মির্জা ফখরুল : খালেদার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকেই

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ইসির ‘এসিড টেস্ট’

পরের সংবাদ

সহিংসতা হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল হবে : সিইসি > ইসিকে আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ টিআইবির

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আইনকানুন যেটা আছে, সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সংসদ নির্বাচনে প্রচণ্ড সহিংসতা হলে আমরা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে দেব, আমাদের সেই ক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া খুবই প্রয়োজন। যদি মূল বিরোধী দল নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচন স্বচ্ছ-অস্বচ্ছ যাই হোক, সেটার গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে যাবে। কারণ ডেমোক্রেসির মূল কথাই হচ্ছে পজিশন এবং অপজিশন।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনীকালীন সরকার, বর্তমান যে সরকার তার ধরন পাল্টে যাবে। তখন পলিসি নিয়ে ওনারা কাজ করবে না। পৃথিবীর সব দেশেই এটা আছে। তিনি বলেন, আমরা টিআইবির প্রতিনিধিদের বলেছি, যে আইনকানুন আছে সে অনুযায়ী সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে বাধ্য। সব নির্বাচনে আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাইব। সরকার অবশ্যই সে সহযোগিতা করবে বলে আশা করি। সহায়তা মূলত পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসন কেন্দ্রিক, আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যকোনো মিনিস্ট্রি নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একটির বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিদিন যে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে আসছে, এখান থেকে সরে আসতে হবে। এদের যদি মুখোমুখি করা যায়, তাহলে আলোচনা হবে গঠনমূলক। টেবিলের বাইরে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্যে কিন্তু দূরত্ব কমবে না। কারণ আমরা চাচ্ছি নির্বাচনে সব দল অংশ নিক।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দলগুলোর উপলব্ধি করা উচিত নির্বাচনে যেন বাণিজ্য না হয়। মানে কাউকে বাণিজ্যের জন্য এমপি হতে হবে, এমন কিছু যেন না হয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমপিদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কিনা জানি না। সংসদ নির্বাচন যখন হবে, তখন তো তারা এলাকায় থাকবেন। কিন্তু সেখানে তাদের কিছু আচরণ ফলো করতে হবে। আমাদেরও চেষ্টা থাকবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। ভারতে হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। সরকার তো সরকার। দল ভিন্ন জিনিস। আমরা এই বিভাজনটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। সরকারে যারা আছেন তারা শপথ নিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন। সমআচরণ করবেন, পক্ষপাতিত্ব করবেন না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। অপজিশন থেকে যে দাবিগুলো করা হচ্ছে এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেটা কিন্তু আমাদের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়। পলিটিক্যাল লিডাররা যদি একমত হন তারা দেখবেন। আমার কাছে মনে হয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বর্তমানে যে আইন আছে, সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশন বেড়ে যাবে।
ইসিকে আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ টিআইবির : অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা যেটা চাই, আপনারা চান, দেশবাসী চান, আসন্ন নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় এবং লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকে। সে বিষয়ে আমরা কতগুলো প্রস্তাব করেছি।
নির্বাচনকালীন সরকার, তার চরিত্র কী রকম হবে, তার আচরণ কী রকম হবে, গঠন কী রকম হবে, এই ধরনের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট কথা নির্বাচন কমিশনকে তুলে দেইনি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বিষয়টি যেহেতু সকল দেশবাসীরই একটা প্রত্যাশা, উদ্বেগের জায়গা। কাজেই সেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে মনে করেন, একটা নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ কী রকম হওয়া উচিত, সেটি সম্পর্কে তারা পরামর্শ, তাদের চিন্তাভাবনা প্রসূত পরামর্শ সরকারকে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতে পারেন। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করার জন্য প্রস্তাব করতে পারেন। পাশাপাশি আমরা যেটি প্রস্তাব করেছি- প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা লেভেল প্লেইং ফিল্ড সমান নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার ও আইন সংস্কারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব দিতে পারে কি?না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অবশ্যই পারে। পারে না এই রকম কোনো কথা নেই। নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পূর্বে মনস্থীর করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, তাদের একটা প্রস্তাবনা নিশ্চিত করা, কী ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারের প্রকৃতি এবং আচরণ হবে সেটা সম্পর্কে তারা যদি সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিতে পারেন, তাহলে এটি ইতিবাচক হবে।
ইভিএমের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা মনে করি, কারিগরি দিকটা যেন ফল্টলেস হয় সেটা যেমন আছে, এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে পরামর্শ নেয়া এবং নিশ্চিত করা যাতে কারিগরি কোনো ফল্ট না থাকে। আর দ্বিতীয় হলো সকল অংশীজনের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য হয়। সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়