জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল

আগের সংবাদ

জ্বালানি তেলের প্রভাব বাজারে : পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের > বাড়তি ব্যয়ের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা মানুষ

পরের সংবাদ

পরিবেশ বিপর্যয় : রূপগঞ্জে কারখানার গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ৫৪ জন অসুস্থ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ওয়াটা কেমিক্যালের সালফার এসিডের গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ৫ গ্রামের ৫৪ নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থেেদর মধ্যে কয়েকজনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে কারখানার গ্যাসের এ বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে। গত প্রায় এক যুগ ধরে এ কারখানার গ্যাসের কারণে এখানকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্রমেই ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদি, বলাইনগর, ফরিদআলীরটেক, মঙ্গলখালী ও মকিমনগর এলাকা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা। জনবহুল এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা করার বিধান না থাকলেও ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে গত এক যুগ ধরে এসব এলাকার প্রায় ৯ হাজার মানুষ নীরব যাতনা সহ্য করে আসছে। কারখানার গ্যাসের কারণে গত একযুগে কয়েক হাজার লোক অসুস্থ হয়েছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, গত রবিবার সকালে কারখানার গ্যাস নির্গমণ করলে পথচারী ও স্থানীয় ৫৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ মাসুদা বেগম, ওসমান আলী, আমির আলী, মাহাথির (৬মাস), সামিয়া, মনু মিয়া, ইফসব আলী, মরিয়ম আক্তার, আরিফা (৫ মাস), বিলাতন নেছা, জয়নব বেগম, ববি আক্তার, পারুল, হালিমা, জিসান, আমেনা, রাবেয়া জান্নাতী (৫ মাস), শাহনা আক্তার, ওসমান আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মল্লিকা বেগম নামে এক নারী বলেন, গত ৫ মাস আগে গ্যাসের কারণে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে আমেনা বিনতে রিনা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। দুদিন চিকিৎসাধীন থেকে সে মারা যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গ্যাস ছাড়ার পর বুক জ¦ালাপোড়া ও মাথাব্যথা করে, শ্বাসকষ্ট হয়। গ্যাসের কারণে স্থানীয় এলাকাগুলোর গাছপালা জ¦লে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বাড়িঘরের টিন। জামান মিয়া নামে একজন বলেন, তার ৮টি আম গাছ ছিল। গ্যাসের বিষক্রিয়ায় সেগুলো মরে গেছে।
ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার মালিকপক্ষের হয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন স্থানীয় সালাম উদ্দিন ও আলী আকবর নামে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর ওই দুই প্রভাবশালীর সেল্টারে থাকা লাঠিয়াল বাহিনীর

সদস্যরা স্থানীয় নিরীহ মানুষকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। কারখানার গ্যাসের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে লাঠির আঘাতে আহত হতে হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বল্লে মালিকপক্ষ এলাকাবাসীকে বলেন, উপজেলা পুলিশ-প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করেই এই গ্যাস ছাড়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে কারখানার কিছু যায় আসে না।
অভিযোগের ভিত্তিতে কারখানার মালিকপক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত সালামদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এসব জানি না। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, ওয়াটা কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস আগে কারখানার ফায়ার সেফটি প্ল্যানের জন্য আবেদন করেছে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ কারখানার ছাড়পত্র আছে। যখন ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে তখন এটি আবাসিক এলাকা ছিল না। তবে গ্যাসের কারণে যদি লোকজন অসুস্থ হয় তাহলে দেখব। আগামীকাল (সোমবার) পরিদর্শনে যাব।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী বলেন, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা থাকা ঠিক নয়। কারখানার গ্যাস মানুষের চোখেমুখে গেলে অনেক ক্ষতি হয়। মাথা ব্যথা করবে, শ্বাসকষ্ট হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ওয়াটা কেমিক্যালের গ্যাস নির্গমণের খবর পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করতে দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়