বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

কাতারকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি দেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

চা শ্রমিকদের বাঁচতে দিন

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক দিনে তথ্যচিত্র এবং মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উঠে এসেছে। চা শ্রমিকদের আন্দোলন। বিগত কয়েক দিন ধরে তারা নিয়মিত ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি দিয়ে আসছেন। দাবি তাদের একটাই- দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা চাই। বর্তমানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সেই সঙ্গে তাদের পরিবার এবং সন্তান-সন্ততির তিন বেলা খাবার জোটানোই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে, সেখানে তাদের সন্তান-সন্ততির পড়ালেখা করানো তো এক রকম বিলাসিতা। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ লঙ্ঘিত হচ্ছে।
গত জুন মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে ভৌগোলিক মাঠকর্মের সুবাদে চা শ্রমিকদের জীবন খুব কাছ থেকে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল। জরিপ কাজ ছিল বিধায়। চা শ্রমিকদের জীবন, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং সমস্যার কথা জানতে সক্ষম হয়েছি। বেশ কিছুসংখ্যক পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩-৫ জন। এদের আবার সবার কাজ করার সামর্থ্য নেই, কেউ খুব ছোট, কেউ বা আবার প্রবীণ। পুরো পরিবারের মাত্র একজন কিংবা দুজন কাজ করতে পারে। ১২০ টাকা বেতন পায় যদি তারা দৈনিক ২৩ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারে। এই সামান্য টাকায় তাদের জীবন বাঁচানোই একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের ওষুধ খরচ, শিক্ষার খরচ মেটানো একেবারেই দায়। শুধু থাকার জায়গা হারানোর ভয়ে তারা এ কর্ম ত্যাগ করতে পারছে না। নিবন্ধিত শ্রমিকদের দেয়ার মধ্যে থাকার জায়গা, সপ্তাহে ৩ কেজি করে আটা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা দিলেও তা মেরামতের অভাবে প্রায়ই বন্ধ থাকে। কিন্তু এসব শ্রমিককে দিয়ে আয় করে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চা বাংলাদেশের বর্তমানে দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬৭টি বাগানে চা উৎপাদন হচ্ছে। যার মধ্যে সিলেট বিভাগেই ১৩৮টি। এসব চা বাগানে শ্রমিক সংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। বিশ্বের ৩ ভাগ চায়ের জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের এউচ-তে ১ ভাগ সহযোগিতা রয়েছে এ চা শিল্পের। যদিও রপ্তানির পরিমাণ আগের তুলনায় কমে আসছে, তবুও লোকসানে নেই চা শিল্প। কেননা দেশেই রয়েছে চায়ের প্রচুর চাহিদা। দেশে জনপ্রিয় পানীয় এই চা।
সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ২০২১ সালে ৯.৬৫ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে দেশে এবং ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা রপ্তানি করে ১৮ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে চা শিল্প। আর্দ্র এবং অনুকূল তাপমাত্রার কারণে দেশের চা উৎপাদন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০২৫ সালে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে উদ্যোক্তারা। অথচ এত লাভবান একটা শিল্প বৈষম্য করে আসছে চা শ্রমিকদের সঙ্গে। এ বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না। তারাও মানুষ। তারাও এ স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার হক রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের অনুপ্রেরণা না জোগালে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। গত ৬ দিনের কর্মবিরতির ফলে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাই দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তারাও মানুষ, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরও সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

মো. রুবেল আহমেদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়