প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ প্রতিবেদক : দেশের নারী সমাজকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আদর্শ ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নাই কথাটা আমার মা কখনো বলতেন না। কিছু ফুরিয়ে গেলে বলতেন, এটা শেষ হয়ে গেছে, আনতে হবে। যখন যেভাবে যে অবস্থায় থাকতেন সেই অবস্থায় তিনি চলতেন। আমাদেরও সেভাবে চলা শিখিয়েছিলেন। আমার বাবার জীবনে আমার মায়ের অবদান অনেক বেশি। রাজনৈতিক জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে মা সব সময় বাবার পাশে থেকেছেন। তিনি ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। মা আমার বাবার আদর্শটা ধারণ করেছিলেন।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য ‘বঙ্গমাতা পদক-২০২২’ বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। গোপালঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল। এ সময় তিনি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আড়াই হাজার অসচ্ছল নারীর মধ্যে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক প্রয়োজন, কোনো চিকিৎসা জন্য মা বিনা দ্বিধায় নিজের টাকা খরচ করতেন। অনেক সময় অনেক নেতাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজের গহনা বিক্রি করে তাদের টাকা তিনি দিতেন। বাবাকে কখনো এটা চাই-ওটা চাই বলে বিরক্ত করেননি। কারাগার থেকে বাবা যখন বলতেন, তুমি কীভাবে চালাচ্ছ আমি বুঝি না। মা বলতেন, এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি দেখব। সব দায়িত্ব তিনি হাতে নিয়েছেন। কারণ মা জানতেন বাবা সব সময় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছেন। এই উপলব্ধি থেকেই কিন্তু সব সময় পাশে থেকে বাবাকে তিনি অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বঙ্গমাতার জীবনীর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার লেখা ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি ঢাকায় কর্মজীবী নারীদের জন্য ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ অত্যাধুনিক ১০তলা হোস্টেলেরও উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে পাঁচ বিশিষ্ট নারী ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ পেয়েছেন তারা হলেন, ‘রাজনীতি’র ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের পদক, সম্মাননা পত্র এবং ৪ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন স্ত্রী হিসেবে মা আমার বাবার কাছে কোনো কিছু দাবি করতেন না; বরং আব্বার যখন কোনো কিছু প্রয়োজন হতো, তার সবকিছু তিনিই দেখতেন। সংসারে সবকিছু খুব নিয়মমাফিক করতে হতো। মাসিক বাজার কী হবে, সেই হিসাবটাও মা লিখে রাখতেন। আমার মায়ের সেই হিসাব লেখার একটি খাতাও আমার কাছে আছে। সেখানে সংসার খরচের খুঁটিনাটি সুন্দরভাবে লেখা আছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক
ক্ষেত্রেও মা যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটাই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সব থেকে সহায়ক হয়েছে। ৬ দফা বাদ দিয়ে যদি আওয়ামী লীগ ৮ দফায় চলে যেত, তাহলে কখনো এ দেশের মানুষের মুক্তি আসতো না। ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার ক্ষেত্রেও মায়ের মতামতই গুরুত্ব পেয়েছে।
শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মা’য়ের দৃষ্টি ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে যখন জাতির পিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখনই তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে আমার মাসহ পরিবারের সবাইকে বন্দি করা হয়। তখনো মা ভেঙে পড়েননি বরং এই দেশ স্বাধীন হবে সেই আত্মবিশ্বাসটা নিয়েই সব সময় ছিলেন। আর তার এই বিশ্বাসের জোরটাই বোধ হয় আমার বাবার জন্য অনেক সহায়ক ছিল, জীবনে যখন যে অবস্থায় পড়েছেন তার সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে আমার মা’য়ের অদ্ভুত শক্তি ছিল। আমাদেরও তিনি সে শিক্ষা দেয়ারই চেষ্টা করেছেন।
‘৭৪ সালে দুর্ভিক্ষকে মনুষ্য সৃষ্ট অ্যাখায়িত করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সবার সঙ্গে আমার মায়ের একটা যোগাযোগ ছিল। ঢাকা শহরের বা বাংলাদেশের কোথায় কি হচ্ছে সে খবরটা তিনি জানতেন। যখন চালের দাম বেড়ে গেল মা নিজেই বাবাকে বললেন চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। সে সময় অফিসে গিয়ে বাবা যে খবর নিলেন তাতে চালের যে দাম আসে তা শুনে মা বললেন, জাতির পিতাকে সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি। বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য তখন মা ওই দামে এক মণ চাল কিনে দিতে বললে বাস্তবিক অর্থে সে দামে বাজারে আর চাল পাওয়া গেল না। তখন মা আমার বাবাকে বলতেন এরা সব সময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তুমি এদের বিষয়ে সতর্ক থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা কিন্তু তার পাশে থেকে ছোটখাটো বিষয়গুলোও যে আমার মা খেয়াল করছেন তখন সেটা দেখা গেল। আর জাতির পিতার পদক্ষেপের ফলেই তখন ১০ টাকা সেরের চাল ৩ টাকায় নেমে এসেছিল। ১৯৭৪ সালে বাবা খাদ্য সচিবকে দিয়ে খোঁজ নিলেন কোন গুদামে কত চাল আছে। তারপর নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হলো। কিন্তু আমেরিকা সেই চাল আসতে দিল না। জাহাজ আটকে দিল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার মা ১৫ আগস্টও নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। নিজের জীবনটাও দিয়ে গেছেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের দেশের নারী সমাজ যেন এই আদর্শটা ধারণ করেন। শুধু চাওয়া-পাওয়া আর বিলাসিতাই জীবন নয়। একটা আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যায়। এই আদর্শ নিয়েই মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, সেটাই আমি চাই।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।