এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

ক্ষেতলালে মাটির দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা হ্রাস : বিলুপ্তির পথে মৃৎ শিল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আখতারুজ্জামান তালুকদার, ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) থেকে : জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মৃৎ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আলোর ব্যবস্থা, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নসহ প্রায় সব কাজেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্র। দামে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় সব পরিবারেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরি ওইসব পাত্র।
তবে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও সিলভারের তৈরিকৃত সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে ওই সব মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্র। তাই পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দিতে জাতিগত পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে কুমাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর গ্রামে মৃৎ শিল্প পেশায় জড়িত আছে ৬০টি পরিবার। ঝড়, বৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরা উপেক্ষা করে এরা আজো এই পেশাকে ধরে রেখেছে।
মূলত শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহে মাটির হাঁড়ি, বাহারি চিতল, পুলি ও ভাপা পিঠাসহ হরেক জাতের পিঠা তৈরিতে খোলা, দধির পাতিল, টালি, ঘট, মুটকি, থালাবাসন, মাটির বাতিসহ বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করত গ্রাম বাংলার কুমাররা। ওইসব মাটির জিনিসপত্র অনেকে ভ্যানযোগে, আবার কেউ কেউ মাথায় নিয়ে বিক্রি করত। আর সেই উপার্জনেই চলত কুমারদের পরিবার। তবে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পেশা। ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউপির দক্ষিণ হাটশহর গ্রামের মনোরঞ্জন পাল (৭০) বলেন, ‘এক সময় বিনামূল্যে মাটি পাওয়া যেত। এখন তা পাওয়া যায় না। গত দু’বছর আগেও প্রতি গাড়ি মাটির দাম ছিল মাত্র ৪০০ টাকা। এখন ওই মাটিই এক হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাঁচামালগুলো পোড়াতে কাঠ ও খড়ের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।’ ৬০ বছর বয়সী বিধবা কানন রাণী বলেন, ‘১২ বছর বয়স হতে এ পেশায় জড়িত আছি। স্বামী মারা যাওয়ায় ছেলের সংসারে আছি। ছেলেদেরকে এখনো এ পেশায় সাহায্য করে আসছি। মাটি সংগ্রহ করে কোনো জিনিস বানাতে খুব কষ্ট করতে হয়। একদিনে কোনো কিছুই তৈরি করা যায় না, সময় নিয়ে বানাতে হয় এবং সেগুলো শুকিয়ে পোড়ানো হয়। তবে আগের মতো এখন আর মাটির জিনিসের চাহিদা নেই।’ একই গ্রামের রাধেশ্বর চন্দ্র পাল (৬৫) বলেন, ‘আমার কোনো সম্পদ নেই। এক ছেলে, তিন মেয়ে। এদের মধ্যে এক মেয়ের মৃগী রোগ থাকায় স্বামীর সংসার হয়নি। বর্তমানে আমার বাড়িতেই আছে। গরিব মানুষ বলে চিকিৎসা করতে পারি না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। অর্ধাহার ও অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। আবার পুঁজি না থাকায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়া সম্ভব হয় না।’ এদিকে সরকারি সহযোগিতা ও বাজারে মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকলে হাজার বছরের ঐতিহ্য হিসেবে পেশাটি টিকে থাকবে বলে মনে করেন এর সঙ্গে জড়িতরা।
নতুবা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে মৃত শিল্প। জয়পুরহাট জেলার উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ ভোরের কাগজকে জানান, মৃৎ শিল্পের কোনো অফিস জয়পুরহাটে নেই। তবে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কেউ প্রশিক্ষণ ও কারো কোনো আর্থিক সহযোগিতা লাগলে বিসিকের পক্ষ থেকে তা করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে মাটির তৈরি ওইসব জিনিসের নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। তাহলে অন্যসবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজারে টিকে থাকবে এ শিল্প।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়