মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

ফর্দ মেনে রান্না

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আপনি হয়তো ভাবছেন, শহুরে যান্ত্রিক ব্যস্তময় জীবনে ফর্দ মেনে রান্না আবার কী? সহজ কথায় আগে থেকে পরিকল্পনা করে ফর্দ মেনে বাজার করে এরপর সপ্তাহজুড়ে সেই রান্না করার উপায়কে বলে মিল প্ল্যানিং। অর্থাৎ আগে থেকেই খাবারের তালিকা তৈরি করে কোন দিন কী খাবেন তা শিডিউল করে রাখাকে বোঝায়। তবে মিল প্ল্যানিং করতে চাইলে আপনাকে আগে বাজার করতে হবে। এ ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে আস্তে-ধীরে শুরু করুন, কোন বিষয়গুলিতে আপনার সমস্যা হচ্ছে তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
মিল প্ল্যানিং কীভাবে আপনার কাজে আসতে পারে তার জন্য আপনাকে অনুসরণ করতে হবে কয়েকটি ধাপ। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি করতে হবে সপ্তাহজুড়ে রান্নার ও বাজারের তালিকা। এরপর ফর্দ মত বাজার করে নিতে হবে রান্নার প্রস্তুতি। আধুনিক লাইফস্টাইলে কতোটা জরুরী তা মেলাতে নিজেই একবার চেষ্টা করুন।

সহজ করে ফর্দ মেনে রান্না
সবকিছুই করছেন কিন্তু মিল প্ল্যানিং-এর শুরুটা করবেন কীভাবে? শুরতে কাজটা কঠিন বলে মনে হতে পারে, কোথা থেকে শুরু করবেন তাও হয়ত বুঝতে সমস্যা হতে পারে। আপনার সুবিধার জন্যে ধাপে ধাপে মিল প্ল্যানিং শুরুর প্রক্রিয়াটি নিচে দেয়া হলো।

সিদ্ধান্ত নিন ব্যস্ততা বুজে
মিল প্ল্যানিংয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে কয়দিনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেয়া।
আপনি কি এক সপ্তাহের খাবারের পরিকল্পনা করতে চান? নাকি এক মাসের?
শুরুতে এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিনের জন্য মিল প্ল্যান করলে সবচেয়ে ভালো হয়। আপনার সামনে যদি অনেক ব্যস্ত একটা মাস থাকে, নানারকম অ্যাপয়েন্টমেন্ট কিংবা অনুষ্ঠান থাকে, তাহলে এক মাসের জন্যই মিল প্ল্যান করে তা ক্যালেন্ডারে টুকে নিতে পারেন। তারপর সে অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।

পছন্দমত তালিকা তৈরি
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের পছন্দের খাবারের একটি তালিকা তৈরি করুন। প্রত্যেক সদস্য কী কী খেতে ভালোবাসে সবকিছু সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। এই তালিকা তৈরির সময় তাদের সাহায্য নিন। রেসিপির তালিকা তৈরির সময়, সব ধরনের পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখুন। তাছাড়া ঋতুভেদেও কিছু খাবারের আইডিয়া তৈরি রাখুন।

ক্যালেন্ডার
অনেকেই ডিজিটাল ক্যালেন্ডার পছন্দ করি, আবার অনেকে কাগজ-কলমেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মিল প্ল্যান শিডিউলের জন্য দু’টির যেকোনোটাই ব্যবহার করতে পারেন।
ডিজিটাল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে চাইলে গুগল ক্যালেন্ডার, অ্যাপল ক্যালেন্ডার (অ্যাপল ডিভাইসের জন্য), কোজি ফ্যামিলি অরগানাইজার ইত্যাদি যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যানালগ প্ল্যানিংয়ের জন্য প্রিন্টেবল মিল প্ল্যানার ব্যবহার করতে পারেন। ইন্টারনেটে সার্চ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নানারকম মিল প্ল্যানার পাবেন, যেগুলি প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন।
সুবিধামত একটি প্ল্যানার খুঁজে বের করুন। এই মিল প্ল্যানারটি আপনি লেমিনেট করে তার ওপর মার্কার দিয়ে লিখতে পারেন।
ক্যালেন্ডারটি রান্নাঘরে রাখুন, যাতে যেকোনো সময়ই দেখতে পারেন। লেখার কাজে পেন্সিল ব্যবহার করতে পারেন, যাতে লেখা মুছে একই পৃষ্ঠা বার বার ব্যবহার করা যায়। আপনি যাতে যখন খুশি তখন প্ল্যান পরিবর্তন করতে পারেন সেই সুযোগটি রাখুন, প্ল্যানটিকে ফ্লেক্সিবল করে তৈরি করুন।

বাজার করা
প্ল্যান তৈরির পর আসে বাজার করার বিষয়টি। এক সপ্তাহ কিংবা এক মাসের বাজার করার মাধ্যমে বার বার বাজারে না গিয়ে সময় ও টাকা দুটিই বাঁচানো এখানে আমাদের লক্ষ্য।
তাই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে, মিল প্ল্যান দেখে বাজারের লিস্ট তৈরি করুন। ফ্রিজ ও রান্নাঘর চেক করে কোন কোন উপকরণ লাগবে তা ভালোভাবে দেখুন। এতে একই উপকরণ একাধিকবার কেনার বিড়ম্বনা কমে।
খাবার তৈরির প্ল্যান ও উপকরণ হাতে চলে এলে মিল প্রেপ বা খাবার তৈরির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করুন।

মিল প্রেপিং
মিল প্রেপিং বলতে বোঝায় আগে থেকে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় শাকসবজি কেটে রাখা ও নানারকম পদ্ধতিতে প্রস্তুত করে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফ্রিজ করা।
এই তৈরি করে রাখা শাকসবজি পরে প্রয়োজনমত বের করে কম সময়ের মধ্যে সহজে খাবার রান্না করা যায়। দোকান থেকে ফ্রোজেন খাবার কেনার চেয়ে মিল প্রেপ করার সুবিধা বেশি, কারণ যেহেতু আপনি নিজ হাতে মিল প্রেপ করছেন এর মধ্যে কী কী উপকরণ আছে তা আপনার ভালোভাবেই জানা আছে।
আপনাকে প্রতিদিনের প্রতিবেলার খাবারের জন্য মিল প্রেপ করতে হবে না, তবে চাইলে করতে পারেন।
মিল প্ল্যান ও প্রেপের শুরুর দিকে সবকিছু একসাথে করার চেষ্টা করবেন না।
মানসিক চাপ কমায়
কখন কোন বেলার রান্নাতে কী মেন্যু থাকবে সেই দুশ্চিন্তা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকরণ না থাকার কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এটাকে খুব বড় চিন্তার ব্যাপার বলে মনে না হলেও ছোট ছোট দুশ্চিন্তা থেকেই মানসিক চাপ তৈরি হয়। একজন মা হিসেবে, আপনাকে প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হয়। যেমন, সময়মতো পুরো পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করা, ঘর পরিষ্কার করা, বাচ্চাদের অভিযোগ অনুযোগ শোনা, ঝগড়াঝাটি থামানো, আবেগ ও অভিযোগ সামাল দেয়া ইত্যাদি। দিন যত বাড়ে, এই মানসিক চাপও তত বাড়ে। এখানে মিল প্ল্যানিং এর মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে মা হিসেবে আপনার মানসিক চাপ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। তবে, আপনি একা হলেও মিল প্ল্যানিং আপনার জীবনকে অনেক সহজ করে দেবে। হাতের কাছে একটি মিল প্ল্যান তৈরি করা থাকলে আপনি প্রতিদিন সকালবেলায় সেদিন কী কী খাবার বানাতে হবে তা দেখে নিতে পারবেন, ফ্রিজ থেকে আগেই প্রস্তুত করা খাবার নামিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই পারবেন খাবার তৈরি করে নিতে। আপনার শিডিউলের নিয়ন্ত্রণ এখন সম্পূর্ণ আপনার হাতে। তাই বিস্মিত হওয়া, দুশ্চিন্তা করার কারণও কমে যাবে, রান্না হবে উপভোগ্য।

খাবারে বৈচিত্র্য আনা যায়

আমরা অনেকেই সন্তানদের স্কুলে প্রতিদিন একই রকমের টিফিন দেই। আর একই খাবার খেয়ে খেয়ে বাচ্চারাও বিরক্ত হয়, হাঁপিয়ে ওঠে। এই কাজটি আমরা কেউই ইচ্ছা করে করি না। কিন্তু আমাদের কাছে যখন কোনো প্ল্যান বা পরিকল্পনা থাকে না, তখন আমরা হাতের কাছের সবচেয়ে সহজ উপকরণগুলি দিয়ে যা বানানো যায়, তাই বানাই। খাবার তৈরির ব্যাপারেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য।
আমাদের প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। তাই, মিল প্ল্যান করার সময় সব ধরনের পুষ্টিগুণ আছে এমন খাবারগুলি যেমন শাকসবজি, ফল ও মাংস খাদ্যতালিকায় যোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

সময় বাঁচায়

রবিবার রাতে কোন খাবারটা বানাবেন তা আগে থেকেই জানা থাকলে সেই কাজে থাকলেও দিনটা শান্তি ও আরামে কাটাতে পারবেন। কারণ কী রান্না করতে হবে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে সময় নষ্ট করতে হবে না।
মিল প্ল্যানিং করতে চাইলে আপনাকে আগে বাজার করতে হবে। তাই রান্না করার সময় কোনো কিছু খুঁজে না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

অবশ্যই সাশ্রয়ী

মিল প্ল্যান তৈরি করে বাজার করতে গেলে, আপনার কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির একটি তালিকা থাকবে, আপনি অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না ও টাকা বাঁচাতে পারবেন।
ধরুন, দোকানে গিয়ে কোনো একটি আইটেম দেখে আপনার মনে হলো এই সপ্তাহে কোনো একদিন রান্নায় তা ব্যবহার করবেন, এই ভেবেই সেই উপকরণটি কিনে আনলেন। কিন্তু তারপর কোনো কারণে সেই উপকরণটি আর ব্যবহার করলেন না, আর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা ফেলে দিতে হলো। মিল প্ল্যানিং করা থাকলে এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়