টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

চিরচেনা শিমুলিয়া ঘাটে এখন সুনসান নীরবতা

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তাজুল ইসলাম রাকিব, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে : স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে শিমুলিয়া ঘাট তার চিরচেনা রূপ হারিয়েছে। ফেরিঘাট এলাকায় নেই কোনো যানবাহন। স্পিডবোট ও লঞ্চঘাটেও নেই যাত্রীদের পদচারণা। নেই স্পিডবোট চালক ও লঞ্চের চালকদের ডাকাডাকি। যানবাহন ও যাত্রীশূন্য ঘাটে নেই সেই কোনো কোলাহল।
গতকাল সোমবার সকালে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অলস পড়ে আছে এত দিন পদ্মায় দাপিয়ে বেড়ানো স্পিডবোট, লঞ্চ ও ফেরিগুলো। ফাঁকা পড়ে আছে সারি সারি খাবারের দোকান। লঞ্চঘাটেও নেই যাত্রীদের চাপ। স্পিডবোট ঘাটেও নেই যাত্রীদের আনাগোনা। সারি সারি যানবাহন, ফেরি ও লঞ্চের ভেঁপুর শব্দ আর লোকজনের কোলাহলে মুখরিত শিমুলিয়া ঘাট যেন আজ বিরাণভূমি। পদ্মায় দাপিয়ে বেড়ানো ফেরিগুলো বসে আছে তিন দিন ধরে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চালকরা ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না কোনো যাত্রীর দেখা। অলস সময় কাটছে তাদের।
ব্যস্ত ঘাটে ব্যস্ততা হলো প্রতিদিনকার চিত্র। কিন্তু আজ ঘাট বন্ধ, গাড়ি নেই, নেই যাত্রী। সেই সুযোগে যেন একটু শান্তির বিশ্রাম। সারি সারি খাবারের দোকানেও নেই তেমন ভিড়। যেন এত দিনের ক্লান্তিতে একটু ঝিমিয়ে নিচ্ছে। লঞ্চ ঘাটে নেই সেই চিরাচরিত দৃশ্য।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুশি ঘাটসংশ্লিষ্ট সবাই। শিমুলিয়া-মাঝিবাড়ী নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চের সারেং নেয়ামত আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মনটা আনন্দে ভরে গেছে। আমরা অনেক খুশি। বহু বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা নানা ভোগান্তি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি পারাপার ও লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতেন। এখন ঘাটে যাত্রী নেই, সারা দিনে একটা টিপ দিতে পারছি না। যে পরিমাণ যাত্রী হচ্ছে এতে তেলের টাকাও উঠছে না। এত বছর লঞ্চে যাত্রী পারাপার করেছি, সেই মায়ায় এখনো ঘাটে আছি। বোটচালক মো. আল আমিন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিনও ঘাট এলাকায় যাত্রী ছিল। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীরা আর ঘাটে আসছেন না। তিনি আরো বলেন, মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতেন পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায়। উত্তাল পদ্মা নদীতে ছিল দুর্ঘটনার শঙ্কা। এখন পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র ৫ মিনিটে যাত্রীরা চলে যাবেন নদীর ওই পাড়ে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের পদ্মা

পারাপারের ভোগান্তির অবসান হয়েছে। শিমুলিয়া ঘাটের হোটেল মালিক সামসুল মোল্লা জানান, আগে হোটেলে দিন-রাত ইলিশ ভাজা, মাছ, মুরগি বিক্রি করতাম। এখন সারা দিনে টুকটাক বিকিকিনি করি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঘাট এলাকায় দক্ষিণবঙ্গের কোনো যাত্রী আসা-যাওয়া করছেন না।
তিনি আরো জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর সেতু এলাকায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। শিমুলিয়া এলাকায় বহু অভিজাত খাবার হোটেল রয়েছে। সেখানে দর্শনার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা এখন বিকিকিনি করতে পারছি না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, সকাল থেকেই লঞ্চ-স্পিডবোট যথানিয়মে চলাচল করছে। তবে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। ভোরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ যাতায়াত করছেন। বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৮৬ সালে লৌহজং উপজেলার মাওয়ায় ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। পদ্মা সেতু চালু হলো, এখন থেকে ঘাটের লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে বিভিন্ন রুটে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে লঞ্চ ও স্পিডবোট মালিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রুট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়