টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

কুড়িগ্রামে ত্রাণ নয় স্থায়ী সমাধান চাই

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার পর দেশ যতটা এগোনোর কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালির একাধিক স্বপ্নের বাস্তব রূপ দান করেছেন তিনি। বাংলাদেশের জন্য অকল্পনীয় এমন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। আগামীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা মেট্রোরেল প্রজেক্টসহ আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এমন উন্নয়নের মাঝেও কিন্তু এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম নিজে অনুন্নত থেকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে অনুন্নতির দিকে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, ‘ব্রহ্মপুত্র নদী দিয়ে দেশে ৩ হাজার ৯৯০ কিউসেক পানি প্রবেশ করে, যা মোট পানি প্রবেশের বা মোট অন্তঃপ্রবাহের ৬৯ শতাংশ।’ ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সুতরাং এটি বলাই যায় যে পানির সর্বোচ্চ চাপ কুড়িগ্রাম জেলার ওপর পড়ে। শুধু কি ব্রহ্মপুত্র? ব্রহ্মপুত্র ছাড়াও তিস্তা, ধরলাসহ ছোট-বড় মোট ১৪টি নদী এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। যদিও গ্রীষ্ম ঋতুতে অধিকাংশ নদী শুকনা থাকে, তবে বর্ষা ঋতুতে অপ্রত্যাশিত পানির প্রবাহ বেগে হয়ে যায় টইটম্বুর। প্রয়োজনের তুলনামূলক অতিরিক্ত পানির প্রবেশ এবং নদীগুলো যথেষ্ট গভীর না হওয়ায় অতিরিক্ত পানির প্রবাহ বেগে প্রতি বছর দেখা দিচ্ছে বন্যা। বন্যাবিধ্বস্ত হয়ে অনেকে দরিদ্র থেকে চরম দরিদ্রতায় পড়ছে।
আমাদের গ্রামে প্রচুর বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ঢাকায় একটানা ৩ মাসে ৩ বারও লোডশেডিং দেখিনি। কুড়িগ্রামে বাসায় একদিনে ২৩ বারও লোডশেডিং দেখতে হয়েছে। কিছুদিন আগের কথা, সারাদেশে বিদ্যুৎ চাই! বিদ্যুৎ চাই! হাহাকার এক অবস্থা। নাম না জানা একজন নেতা কুড়িগ্রামে আছেন। ওই নেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে আপনার জেলায় কি বিদ্যুৎ চান না? উনি জবাবে বলেছিলেন সারাদেশ বিদ্যুৎ চায় আর আমার কুড়িগ্রামে কেন বিদ্যুৎ না যায় (লোডশেডিং না হওয়া) এটি নিয়েই জনগণ উদ্বিগ্নচিত্তে থাকে। লোডশেডিং না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে তদন্ত কমিটি তুলনামূলক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এরপরে থেকেই ২৪ ঘণ্টায় ২৩ বার লোডশেডিং হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ভুরুঙ্গামারীতে গোটা উপজেলায় বিদ্যুৎ চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। কিন্তু ৯ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার পথঘাটের অবস্থা বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের মতো করুণ। বিষয়টা আরো সহজ করলে বলা যায়, উল্টো ঘোড়ার পিঠে চলছে কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম জেলার জন্য কী প্রয়োজন? কুড়িগ্রামের নেতারা কতটুকু জানেন এটিই প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের সময় নেতাদের দেখা মিললেও নির্বাচিত হওয়ার পরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যে নেতাকে জনগণের পাশে পাওয়া অসম্ভব, তিনি যে জনগণের সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকবেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সহজ স্বীকারোক্তি, অপ্রিয় সত্য কথা সবাই স্বার্থান্ধ। নিজের বেলায় চাইতে কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু জনগণের জন্য চাইতে গেলেই আমাদের নেতাদের লজ্জা লাগে। যদিওবা কিছু অনুদান সরকার কর্তৃক আসে সেটি কি কুড়িগ্রামের জনগণ পায়? এবার আসুন একটু অন্যদিকে নজর দেয়া যাক।
দেশে একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চল এবং কুড়িগ্রামে বন্যা দেখা দিল। পুরো দেশ সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়াল, আমরা এতে অসন্তুষ্ট নই। কারণ এটি আবশ্যিক, কিন্তু কষ্টটা এখানে প্রতি বছর বন্যা, নদীভাঙন ও অন্যান্য নানারকম প্রতিকূলতাপূর্ণ অঞ্চল কুড়িগ্রাম সম্পর্কে কেউ কিছু বলল না। কেন এমন বিমাতাসুলভ আচরণ কুড়িগ্রামের সঙ্গে? এই জেলার মানুষগুলো বেশি সহজ-সরল বলে কি এদের ভালো থাকার কোনো অধিকার নেই? কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য থাকা সত্ত্বেও এখানে বাজেটের বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই কেন? জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন, কুড়িগ্রামের জন্য প্রতি বছর বন্যা প্লাবিত সময়ে যৎসামান্য ত্রাণ চাই না, আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। কুড়িগ্রামের নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোকে বন্যার কবল থেকে বাঁচানো জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই।

আশরাফুল মুহাম্মদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়