আজকের খেলা

আগের সংবাদ

কুশিয়ারা ফেনী গঙ্গায় জোর : ১২ বছর পর কাল থেকে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক > প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে পানি সমঝোতার সম্ভাবনা

পরের সংবাদ

চাপের মুখে সঠিক কথা ও কাজের দরকার

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাঠ গরম করে রাখেন এখন। এমন সব কথা বলেন বা মন্তব্য করেন যা নিয়ে ক’দিন পরপর সামাজিক মিডিয়া তোলপাড় হয়ে যায়। এমন কথা এর আগেও বলতেন নেতারা। তাদের মানুষ মনে রাখেনি। রাখে না। শেষতক অর্থনীতি ও জীবনই হচ্ছে মূল বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের ভাগ পেলেও তাদের জীবন এখন সুখকর কিছু না। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো অভাব ও বাজারের চড়া গতি হানা দিয়েছে। কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ।
পরিকল্পনামন্ত্রী দেখলাম ভরসা দিয়ে বলেছেন সামনের মাসে সহনীয় হয়ে উঠবে দাম ও বাজার। কী করে তা হবে সেটা কিন্তু খুলে বলেননি। সব মিলিয়ে ওপরে ওঠার চাপে আছে স্বদেশ। এদিকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছে। এর মানে বাংলাদেশকে এখন কিছু শর্ত মানতে হবে। এবং তা সহজ কিছু হবে না। খবরে দেখলাম পরিকল্পনমন্ত্রী বলেছেন টাকার অভাবে অনেক কিছু করা যাচ্ছে না। তিনি স্পষ্টভাষী। কিছুদিন আগে তার সঙ্গে একটি টক শোতে যুক্ত হওয়ার কারণে জানি তিনি রাখঢাক করেন না। ভদ্র মানুষ। এই সত্যগুলো এখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। তারপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখনো ভালো। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে বলে যারা হা-হুতাশ করছেন তাদের বলি, সারা দুনিয়ায় এখন বেহাল দশা চলছে। সিডনিতে বাজারে আগুন। ডলারে দাম হাঁকার পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠবে। ফুলকপি, বেগুন, টমেটো থেকে পালং শাক বা সবজির দাম এমন কেউ হাত দিতে পারছে না। খাবার টেবিলে কেবল মাংস দিয়ে কি চলে? তেলের বাজারও চড়া। সম্প্রতি জ্বালানির দাম বাড়লেও এখন কমছে। সব মিলিয়ে অবস্থা বেগতিক। ফাস্ট ফুডের এই সমাজে সেখানেও জ্বলছে আগুন। এই হাল বাংলাদেশে আছড়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে অবস্থা শোচনীয় করে তোলা অন্যায়।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত অগ্রসরমান দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি অনেক দিন ধরেই টালমাটাল। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করতে পেরে দেশটি নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করেছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে সরকার নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। গভীর সংকট হাতছানি দিচ্ছে এ অঞ্চলের আরেক দেশ নেপালকেও। ভারতে জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। এর মানে এই নয় যে বাংলাদেশেও দাম বাড়তে হবে। কিন্তু‘ গেøাবাল এফেক্ট বা প্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে না। মুশকিল হচ্ছে বাংলাদেশে তথ্যের অসঙ্গতি আর মন্ত্রীদের বক্তব্য। তারা একেক সময় একেক কথা বলেন। বাড়তি কথা বলেন। যার দরকার নেই। এতে বিভ্রান্তির জন্ম হয়। আমরা এসব দেশে দেখছি মন্ত্রী বা আমলারা সহজে মুখ খোলেন না। তারা অনুমোদিত বক্তব্য বাদে মন্তব্য করেন না। কিন্তু যে কোনো দরকারে হাজির থাকেন। তাদের এই জবাবদিহিতামূলক সতর্ক আচরণ মানুষের মনে স্বস্তি জোগায়। মানুষ ভাবে বিপদে কেউ একজন আছে।
হুজুগে কথা বলে লাভ হবে না। বরং যুক্তিতর্ক দিয়ে বুঝতে হবে কেন কী হচ্ছে। করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে ২০১৯ সালের শেষ হতে ২০২১ সালের শুরুর কয়েক মাস পর্যন্ত দেশে দেশে লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল বিশ্ব অর্থনীতি। মহামারির ওই ভয়াবহ সময়ে বিধিনিষেধের কারণে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সীমানা ও বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতি। এছাড়া পরিবহন সংকটের কারণে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে বেড়ে যায় পণ্য পরিবহন খরচ। অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে হ্রাস পায় পণ্যের উৎপাদন। এসব মিলিয়ে লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে পণ্যের মূল্য। করোনার মহামারির ধকল কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছিল ঠিক সেই সময়টাতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। একদিকে রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক রাষ্ট্র। অন্যদিকে ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম খাদ্যশস্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক রাষ্ট্র। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উভয় দেশের রপ্তানি কার্যক্রমই প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্ব জ্বালানি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। যার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি এখন লাগামহীন। জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে অন্যান্য সব পণ্যের পরিবহন ও উৎপাদন খরচ জড়িত বিধায় অন্যান্য পণ্যের মূল্যও লাফিয়ে বাড়ছে।
এই বাস্তবতা কি আমাদের দেশ এড়াতে পারে? এটা সত্য বাংলাদেশ এর দায়ভার নেবে না। কারণ আমরা তা তৈরি করতে বা এমন পরিবেশ হওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখিনি। কিন্তু বদ বা মন্দ বিষয়ের নিয়ম এমনই। কথায় বলে- একে নষ্ট করে দশে কষ্ট পায়। যুদ্ধ আর করোনা একসঙ্গে হবে এটা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। অতিমারি করোনা দুনিয়া স্তব্ধ করে দেয়ার পরও যে রাশিয়া ইউক্রেন হামলা করবে এটা যেমন ভাবা যায়নি, তেমনি এই যুদ্ধে ন্যাটো বা আমেরিকা যে এমন নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে সেটা কি কেউ জানত? আমেরিকা, রাশিয়ার সাধারণ মানুষরা কি ভালো আছেন? আমরা অস্ট্রেলিয়ার মতো সম্পদশালী কম জনসংখ্যার একটা দেশে থেকেও দেখছি কী টালমাটাল হাল। তাই বাংলাদেশে বহু মানুষের রাগ আর হতাশার কারণ বুঝি না। আপনাকে বুঝতে হবে জলবায়ুর মতো বিষয়ও এখানে বড় বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী বন্যা, খরা ও ঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাহত হচ্ছে শস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খাদ্য সংকট। খাদ্যের চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকায় বাড়ছে পণ্যের মূল্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর অন্যতম খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী রাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এর ভুক্তভোগী প্রশান্ত পাড়ের দেশ। বন্যার কারণে ব্রিসবেনে ফলমূল, শস্য ভেসে যাওয়ায় বাজারে কোনো কিছুতে হাত দেয়া অসম্ভব। কবে এটা নর্মাল হবে কেউ জানে না। জলবায়ুর কথা বলছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে খরা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে খাদ্য সংকটে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং সোমালিয়ায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। ভয়াবহ খরার ফলে সৃষ্টি দুর্ভিক্ষে এই অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে ক্ষুধা মৃত্যুর হার। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেন কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে- ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং সোমালিয়ায় ক্ষুধার কারণে প্রতি ৪৮ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যাচ্ছে। সে অবস্থান থেকে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে বা কীভাবে মোকাবিলা করছে তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। সরকারের আন্তরিকতা বা দায়িত্বের কমতি নেই। কিন্তু একা সরকারের কাজ নয় এটা। মানুষের ভেতর সহনশীলতা আর কৃচ্ছ্রসাধনের দরকার। এ কথা শেখ হাসিনা সরাসরি বলেন। যারা মনে করে সরকারপ্রধান কেন এমন বলেন তাদের জানা উচিত যেসব দেশের গণতন্ত্র বা শাসন বিচার দেখে আমরা প্রলুব্ধ হই বা তেমন হওয়ার কথা বলি তাদের শাসকরা কি এভাবে বলেন না? বরং তাদের অনেকেই কঠোর ভাষায় এগুলো বলেন। পার্থক্য একটাই আমাদের আমলারা বলেন কিন্তু নিজেরা বিলাসিতা করেন। এই জায়গাতে তাদের সাবধানতা আর পরিমিতিবোধ এখন প্রয়োজনীয়। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র জানলেই বোঝা সম্ভব কেন দেশে এমন দাম বাড়ছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি। আমদানিকৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি। দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। ফলে এ সমস্যা একদিনে শেষ হবে না। মানুষের দুর্ভোগ বা অভাব যাবে না রাতারাতি। সমগ্র বিশ্বই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনোনিবেশ করছে। এটা গেøাবাল সমস্যা। তাই বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত না করে রাজনীতি যদি নিজের দায়িত্ব পালন করে তবেই সহজ হবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা। মনে রাখা দরকার ঊর্ধ্বমুখিতারও চাপ আছে। সে চাপ হজম করেই মানুষকে সামনে যেতে হয়।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়