সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

নগরী থেকে নেমেছে পানি, বাড়ছে ডায়রিয়া চর্মরোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট অফিস : চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকেই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে প্রধান প্রধান নদীর পানি বেড়ে এক রাতের মধ্যেই প্লাবিত হয় সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই মহানগরীর অন্তত ৭টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়। এ ছাড়া আংশিক প্লাবিত হয়েছে অন্তত আরো ১০টি ওয়ার্ড। প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের বন্যা দুর্ভোগ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।
নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে তলিয়ে যায় বাসাবাড়ির নিচতলা, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাসপাতাল। তবে বন্যা শুরুর ১১তম দিনে এসে বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। দুয়েকটি নিচু এলাকা বাদে বেশির ভাগ এলাকাতেই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপশহর, তেররত, মাছিমপুর, ছড়ার পাড়, কালীঘাট, তালতলাসহ বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। তবে অনেক জায়গায় গলি রাস্তাগুলোতে এখনো পানি। যান চলাচল স্বভাবিক হলেও জমে থাকা পানিতে ময়লা-আবর্জনায় উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব থেকে তৈরি হচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
গতকাল রবিবার সিলেটের শাহজালাল উপশহরে গিয়ে দেখা যায়, দিন পাঁচেক আগেও যেখানে যান চলাচলের পরিবর্তে চলেছে নৌকা, সেই সড়ক এখন একেবারেই শুকনো, ঝকঝকে। স্বাভাবিকভাবেই চলছে যানবাহন, খুলেছে দোকানপাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা। গত দিন দশেকের পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ নিজ আঙিনা পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বেশির ভাগ স্থানীয় বাসিন্দা। দোকানপাট খুললেও পানিতে নষ্ট হওয়া জিনিসপত্র সরাচ্ছেন অনেকে। অনেকেই আবার পানিতে ভেসে আসা আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত।
এ সময় কথা হয় উপশহর সি-ব্লকের মুদি দোকানদার মজনু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, টানা ১০ দিন

দোকানে কোমর সমান পানি ছিল, কোনো মালপত্র বের করতে পারিনি। এখন গত দুই দিন ধরে দোকান পরিষ্কার করছি। তবে পানি কমলেও আমাদের দুর্ভোগ শেষ হয়নি। চাল, ডাল, পেঁয়াজ-রসুনসহ অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন দোকান আবার নতুন করে সাজাতে হবে। দুই দফা বন্যায় একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল। কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না। তাছাড়া ছড়ার ময়লা-আবর্জনা এসে দোকানে ঢুকে বিকট গন্ধ ছড়াচ্ছে।
নগরীর ছড়াপাড় এলাকার বাসিন্দা শ্যামল দাসের কাপড়ের ব্যবসা। ঘরের আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। রোদে শুকাচ্ছেন বিছানাপত্র। ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে শ্যামল বলেন, ৭ দিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। বিছানা, বালিশসহ আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘরের মেঝে থেকে পানি নামলেও গলিতে পানি রয়ে গেছে। গলির পানিতে ড্রেনের ময়লার স্তূপ জমে আছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা যাচ্ছে না। ব্লিচিং পাউডার দিয়েও দুর্গন্ধ কমছে না।
তবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে সেসব এলাকায় ইতোমধ্যে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিসিকের একার পক্ষে এত বড় এলাকাজুড়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো কঠিন। তাই সবাই যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি তাহলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে নগরী।
ডা. জাহিদ আরো বলেন, বন্যা-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের ২১ জনের একটি মেডিকেল টিম রয়েছে, যারা ওয়ার্ডভিত্তিক মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন। যেখানে পানি নেমে গেছে সেখানেই আমরা মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের ওয়ার্ডভিত্তিক স্বস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে, যে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব হলেই যাতে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়