গরমে পুড়ছে নগর, কখন নামবে বৃষ্টি

আগের সংবাদ

ইস্যু যাই হোক টার্গেট সংখ্যালঘু

পরের সংবাদ

গরমে সাইক্লিং : যা জানা জরুরি

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ডা. আশরাফুন্নাহার চৈতী

সুস্বাস্থ্যের জন্য সাইকেল চালানো ভালো অভ্যেস। একারণে ইদানিং অনেকেই ঝুঁকছে সাইক্লিংয়ে। সাইক্লিং মূলত অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, যাতে ঘাম ঝরা, হার্টবিট বাড়া, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেহের কোষকলা সুস্থ রাখে।
নিয়মিত সাইকেল চালানো মাংসপেশির গঠন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে; সাইকেল চালালে শরীরে বিপাকের হার বৃদ্ধি পায়, এতে ওজন কমে দ্রুত; উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সাথে হৃদ?রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তবে বেশি গরম ও রোদে সাইকেল রাইডের নেতিবাচক দিকও রয়েছে।

গরমে সকাল পেরুনো দুপুরে সূর্যের সোনালি রশ্মিতে আশেপাশের পরিবেশ দেখতে চমৎকার হয়ে গেলেও রাইডারদের জন্য রাইডিং হয়ে ওঠে কষ্টসাধ্য। তা হোক গরমে মোটরসাইকেল রাইডিং কিংবা সাইকেল। নিয়মিত সাইকেল চালালে মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পায়; শরীরের নি¤œাংশের পায়ের মাংসপেশি মজবুত হয়। তবে, সাইক্লিং আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং কারণ এতে নিজের শরীর থেকে প্রচুর ক্যালরিও খরচ করতে হয় রাইডের সময়।
তাই গ্রীষ্মকালীন সময়ে রাইডিং করতে গিয়ে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন না করলে হতে পারে ডিহাইড্রেশন এবং আল্ট্রা ভায়োলেট ড্যামেজের মত ক্ষতিকর ব্যাপার। ডিহাইড্রেটিং মূলত মানব দেহের মেটাবলিক রেটের (বেশি পরিশ্রমে বেশি ঘেমে যাওয়া এবং তা শরীরে খাদ্য থেকে উৎপাদিত ক্যালরির থেকে বেশি) সাথে সম্পর্কিত। একই সাথে রোদের তাপে এবং উষ্ণ বাতাসে আরো বেশি ঘেমে যাওয়া এবং শুষ্কতা ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই গরমে সাইকেল রাইডিং এ বিশেষ সাবধানতা দরকার।

আগে থেকেই প্রশিক্ষণ
আপনি পর্যাপ্ত পানি এবং তরল পান করতে পারেন, সঠিক গিয়ার, এক্সেসরিজ এবং ড্রেসের সমন্বয়ে রাইড শুরু করতে পারেন, তবুও আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকবে যদি না আপনার গরমকালে অত্যাধিক তাপমাত্রায় রাইডিং এর ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ নেয়া না হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণের সময় ঘেমে যাওয়া শরীর আপনাকে গরমে রাইড করার জন্য প্রস্তুত করে তুলবে। আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই শরীর থেকে সঠিক মাত্রার হরমোনাল টুইকস ঘটতে শুরু করবে যা পরবর্তীতে রাইডিং এর সময় শরীর থেকে তরল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবে।

পান করুন পাানি এবং তরল
হাইড্রেশনের জন্য রাইডে যাওয়ার পূর্বে, রাইডিং এ, রাইডের পরে তিনটি পর্যায়ই অতি গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ রাইডার রাইডের পূর্বে এবং রাইডিং এ কম পানি এবং তরল পান করে, এ ক্ষেত্রে তাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, পেট ভরা থাকলে সাইক্লিং কষ্টকর। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবারে তৈরি ক্যালরি শরীরে না থাকলে এবং পর্যাপ্ত পানি এবং তরল ক্যালরি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে না পারলে রাইডারের জন্য তা আরো বেশি ক্ষতিকর। তাই রাইডের পূর্বে পর্যাপ্ত পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হবে। রাইডে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে থামতে হবে এবং পানি পান করতে হবে। পানির সাথে খাবার স্যালাইন সাথে রাখলে।

রোদ থেকে বাঁচতে সুরক্ষা
রাইডারদের অসুস্থ হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ সূর্যের বিকিরণ। সানস্ক্রিন ক্রিমের আস্তরণ হয়তো চামড়াকে কিছু সময়ের জন্য রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে, তবে তাও চিরকালীন নয়। ঘামের সাথে সানস্ক্রিনও ঝরে পড়ে যায় কিছু সময় পরই।
ভাল সানস্ক্রিন দেয়ার পর বড়জোর দুই ঘন্টার জন্য ত্বক সুরক্ষিত থাকে, তাই সাথে সানস্ক্রিন ক্রিম রাখা ভালো। রোদ থেকে বাঁচতে তাই পর্যাপ্ত পোশাক প্রয়োজন। ছইওয়ালা টুপি বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, শরীর খোলা থাকে এমন ড্রেস রাইডিং এর জন্য ভাল গরমকালে। গরমকালে রোদের সরাসরি তাপ যাতে শরীরে না লাগে এবং বাতাস দেহের ত্বককে দ্রুত শুষ্ক করতে না পারে, সেজন্যই পাতলা কিন্তু শরীর ঢেকে থাকে এমন কস্টিউম বেশি উপকারী। ঘেমে যাওয়া এবং তা দ্রুত শুকিয়ে যাওয়া ডিহাইড্রেশনকে ত্বরান্বিত করে।

সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় রাইডিং
সপ্তাহে অন্তত একদিন মধ্য দুপুরে যখন সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে, তখন রাইডে বেরুনো উচিৎ, প্রথম দিনে অল্প সময়ের জন্য এবং ধীরে ধীরে সময় এবং দূরত্ব বাড়ানো যেতে পারে। প্রথম দিকে এ ধরণের প্রশিক্ষণ ভীষণ কষ্টকর এবং অস্বস্তিকর মনে হলেও পরবর্তী এই অভ্যাসটাই ভীষণ কাজে লাগবে।

ফিট থাকুন সবসময়
নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এমনিতেই শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমতে থাকবে, অতিরিক্ত চর্বি এমনিতেই শরীরকে অল্পতে ক্লান্ত করে ফেলে। অন্য দিকে গরমও অনুভূত হয় বেশি চর্বির কারণে। সুতরাং অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফিট থাকার মাধ্যমে গরমে রাইডিং হতে পারে তুলনামূলক কম কষ্টকর এবং বেশি আনন্দদায়ক। যখন আপনি রাইড করবেন, শুধু ফিটনেসের কথাই চিন্তা না করে বাহ্যিক পরিবেশে নিজে সহ্য ক্ষমতা কতটা, তাও বের করে নেয়া উচিৎ।

সঠিক সাইকেল নির্বাচন
সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক বাইক নির্বাচন। সিটের উচ্চতা, হ্যান্ডেলবার, পেডাল, ক্লিটসের অ্যালাইমেন্ট যেন প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের মাপ অনুযায়ী আরামদায়ক হয়; সাইকেল চালানোর আগে অবশ্যই ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ করে নিতে হবে, যা আমাদের সাইকেল চালানো থেকে সৃষ্ট আঘাত থেকে রক্ষা করবে; আঘাত অথবা অসুস্থতাজনিত কারণে সঠিক ফিটনেসে ফিরে আসতে চাইলে পর্যায়ক্রমে গতি বাড়ানো যেতে পারে। সম্ভব হলে প্রতিদিন অল্প হলেও সাইকেল চালানো ভালো।

মেনে চলুন আরো কিছু নিয়ম
১. পানীয়ের জন্য রাইডে যদি আপনার খুব সীমাবদ্ধ সুযোগ এবং সময় থাকে, তাহলে হিসেবটা জেনে রাখুন, প্রতি চার ঘন্টায় গরমে শরীরে প্রায় ৭৫০ এমএল ঘাম বের হয়ে যায়। সে অনুযায়ী পানি ও তরল পানের সময় সুযোগ বের করে নিন।
২. মধ্যবর্তী বিশ্রামের সময় অবশ্যই ছায়ায় থামার চেষ্টা করুন।
৩. অবশ্যই অ্যালকোহল এবং কফি জাতীয় পানীয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে হবে।
৪. রাইডিং এর সময় যদি রাস্তার পাশে গাছ থাকে এবং ছায়াতে চালানোর সুযোগ থাকে, অবশ্যই তা ব্যবহার করুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়