুণ। চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বড় ভূমিকা রাখছে সুপারশপগুলো। ব্যয়ের হিসাব যেভাবেই দেয়া হোক না কেন, অযৌক্তিকভাবে মুনাফা করছে অভিজাত এসব বিপণিবিতান।
তিনি আরো বলেন, এমআরপি সুপারশপগুলোর ইচ্ছে অনুযায়ী লিখে দেয়ার জন্য কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। আমাদের কাছে সে অভিযোগ রয়েছে। আমরা অভিযানে দেখছি, যে কোনো পণ্যে সুপারশপগুলো লাভের পরিমাণ অনেক বেশি করছে। সুপার প্রিমিয়ামের নামে ৫৮ টাকার চাল বিক্রি করছে ৮২ টাকায়। এই সুপারশপগুলো সুপার প্রিমিয়াম নামে যেসব চাল বেশি দামে বিক্রি করছে, তা আসলে মিনিকেট চাল। চালকে বেশি চক চক করে এমন সব নাম দেয়া হচ্ছে। কে কত টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করছেন তা আমাদের কাছে তথ্য আছে। এসব বিষয় নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ডিমের দামেও লাভ করা হচ্ছে আকাশ-পাতাল ব্যবধানে। একটি খোলা ডিমের ক্রয়মূল্য ৯ টাকা ১৮ পয়সা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১০ টাকা। আর এক ডজন প্যাকেটজাত ডিমের ক্রয়মূল্য হলো ১৩৬ টাকা ৪০ পয়সা, কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। তার মানে ডজনপ্রতি লাভ করা হচ্ছে ১৮ টাকা ৩ পয়সা বা প্রায় ২৬ শতাংশ। খোলা পণ্য প্যাকেটজাত হলেই তারা লাভ করে নিচ্ছে দ্বিগুণ।
এ সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এমন পর্যবেক্ষণের কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দিয়ে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন সুপারশপ প্রতিনিধিরা। এ সময় আগোরার করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ইনচার্জ আবদুস সবুর খান বলেন, সবসময় আমরা কোম্পানির নির্ধারিত দামেই পণ্য বিক্রি করি। স্বপ্ন সুপারশপের করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তামিম খান বলেন, প্যাকেটজাত যেহেতু আমরা করি না, কোম্পানিগুলো করে, তারা মূলত দাম নির্ধারণ করে দেন। এখন আমরা কিন্তু সবকিছু ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। পণ্য কেনা না কেনা ক্রেতাদের ব্যাপার। চাহিদা আছে বলেই জিনিসগুলো এ অবস্থায় আছে। ডেইলি শপিংয়ের উপমহাব্যবস্থাপক ফিরোজ আলম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখটি আলাদা দেয়া থাকে। আমরা যদি সে সময়ের মধ্যে তা বিক্রি করতে না পারি, তাহলে সে পণ্যটি আমাদের ফেলে দিতে হয়। ইউনিমার্টের পক্ষে কথা বলেন করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, আমরা ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের বেশি লাভ কখনোই করি না।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে তদারকি আর প্যাকেজিং আইন কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখলে চালসহ নিত্যপণ্য বিক্রি থেকে অন্যায় মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়