বেপরোয়া গতির বাস উল্টে আহত ২০ : পোশাক শ্রমিকের হাত বিচ্ছিন্ন

আগের সংবাদ

বিদ্যুৎ সংকটে বিপাকে কৃষক : উত্তরাঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমি শুকিয়ে গেছে > লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ ব্যবস্থা বিঘ্নিত > ফসল বোনা অনিশ্চিত

পরের সংবাদ

বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব

প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেফালী সোহেল

স্বাধীন ও নির্ভার সম্পর্কটি বোধ হয় বন্ধুত্বের। শুধু মনের খোরাক মেটানোর জন্য অনন্য এই সম্পর্কের তুলনা বোধ করি অন্য কোনো সম্পর্কের সঙ্গে হয় না। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া এই সম্পর্কের কাছে আমরা আমাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভাবনা নিঃসংকোচ ও নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারি। জীবনের পথ চলায় যখন আমরা ক্লান্ত হই, তখন বন্ধুত্বের খোলা হাওয়াই পারে আমাদের উজ্জীবিত করতে। বন্ধুদের মধ্যেই আমরা নতুন করে নিজেদের খুঁজে পাই, বেড়ে উঠি প্রতিনিয়ত। ৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস নিয়ে এবার থাকছে বিশেষ ফিচার

এ সম্পর্কেও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। মতের অমিল, না বুঝে কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত দেওয়া, ছোটখাটো প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া, তুচ্ছ বিষয় থেকে মনোমালিন্য ইত্যাদি কারণেই গভীর আস্থার এ সম্পর্কে ছন্দপতন হতে পারে।

সম্পর্কটি খুব প্রিয় বলেই হয়তো এ ছন্দপতনে যৌক্তিক সমাধানের চেয়ে আবেগের প্রাবল্য ও আত্মাভিমানই অনেক সময় তীব্র হয়ে ওঠে। এ কারণে সহজ বিষয়গুলো হয়ে যায় জটিল। পরস্পরের যে চমৎকার বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক একসময়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল, সেগুলো আর আমাদের মনে থাকে না; বরং সম্পর্কের ছোটখাটো সমস্যাগুলোই প্রধান হয়ে ওঠে। অভিমানের কারণে নিজেকে বন্ধুর কাছে লাগে অগুরুত্বপূর্ণ। ফলে, অনিবার্যভাবেই তৈরি হয় দূরত্ব। আর সম্পর্কটি খুব স্বাধীন বলেই সাময়িক দূরত্ব থেকে দীর্ঘস্থায়ী দূরত্বের ঝুঁকি থেকে যায়। নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলি যেকোনো সংকট-আনন্দে শর্তহীনভাবে পাশে থাকা বন্ধুটিকে।
তাহলে কী করা উচিত এ ছন্দপতন কাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পর্ক ধরে রাখতে?

আলোচনা এবং আলোচনা: সম্পর্কের ছন্দপতনে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। বন্ধুর মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনন, তাঁর অবস্থান থেকে বোঝার চেষ্টা করুণ এবং গ্রহণ করুন।

নিজের দুর্বলতা স্বীকার: আলোচনার সময় প্রথমেই অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে নিন। আপনার উদারতা বন্ধুকে উদার হতে সাহায্য করবে।

অভিযোগ নয়: বন্ধুর সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতানৈক্য হলে বা কষ্ট পেলে মনের মধ্যে তা পুষে না রেখে সরাসরি তাঁকে জানান। এ ক্ষেত্রে সরাসরি অভিযোগ করা বা হেয় করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখা ভালো, অন্যের আত্মাভিমানে আঘাত দিয়ে কখনোই আপনার কথা অন্যের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না।

আলোচনায় তর্ক নয়: বন্ধুর মতামত গ্রহণযোগ্য না হলে সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে নিজের যুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যদি বুঝতে পারেন, কোনো বিষয়ে আপনার বন্ধু অনঢ় অবস্থানে রয়েছেন, তাহলে সেটা ঘাঁটাঘাঁটি না করে এড়িয়ে যান। আলোচনার সময় ‘আমিই ঠিক’ এমন আচরণ পরিহার করুন।

আবেগ প্রশমনে সময় নিন: বন্ধুর কোনো কথা বা আচরণে বিরক্ত হলে বা কষ্ট পেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকুন। এ ক্ষেত্রে আপনার রাগ প্রশমিত হওয়ার জন্য সময় নিন।
মনে রাখা উচিত, আবেগের টালমাটাল সময়ে বন্ধুত্বের সমস্যা নিয়ে না ভাবাই ভালো। কারণ, আবেগের প্রাবল্য আমাদের চিন্তার সংকোচন ঘটায়। এ সময় সামান্য জিনিস অনেক বড় করে দেখি বা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এড়িয়ে যাই। ফলে, এটা থেকে হটকারী সিদ্ধান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবেগ প্রশমিত হলে আপনি যৌক্তিক চিন্তা করতে পারবেন এবং অনেক পরিষ্কার করে বিষয়টি দেখতে পারবেন।

অমীমাংসিত বিষয় গ্রহণ করুন: যদিও দুজন ব্যক্তির মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয় তাঁদের ভাবনা, ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধের কিছু মৌলিক মিল থেকে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে বন্ধুর সব বৈশিষ্ট্যই ভালো লাগবে বা সব বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতামতের মিল হবে। সুতরাং, সব তর্কের সমাধান হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। যেকোনো ছন্দপতনে বন্ধুত্ব যে মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলো মূল্যায়ন করুন এবং মনোযোগী হোন।

বন্ধুর এগিয়ে আসা গ্রহণ করুন: দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর আপনার বন্ধু এগিয়ে এলে ( যেমন পুনরায় যোগাযোগ করা) সেটা মন খুলে গ্রহণ করুন। এ ক্ষেত্রে জেদ চেপে রাখবেন না বা পুরোনো তর্ক তুলবেন না। কেউ নিজ থেকে আসা মানে সব তর্কের ঊর্ধ্বে আপনার বন্ধুত্বের গুরুত্বই তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি।

‘সরি’ বলুন: আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হঠাৎ করে দূরত্ব তৈরি করলে মাথায় রাখতে হবে, হয়তো আপনার অজান্তে তাঁকে কষ্ট দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অভিমান না করে এগিয়ে যান, জানতে চান, প্রয়োজনে ‘সরি’ বলুন।

সব কথার শেষ কথা: বন্ধুত্ব মানে নানা রঙের ভালো লাগা মুহূর্তের এক দারুণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু কিছু খারাপ লাগার অভিজ্ঞতাও এ বন্ধুর সঙ্গেই হতে পারে। তবে সেই নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে ‘সামান্য’ করে দেখা বা ক্ষণস্থায়ী করার দায়িত্ব আপনারই। কারণ, দীর্ঘদিনের ‘আহা’র মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া এ বন্ধুর সঙ্গেই সামনের দিনগুলোতে আরও চমৎকার ও উষ্ণ অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করে আছে।
বন্ধুত্বে ফ্যাশন
ফ্যাশনের সঙ্গে বন্ধুত্বের কি সম্পর্ক! বন্ধুত্বে কি ফ্যাশন গুরুত্বপূর্ণ! না- ব্যাপারটা তা নয়। একজন মানুষের জীবনযাপন, চিন্তা-ভাবনা, আচরণ এমনকি ফ্যাশন সচেতনতা প্রভাব ফেলে কাজ কর্ম, চলাফেরা, বিশ্বাস ও জীবনবোধে- যা বন্ধুত্বের অনেক বড় একটা অংশ। তবে বন্ধু দিবসে কেন অনুপস্থিত থাকবে ফ্যাশন সচেতনতা?
ফ্যাশনের সঙ্গে বন্ধুত্বের কি সম্পর্ক! বন্ধুত্বে কি ফ্যাশন গুরুত্বপূর্ণ! না- ব্যাপারটা তা নয়। একজন মানুষের জীবনযাপন, চিন্তা-ভাবনা, আচরণ এমনকি ফ্যাশন সচেতনতা প্রভাব ফেলে কাজ কর্ম, চলাফেরা, বিশ্বাস ও জীবনবোধে- যা বন্ধুত্বের অনেক বড় একটা অংশ। তবে বন্ধু দিবসে কেন অনুপস্থিত থাকবে ফ্যাশন সচেতনতা? একই রকম সাজ পােশাক বন্ধুদের মধ্যে নতুন নয়। কিন্তু তা যদি হয় বন্ধু দিবসে, বন্ধুর সঙ্গে রসায়ন খুব সহজেই তুলে ধরা যায় সকলের সামনে। একই রঙ, ডিজাইন, ধরণ কিংবা একই পোশাক পরে বন্ধু বা বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিতি খুব সহজেই নজর কাড়বে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মহল্লা কিংবা বেড়ানোর জায়গায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়