আজকের খেলা

আগের সংবাদ

কুশিয়ারা ফেনী গঙ্গায় জোর : ১২ বছর পর কাল থেকে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক > প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে পানি সমঝোতার সম্ভাবনা

পরের সংবাদ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত প্রায় সব দেশই চরম মুদ্রাস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জুনে যুক্তরাষ্ট্র এবং জুলাইয়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সাক্ষী হয়েছে। ইউরোজোন অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির নতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। খাদ্য-বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। জুলাইয়ে জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে। জার্মানিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে ধুঁকছে পুরো ইউরোপ। গত ২৫ বছরে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে ইউরোজোনভুক্ত ১৯ দেশ। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে স্পেনে। দেশটিতে ৩৮ বছর পর জুলাইয়ে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। যা এক মাস আগেও ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ায় ৪০ বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছে যুক্তরাজ্য। জুলাইয়ে এর হার ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ১৯৮১ সালের নভেম্বরের পর জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩ শতাংশে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাচ্ছে। করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্য, জ্বালানিসহ পণ্যসামগ্রীর দাম ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, তেল ও খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। আমদানিনির্ভর দেশগুলোই এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। তাদের ওপর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ছে। এজন্য ভোক্তাদের বাধ্য হয়ে খরচ কমাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে দেশে নীতিনির্ধারকদের ওপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চাপ বাড়ছে। অর্থশাস্ত্রের নিয়মানুযায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধ করতে ব্যাংকে সুদহার বাড়িয়ে দিতে হয়। বাড়তি সুদে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ঋণ গ্রহণ করা কমিয়ে দেবেন। ফলে বাজারে অর্থপ্রবাহ কমে আসবে। অর্থপ্রবাহ কম মানে, বাজারে কম মানুষ কিনতে যাবে বা কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেবে। তাতে করে পণ্যসামগ্রীর দাম পড়তে বাধ্য। কারণ মানুষের হাতে অর্থ কম থাকায় চাহিদা কমে আসবে। চাহিদা কম মানে মুদ্রাস্ফীতিতে কমতির দিকে থাকবে। মুদ্রাস্ফীতি কমার ক্ষতিকর প্রভাব বাজারে পড়লে অর্থনীতি ক্ষতিতে পড়তে পারে তবে আশা করা যায় সেটা সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদে এটা বাজারের জন্য ভালো ফল আনতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকলে ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে আবারো তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি আনয়ন সম্ভব। অর্থের পরিমাণতত্ত্ব অনুযায়ী, অর্থের ছড়াছড়ি কমে গেলে পণ্যসামগ্রীর দাম কমতে বাধ্য।
আধুনিক অর্থনীতির ভাষায় সুদহার বেড়ে গেলে কার্যকর চাহিদা কমে আসে। চাহিদা কমলে দাম কমে। এজন্য সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বাড়ায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংককে টাকা ধার দেয় তাকে নীতি সুদ হার বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ মাত্র গত কয়েক মাসে নীতি সুদ হার ৩ বার বাড়িয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া গত মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন বার নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে। যেহেতু দাম বেড়েই চলছে, সেহেতু নীতি সুদের হার ক্রমাগত বাড়াতে হবে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও যেন ঋণের সুদের হার বাড়ায় সেদিকে তদারকি রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সময় খোলাবাজারে সরকারি ঋণপত্র বিক্রয় করে বাজার থেকে অর্থ উঠিয়ে পরিমাণ কমাতে চেষ্টা করে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদান ক্ষমতা কমে যায়। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে ঋণপত্র বিক্রয় করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের রিজার্ভের হার পরিবর্তন, নৈতিক চাপ প্রয়োগ, প্রত্যক্ষ ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির সাহায্যে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি দূর করার চেষ্টা করে। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে প্রায় প্রতিটি দেশই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে যার বাস্তব প্রমাণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে বেকারত্ব দেখা দিয়ে স্টাগফ্ল্যাশন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য আরো বিপজ্জনক হতে পারে। বেকারত্ব বাড়া মানে সমাজে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তাই সবকিছু সামলে নিতে এখনই যুগোপযোগী এবং ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

আনোয়ার ফারুক তালুকদার
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়