ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

অগ্নি-দুর্ঘটনার শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২৪ বছর আগে চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপো শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রামে এ শিল্পের যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম কোনো কনটেইনার ডিপোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল। বিএম কনটেইনার ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ছিল। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। উত্তপ্ত করা হলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা অর্ধশত। সময়ের ব্যবধানে নিভে গেছে আগুন। এক সময় থেমে যাবে পত্রিকায় লেখা প্রতিবেদন। বছর ঘুরে আবার লেখা হবে, তবে সেই বার প্রতিবেদন হবে সীমিত পরিসরে। এভাবেই শেষ হবে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির। কিন্তু শেষ হবে কি আগুন ট্র্যাজেডির? শেষ হবে কি এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার? নতুন কোথাও নতুন কোনো নামে আবারো লেখা হবে প্রতিবেদন, আবারো দগ্ধ হবে অসহায় মানুষ, হারাবে পরিবার-পরিজন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। বসতবাড়ি, কেমিক্যাল গুদাম, গার্মেন্ট কারখানা, শপিং কমপ্লেক্স, সাধারণ মার্কেট, ফ্ল্যাট-বাড়ি এমনকি গরিবের একমাত্র আশ্রয়স্থল বস্তিতেও ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। এসব অগ্নিকাণ্ডের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে, আর ঝরছে বহু তাজা প্রাণ।
অগ্নিকাণ্ডের অনেক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ধরন ও প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের কারণই শর্টসার্কিট। বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তাড়াহুড়ো করেই হোক আর খরচ বাচাতে গিয়েই হোক নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সহজেই তা থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লাগছে। পোশাক শিল্পে আগুন লাগার ক্ষেত্রে বিশেষত যে কারণটি লক্ষ্য করা যেতে পারে তা হলো কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক কর্মচারী ধূমপান করেন। যখন বিরতি দেয়া হয় তখন অনেকেই এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ধূমপান করেন। এরপর যখন কাজে ফিরে যাওয়ার ঘণ্টা বা সাইরেন বাজে তখন অনেকেই হাতের সিগারেট বা বিড়ির অবশিষ্টাংশ যত্রতত্র ফেলে দেন। সেই রেখে যাওয়া সিগারেটের অল্প একটু আগুন ভেতরের তাপে আরো বেশি উত্তপ্ত হয় এবং একসময় ভয়াবহ আগুন হিসেবে সব জ্বালিয়ে দেয়। মশার কয়েল থেকেও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় এমন ঘটনাও অনেক ঘটে।
ঘটমান এই অগ্নিকাণ্ডগুলো ভয়াবহ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে উঠে আসে, শপিংমল কিংবা কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। যে কারণে সহজে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে না। কোনো এক ফ্লোরে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে যদি অটো অ্যালার্মিং সিস্টেম চালু থাকে তবে অন্য ফ্লোরে অবস্থানরতরা আগেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। এ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে অন্তিম মুহূর্তে সবাই বুঝতে পারেন আগুন লেগেছে। ফলে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েন। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ে। আর বিল্ডিং তৈরির আইনটি তৈরি হয়েছে ২০০৬ সালে। ফলে অনেক ভবন আগে তৈরি। এতে দুর্ঘটনার সময় হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। গলদ রয়েছে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও।
এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। যেটি বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই উপকার সম্ভব। যান্ত্রিক এই কারণগুলো ছাড়াও অন্যতম কারণ হলো সাধারণ জনতার নিরক্ষরতা ও আগুনের বিষয়ে শিক্ষার অভাব। আমেরিকায় সাধারণ জনতাকেও আগুনের ব্যাপারে শিক্ষিত করা হয়। স্কুল-কলেজে শেখানো তো হয়ই, কর্মক্ষেত্রেও নিয়মিত ট্রেনিং দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা আছে বলে আমি জানি না। তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা নেই। ফলে আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করার সময় বা সুযোগ পায়। পরিণাম জানার পরও কোনো বিষয়ে গুরুত্ব না প্রদান করা খেলার শামিল বলেই ধরে নেয়া যায়।
যে কোনো বিষয়ের কারণ ও করণীয় সেই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই যৌক্তিকতায় অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও করণীয় আমাদের সচেতন করবে- এমনটাই প্রত্যাশা। পাশাপাশি পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রাসায়নিক গুদামগুলো যেন আগুনের উৎস হিসেবে কাজ না করে সেই দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। আগুন কাউকে ছাড় দেয় না, সুতরাং যেসব প্রতিষ্ঠান আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হোক। এভাবেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার লাগাম অনেকটা টেনে ধরা সম্ভব হবে।

গোপাল অধিকারী : সাংবাদিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়