মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার মধ্যবিত্তরা

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মধ্যবিত্তরা এখন ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার। বৈষম্যমূলক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর সুরক্ষা বাজেটে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। সংগঠনটি বলছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতি এমন চাপের মুখে বা টানাহিঁচড়ার মধ্যে পড়েনি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থান এবং অতিমারির সঙ্গে এবারে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এবার দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং প্রকৃতি- এ তিনটি একসঙ্গে মিলে এবারের অর্থবছরের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে। এ বিরূপতাকে মোকাবিলা করতে অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা এবং একই সঙ্গে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন অনেক বেশি প্রয়োজন পড়বে।
রবিবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনের সম্মেলন কক্ষে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড.?? দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপ সদস্য এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট এন্ড কোয়ালিটি পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ এবং বনানী বিশ্বাস, অভিযান নির্বাহী পরিচালক। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ মূহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিত্বহীন, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও তাদের অভিভাবক নেই। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর ছয়টি চ্যালেঞ্জ নিরূপণ করা সঠিক হলেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি সুবিন্যাস্ত, চিন্তাশীল, কার্যকর কৌশল বাজেটে নেই বলে জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৯ সালের অবস্থানে আমরা এখনো ফেরত যেতে পারিনি। যদিও অর্থমন্ত্রী বলছেন, অতিমারি পার হয়ে গেছে। আমরা বার বার বলেছি, স্বাস্থ্যগতভাবে অতিমারি পার হলেও আর্থসামাজিক তাৎপর্য বা যে প্রভাব মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবনে পড়েছে সেটা এখনো কেটে যায়নি। এজন্য ন্যূনতম আরো দুই-তিন বছর সময় লাগবে।
বাজেট পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য মূল্যস্ফীতিকে মূল সূচক হিসেবে ধরতে হবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্বৈত বিনিময় হার এবং সুদের হারে সমতা আনতে হবে। এর পাশাপাশি বাজেটে কৃষি খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং টিসিবিকে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। সাধারণত নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক অভিঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের আয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ে না। আগামী অর্থবছরে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে ভর্তুকি বাড়ানোর সুযোগ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বেশি হতে হবে, যেটি এই অর্থবছরে কমে গেছে।
তিনি বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হলেও এর এক বড় অংশ বিদ্যুৎ খাতে চলে যাওয়ায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা তেমন সুবিধা পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দেও দরিদ্ররা উপেক্ষিত থাকছেন। গত এক দশকে গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হলেও এর বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি

চার্জে। সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ও বাজেটের আকারের তুলনায় কমেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত বরাদ্দ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫০০ টাকার ভাতায় একটা পরিবার বা দুস্থ মানুষের কিছুই হয় না। যুবকদের ভাতাও চালু হয়নি। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে খুবই সামান্য। তিনি আরো বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সুদ, পেনশন, প্রকল্প সহায়তাসহ এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলোর সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় দেখানো সংগত নয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও এ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। এ লক্ষ্যে আইনেরও দরকার রয়েছে। এ আইন সামনে রেখে যে বরাদ্দ দরকার তা আমার চোখে পড়েনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব ও প্রশাসনবান্ধব হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে এবারের বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আমরা একটি জনবান্ধব বাজেট পাব। কিন্তু এ বাজেট হয়েছে দুর্নীতি ও অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় ও বৈধতা দেয়ার বাজেট, একটি সংবিধানবিরোধী বাজেট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়