নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন : চট্টগ্রামের অধিকাংশ ডিপোতে নিয়ম নীতির কোনো বালাই নেই

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে অধিকাংশ বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা খুবই নাজুক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শন করে দেখা গেছে- ডিপোগুলোতে পণ্য রাখার ব্যবস্থাপনা, অগ্নিনিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে অসঙ্গতি-অনিয়ম রয়েছে। এককথায় ডিপোগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা মোটেই সন্তোষজনক নয়। পরিদর্শন প্রতিবেদন ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই কোন কোন ডিপোর কী কী সমস্যা রয়েছে- সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এমনটাই বলছিলেন ভোরের কাগজকে। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৭টি টিম নগরের ২৫টি কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন শেষে এমন চিত্র উঠে এসেছে বলে জানান তিনি। বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শনকালে ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন টিম।
গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের কন্টেইনার ডিপোগুলো পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। ২৫টির মধ্যে ২২টি কন্টেইনার ডিপো সচল রয়েছে। ৩টি কন্টেইনার ডিপো অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে গতকাল বুধবার পরিদর্শক দল তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনগুলো একসঙ্গে যুক্ত করে ঢাকা হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যেসব ডিপোতে অনিয়ম রয়েছে সেসব ডিপোগুলোকে সতর্ক করা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে ডিপোতে কন্টেইনার রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পরে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে। তিনি বলেন, ডিপোগুলোর ভেতর কী কী পণ্য রাখা আছে, কীভাবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যেসব ডিপোতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে কর্মরত শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অগ্নিনির্বাপণ দল, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দল (প্রতিটি দলে ৬ জন করে) গঠন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কন্টেইনার ডিপোতে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দল পরিদর্শন করে নানা অনিয়ম ও ত্রæটি খুঁজে পায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কোনোটির ডিপোগুলোতে পণ্য রাখার ব্যবস্থাপনা রয়েছে, কোনোটিতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল, কোনোটিতে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই, কোনোটিতে গার্মেন্টসপণ্য ভর্তি কন্টেইনারের পাশেই রাসায়নিক ভর্তি কন্টেইনার রাখা আছে। এছাড়া ডিপোগুলোতে নানা বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিএম কন্টেইনার ডিপোসহ সীতাকুণ্ডের আরো ৪টি ডিপো থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের ৬টি কন্টেইনার ডিপোর ৩টিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। পোর্ট লিংক কন্টেইনার ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কন্টেইনারগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা। রাসায়নিকে ভর্তি কন্টেইনারগুলো গার্মেন্টসপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য কন্টেইনারের সঙ্গে রাখা। কন্টেইনারগুলো পরিকল্পিতভাবে রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবেন বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক টিম। এছাড়া ডিপো ব্যবস্থাপনায় রাসায়নিকে ভর্তি কন্টেইনারগুলোকে অন্যান্য কন্টেইনার থেকে আলাদাভাবে রাখতে এবং এজন্য দেয়াল নির্মাণের মৌখিক নির্দেশ দেন টিমের সদস্যরা। এছাড়া নেমসন কন্টেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। বে লিংক নামে কন্টেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট ও সেফটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তারপর ডিপোর কার্যক্রম চালু করতে বলা হয়েছে।
গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০ জন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন দুই শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন ও লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি যথাযথ ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এজন্য চট্টগ্রামের সবকটি কন্টেইনার ডিপো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়