মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

শেরপুরে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প শুধুই কাগজে কলমে

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাহিদ আল মালেক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সারাদেশে সরকার মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প হাতে নিলেও বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় এর ২য় পর্যায়ের কার্যক্রমে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যেন কাগজে কলমেই শুধু চলছে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প।
সরকার ১৫-৪৫ বছর বয়সি নিরক্ষর নারী পুরুষকে কার্যকর জীবনদক্ষতা ভিত্তিক সাক্ষরতা দেয়ার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প হাতে নেয়। ২য় ধাপে ১১৪টি উপজেলায় শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ মাসের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বগুড়া জেলার তিনটি উপজেলায় (শেরপুর, শিবগঞ্জ ও সোনাতলা) এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। সাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিটি উপজেলায় একজন প্রোগ্রাম অফিসার ও অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রুরাল সার্ভিস সেন্টার (আরএসসি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
শেরপুর উপজেলা প্রোগাম অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকায় ৩টি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৯৭টি সর্বমোট ৩শটি শিখন কেন্দ্রে দুই শিফটে সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় ৬ মাসব্যাপী পাঠদান করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন নারী ও ৩০ জন পুরুষ নিরক্ষর শিক্ষার্থী রয়েছেন। উপজেলায় সবমিলিয়ে ১৮ হাজার নিরক্ষরকে সাক্ষর করার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে একজন নারী ও একজন পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শিখন কেন্দ্রের অধিকাংশ কেন্দ্রেই নিয়মিত ক্লাস হয়নি, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার খুবই কম, নিয়মিত বেতন ভাতা না পাওয়ায় নিয়োজিত শিক্ষকরাও ক্লাস নিতে আগ্রহী নন। এছাড়া সুপারভাইজার এবং এনজিও প্রতিনিধিদের নজরদারি নেই।
শেরপুর পৌরশহরের স্যানালপাড়ায় সাক্ষরতা প্রকল্পের শিখন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, একটি গোডাউনে প্রকল্পের হলুদ রঙের সাইনবোর্ড ঝুলে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতা ও বই বস্তায় বন্দি। কেন্দ্রের শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা জানান, আমি সারাদিন অন্য স্কুলে কাজ করি। বিকালে এসে ক্লাসে যাই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না।
শহরের উত্তরসাহাপাড়ায় সাক্ষরতা প্রকল্পের ক্লাস হয় বুলবুলির বাড়িতে। তিনি জানান, আমি অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন ক্লাস নিতে পারিনি। তাছাড়া বয়স্ক শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত ক্লাস করতে চায় না।
উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের হযরত আলীর বাড়ি এবং ছাতিয়ানী গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর বাড়িতে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। এ সময় শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, আমাদের মাসিক ২ হাজার ৪শ টাকা ভাতা দেবার কথা থাকলেও তিন মাসের ভাতা এখনো পাইনি।
গাড়িদহ ইউনিয়নের সুপারভাইজার মো. মাহফুজার রহমান জানান, ডিসেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হলেও আমাদের ইউনিয়নের নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাস নিয়মিত হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এসব বিষয়ে শেরপুর উপজেলার প্রোগাম অফিসার মো. হুমায়ুন কবীর জানান, আমরা সাক্ষরতা প্রকল্পের ৬ মাসব্যাপী পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইউনিয়ন গণজমায়েত, পরিদর্শনসহ অন্যান্য কাজ অব্যাহত রেখেছি। তবে শিক্ষার্থী জরিপসহ অর্থবিতরণের মূল কাজ করছে বেসরকারি সংস্থাটি।
বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) রুরাল সার্ভিস সেন্টার (আরএসসি) পরিচালক মো. আবুল ফজল জানান, আমি ঢাকায় আছি। শিখন কেন্দ্রে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে কি না বা কোনো সমস্যা হলে সেগুলো নিয়মিত মনিটংরিং করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম জানান, নিরক্ষর নারী পুরুষদের সাক্ষরতা দেয়ার জন্য সরকার একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। এই কার্যক্রমে ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে পাচ্ছি না। তারা ঠিকমতো ক্লাস ও মূল্যায়ন করছে কি না বা আর্থিক দুর্নীতি করছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়