বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ন : এমপি হারুনের নোটিস নাকচ করলেন স্পিকার

আগের সংবাদ

ঢাকার তৃণমূলে আ.লীগের পদ পেলেন ৫৪ হাজার কর্মী : থানা-ওয়ার্ডে পদ পাচ্ছেন আরো সাড়ে ১২ হাজার > সংগঠন গোছাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নগর নেতারা

পরের সংবাদ

নীলফামারীতে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুল আহসান কল্লোল, নীলফামারী থেকে : জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো টেকসইকরণ (এইচবিবি) কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা না মেনে কাজ করায় সড়ক নির্মাণের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় সড়ক ধসে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে সড়কগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ ২ প্রকল্প সংলগ্ন স্থানে প্রায় ৩শ মিটার সড়ক পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো টেকসইকরণের লক্ষ্যে বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ ২ প্রকল্প থেকে ক্যানেল হয়ে উত্তর দুরাকুটি ২৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক হাজার মিটার রাস্তা এইচবিবিকরণে বরাদ্দ ধরা হয় ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
মাগুড়া ইউনিয়নের পূর্বপাড়া থেকে বাংলাবাজার অভিমুখে ৫০০ মিটার এবং পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া থেকে কালিকাপুর মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অভিমুখে ৫০০ মিটারসহ মোট এক হাজার মিটার সড়ক এইচবিবিকরণের জন্য ৫২ লাখ ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দুটি পায় কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নোমান এন্টারপ্রাইজ এবং নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মেসার্স সিনান ট্রেডার্স। গত মে মাসের ১৯ তারিখে সড়ক নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ ২ প্রকল্প সংলগ্ন সড়কটির এইচবিবিকরণ কাজ চলমান রয়েছে। সড়কটির নির্মাণ কাজের সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক একজন তদারকি কর্মকর্তা থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা, রবিউল ইসলাম, সাজ্জাদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির নির্মাণকাজে কোনো তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে সড়কটির বক্স কাটিং করে দুই থেকে তিন ইঞ্চি বাদ রেখে সড়কের সলিং বিছিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এইচবিবিকরণ কাজ করছেন। সড়কের সলিং করার আগে সঠিকভাবে সড়কটির মজবুতিকরণ করার কথা কিন্তু ঠিকাদার তা করছেন না। ফলে সড়কটি নির্মাণ শেষ হতে না হতেই বেশ কয়েকটি জায়গায় ধসে গেছে। তাছাড়া সড়কটির নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাগুড়া ইউনিয়নের পূর্বপাড়া থেকে বাংলাবাজার অভিমুখে সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ সময় দেখা যায় সড়কটির নির্মাণের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাঝে সড়কের ১০ থেকে ১৫টি জায়গায় ধস নেমেছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আনিছুল ইসলাম ও আকবর হোসেন বলেন, সড়কটি নির্মাণের সময় বালু দিয়ে সঠিকভাবে মজবুতিকরণ না করার ফলে নির্মাণের কয়েকদিনের মাথায় বিভিন্ন জায়গায় ধসে গেছে। এছাড়া সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়কে গিয়ে দেখা যায়, গত ২৯-৫-২০২২ তারিখের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার নির্দেশ থাকলেও ঠিকাদার সড়কটি খুঁড়ে রেখেই দায় সেরেছেন। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কে হাঁটু পরিমাণ কাদাপানি জমে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই সড়কটি সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি বলেন, টিআরের বরাদ্দের টাকায় আমি সড়কের দুপাশে মাটি ফেলেছি।
তিনি আরো বলেন, জলঢাকা উপজেলার জিকরুল হক জিকো নামে এক ঠিকাদার সড়কটি খুঁড়ে রেখে চলে গেছেন।
একই সড়কে কীভাবে দুটি বরাদ্দ হলো জানতে চাইলে ওই ইউপি সদস্য বলেন, এটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিষয়, আমি কীভাবে বলব।
বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সংলগ্ন সড়ক নির্মাণকাজের ঠিকাদার মেসার্স সিনান ট্রেডার্সের মালিক বাবুর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কাজটি আমি করছি না। কিশোরগঞ্জ উপজেলার রতন নামে একজনের কাছে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছি।
রতন মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কথা হয় মাগুড়া বাংলাবাজার এবং পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদার জিকরুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মাগুড়া ইউনিয়নের বাংলাবাজার সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছি।
পুটিমারী ইউনিয়নের সড়কের কাজ এখনো শুরু করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনারা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত সরকার বলেন, বাহাগিলি ইউনিয়নের ৩শ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। ওই অংশটুকুতে পুনরায় কাজ করানো হবে।
মাগুড়া বাংলাবাজার এবং পুটিমারী শাহপাড়া সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।
একই সড়কে কীভাবে দুটি বরাদ্দ দিলেন প্রশ্ন করলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দেননি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, বাহাগিলি ইউনিয়নের ৩শ মিটার সড়ক পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছি। বাকিগুলো পরিদর্শনপূর্বক কোনো অনিয়ম পেলে বিল দেয়া হবে না।
পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়কটিতে একই অর্থবছরে কীভাবে দুটি বরাদ্দ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়