বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ন : এমপি হারুনের নোটিস নাকচ করলেন স্পিকার

আগের সংবাদ

ঢাকার তৃণমূলে আ.লীগের পদ পেলেন ৫৪ হাজার কর্মী : থানা-ওয়ার্ডে পদ পাচ্ছেন আরো সাড়ে ১২ হাজার > সংগঠন গোছাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নগর নেতারা

পরের সংবাদ

মৌলভীবাজার : চা শ্রমিকদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে মৌলভীবাজারের রাজনগরে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আকস্মিক গত শনিবার থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবুজবাগ, হবিগঞ্জ সড়কসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির মোবাইলে ৫ হাজার ৩৯ টাকা করে বিকাশ আসতে শুরু করে।
আর বিকাশ আসার পরপরই শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ রোডের সেলুন কাম বিকাশ ব্যবসায়ী ঝুমুর বৈদ্য তাদের কাছে গিয়ে বলেন, তার বিকাশ কোম্পানির টাকা ওই নম্বরে চলে গেছে। তাদের নম্বরে ফরোয়ার্ড করে দিতে। অনেকে দিয়েছেন কেউ কেউ গড়িমসি করেন। এতে ঝুমুরের সঙ্গে শুরু হয় কথা কাটাকাটি।
একসঙ্গে অনেক মানুষের মোবাইলে বিকাশ গেলে বিষয়টি নিয়ে অনেকের সন্দেহ হয়। এ সময় সবার চাপে ঝুমুর বৈদ্য জানান, রাজনগর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কর্মরত উপজেলা চেয়ারম্যানের সিএ অনুপ দাশ তার কাছে কিছু নম্বর চান। যে নম্বরগুলোতে ৫ হাজার করে টাকা আসবে বলে জানান। না হলে তার টাকাগুলো পাওয়া যাবে না। ঝুমুর রাজি হলে কয়েকজন ব্যক্তির নম্বর সংগ্রহ করে দেন। তারা দুজন মিলে সবুজবাগ ও হবিগঞ্জ সড়কের প্রায় ৩৬ জনের মোবাইল নম্বর দেন। পরবর্তী সময়ে গত শনিবার থেকে এই নম্বরগুলোতে ৫ হাজার ৩৯ টাকা করে আসতে শুরু করে।
শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ আবাসিক এলাকার দেব দুলাল চক্রবর্তী জানান, তার মোবাইল নম্বরে ৫ হাজার ৩৯ টাকা বিকাশ আসে। পরে বিকাশ ব্যবসায়ী ঝুমুর বৈদ্য তাকে ফোন করে জানান যে তার বিকাশের একটি পেমেন্ট তার মোবাইল নম্বরে আনিয়েছে সেটি তার নম্বরে ফরোয়ার্ড করে দিতে।
একইভাবে ঝুমুরের পাশের আরেক বিকাশ ব্যবসায়ী শুভ ভট্টাচার্য্য জানান, তার মোবাইলেও ৫ হাজার ৩৯ টাকা আসে। ঝুমুর তাকে ফেরত দিতে বলে। তিনি তা দিতে একটু বিলম্ব করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন গাড়িচালক তাদের মোবাইলে বিকাশের একই মেসেজ নিয়ে টাকা তুলতে যান। তখনই বিষয়টি সন্দেহ হয়। পরে তারা সবাই মিলে ঝুমুর বৈদ্যের কাছে গেলে ঝুমুর রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সিএ অনুপ দাশের নাম বলেন। অনুপ দাশের অনুরোধে এই কাজ করছেন। শুভ ভট্টাচার্য্য বলেন, তিনি ঝুমুরের কাছ থেকে সে টাকা আর তার মোবাইলে ফেরত আনেন। প্রকৃত মালিক যখন তার কাছে ফেরত চাইবেন তখন ফেরত দেবেন। একই কথা জানান, টাকা পাওয়া অন্যরাও। টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন শ্রীমঙ্গল সবুজবাগের অসীম দাশ, হবিগঞ্জ সড়কের মোবারক মিয়া ও সুমন মিয়াসহ আরো অনেকে। টাকাপ্রাপ্তদের মোবাইলের মেসেজে দেখা যায়, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ৫ হাজার টাকার জন্য চা শ্রমিকদের মোবাইলে যে মেসেজ যাচ্ছে এটিও একই রকম।
এ ব্যাপারে জানতে অনুপ দাশকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার অফিসে সাংবাদিকরা গেলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষক মো. আবুল কাশেম জানান, মৌলভীবাজার জেলায় ২৮ হাজার ৫৪৯ জন চা শ্রমিকের জন্য তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে বিশেষ বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রকাশ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার অফিস থেকে ৪ হাজার ১০ জন চা শ্রমিকের জন্য ৫ হাজার টাকা করে পাঠানো হয়েছে। আর এই তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, চা বাগান সভাপতি ও বাগান পঞ্চায়েত। তাদের স্বাক্ষর করা তালিকাতেই তারা টাকা ছেড়েছেন। এ সময় যেসব বিকাশ নম্বরে টাকা এসেছে এ রকম কিছু মোবাইল নম্বর তাকে দিলে তিনি তার তালিকা চেক করে ওই নম্বরগুলো তাদের তালিকায় নেই বলে জানান।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ রকম কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আজই জেনেছেন। বিষয়টি দেখার জন্য তিনি সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেছেন।
এদিকে রাজনগর উপজেলায় চা শ্রমিকদের বরাদ্দকৃত নামের তালিকায় এই নামগুলো না থাকায় এটি কোনো উপজেলার চা শ্রমিকদের টাকা এ চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই টাকা কোনো না কোনো এলাকার তো অবশ্যই হবে। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়