উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

সুজনের সম্মেলন : রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে ২১ দফার জাতীয় সনদ

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২১ দফার জাতীয় সনদ ঘোষণা করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। জাতীয় সনদ উত্থাপন করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনে সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে এই সনদ উত্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হবে একটি স্বল্প মেয়াদের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং আগামীতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা এই ঐকমত্যের সনদ বাস্তবায়ন করবেন। আবার আর যেন একদিনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়।
সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে সুশীল সমাজের ওতপ্রোত যোগাযোগ রয়েছে।
যে দেশে সুশীল সমাজ গড়ে ওঠেনি সেদেশে গণতন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল। বাংলাদেশের অস্তিত্বের নির্যাস হলো গণতন্ত্র।
আকবর আলী খান বলেন, আমরা চার দফার দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। যে চারটি দফা আছে তার সবগুলোর পেছনে রয়েছে গণতন্ত্র। প্রথমে রয়েছে জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ গণতান্ত্রিক ধারায় গড়ে উঠেছে। আমরা বলছি আমরা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ে তুলব। তাও গণতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই সেখানে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর সবশেষে আমরা যে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সে সমাজতন্ত্র মানুষের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলা, সেটাও গণতন্ত্র ছাড়া সম্ভব না।
তিনি বলেন, দুঃখের বিষয়- আজকে পৃথিবীর অনেক স্থানে গণতন্ত্র ধ্বংসের পথে। কোথাও কোথাও গণতন্ত্রের উত্তরণ হচ্ছে, আবার কোথাও ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আর এই দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলাদেশ পড়ে। তিনি বলেন, এদেশে গণতন্ত্রের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, এদেশের যেসব সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সরকার ভোটের সংখ্যাধিক্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ভোটের সংখ্যাধিক্য মানে জনগণের মধ্যে সংখ্যাধিক্য হয় না। তাই পৃথিবীর অনেক দেশে প্রতীকী সংখ্যাগরিষ্ঠতার বদলে সমানুপাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফিরে যাওয়া হয়েছে। আকবর আলী খান বলেন, মোটামুটিভাবে দেশের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় একজনের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। সে কারণে তার জন্য সব দিকে সুন্দরভাবে দেখা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে আরো যেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে- যিনি দেশের বা রাষ্ট্রের প্রধান বা সর্বময় কর্তা তিনিই আবার রাজনৈতিক দলের নেতা। সুতরাং তাকে রাজনৈতিক দলের দিকে দেখতে হয়, এতে কতৃত্ববাদী শাসনের ফলে জনগণ অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে আমাদের দেশে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে কথা উঠছে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছে কিনা তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথমে এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও মেধার মূল্য দিতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ প্রকল্প নিতে হবে। আর জনগণই পারে রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আর কেউ পারে না।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কুমিল্লা নির্বাচনে হঠাৎ রেজাল্ট কেন পাল্টে গেল এটি রহস্যময় ঘটনা। তিনি বলেন, কুমিল্লায় ১০১টি কেন্দ্রের রেজাল্টে মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৬ শতাধিক ভোটে পিছিয়ে ছিল। তার পরে কেন রেজাল্ট প্রকাশ বন্ধ হলো তা বোধগম্য নয়। তার পরে মাত্র চারটি সেন্টারের ভোটে কীভাবে ৩৪৩ ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। এটা আমাদের কাছে পুরো অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক মনে হয়েছে। এটাকে মনিরুল হক সাক্কু চ্যালেঞ্জ করে কোর্টে যেতে চাইছে, কিন্তু ইভিএমে যদি কোনো কারসাজি হয়ে থাকে তা তো বোঝা যাবে না। কেননা এটাতো ব্যালটে ভোট নয়। যেখানে পুনঃগণনার সুযোগ থাকে। যা রেজাল্ট তাই গ্রহণ করতে হবে। সে কারণে কুমিল্লার ভোটে যা ঘটেছে তা ভৌতিক কাণ্ড, এটা অলৌকিক। এর ফলে ইসি সব প্রার্থীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, কুসিক নির্বাচনে ইসি তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনী এলাকা থেকে বাইরে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্মেলনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, দেশে যখন এক এক করে সমস্ত প্রতিবাদী সংস্থা গুটিয়ে যাচ্ছে। সংসদে বিরোধী দলের লোকেরা সরকারের সমর্থন দেয়। পৃথিবীর কোথাও এমন সিস্টেম নেই। যুগ যুগ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে সংসদীয় গণতন্ত্রের সিস্টেম চালু হয়েছে, এখানে তার ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। সাধারণকে প্রতিবাদ করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য সুশাসন জরুরি। গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী করতে হবে।
বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, বাংলাদেশে একনায়কত্ব থাকবে, মানুষের অধিকার থাকবে না, এর জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যেখানে অন্যায় হবে, তার বিরুদ্ধে আমরা কথা বলব। নাগরিক সংগঠনের কর্তব্যই এটা।
জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্য ঐকমত্যের ২১ দফা হলো- রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, নির্বাচনকালীন সরকার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অবসান, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন।
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সুজনের সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়