ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস আজ : চাল-তেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কিডনি রোগ, বন্ধ্যত্বের শঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কোনো অস্তিত্ব বাংলাদেশে না থাকলেও ২৮ সহ অন্যান্য চাল পালিশ করে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চালে প্রোটিন, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপাদান মোটেও থাকছে না। ফলে শুধু খাদ্য হিসেবেই এসব চাল খাওয়া যেতে পারে কিন্তু এতে শরীরে কোনো ধরনের ভিটামিন, প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদানের জোগান দিচ্ছে না। পাম তেলের সঙ্গে সয়াবিন তেল মিশিয়ে সয়াবিন তেল বলে বিক্রি করা হচ্ছে। খোলা বাজারের ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ রাখার বিধান থাকলেও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া তেল যে কন্টেইনারে রাখা হয় কিংবা যেভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীমের এক গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে।
এছাড়া বাদাম, আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ভুট্টা ও সরিষার ৮০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতে লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাদাম ও ভুট্টাতেই এর উপস্থিতি বেশি। এদিকে ময়মনসিংহে সালাদ তৈরির সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে মিলেছে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া। এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লইট্টা শুঁটকিতে ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে। আর কিছু অঞ্চলে গরুর দুধে সামান্য পরিমাণে অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। ক্ষতিকর এসব ব্যাকটেরিয়া শুধু লিভার ক্যান্সারই নয়, খাদ্যে অ্যাফ্লাটক্সিন ও ব্যাকটেরিয়া মাত্রাতিরিক্ত থাকলে এবং তা গ্রহণ করলে সাধারণ রোগ ছাড়াও কিডনি রোগ এমনকি মেয়েদের বন্ধ্যত্বও হতে পারে। পৃথক পাঁচটি গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস। ‘উন্নত অর্থনীতির জন্য নিরাপদ খাদ্য’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে আজ সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
চাল ও তেল নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম। চাল ও ধানের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করেন তিনি। এতে প্রথমে ধানের তুষ বা খোসা ছাড়ানোর পর আবার আবরণ (ব্রাউন) সরানো হয়। এটাকে ব্রাউন রাইস বলে। এই অবস্থায় তথা ব্রাউন রাইসে প্রোটিন, ভিটামিন ও তেলের উপস্থিতি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দ্বিতীয়ত, ব্রাউন ছাড়ানোর পরও ৫ শতাংশ পালিশ করলে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ পালিশ করলে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রোটিন কমে যায়। একইভাবে ফ্যাটের পরিমাণ ব্রাউন রাইসের চেয়ে ৫ শতাংশ পালিশ চালে ১০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ চালে ২০ শতাংশ কমে গেছে। পলিশিংয়ে প্রোটিন ও ফ্যাট কমে গেলেই কার্বোহাইড্রেডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে সবগুলো ভিটামিন পালিশ অনুযায়ী চালে হ্রাস পায়। অথচ বাজারে ১৫-১৬ শতাংশ পর্যন্ত পালিশ করা চাল পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম জানান, ধানের খোসা ছাড়ানোর পর যে চাল হয়, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আগের যুগের মানুষ এসব চাল খেত। চাল যত চিকন বা ছাঁটাই করা হবে, ততই নিউট্রিন ও পুষ্টি কমতে থাকে। এতে কার্বোহাইড্রেড বাড়তে থাকে। কার্বোহাইড্রেড স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যা ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আটটি বিভাগীয় শহরের খোলা বাজার থেকে তেল সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোনো তেলেই ভিটামিন-এ পাওয়া যায়নি। কন্টেইনারে বিসমল নামক ক্ষতিকর কেমিক্যাল পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি করা অনেক পণ্য মানসম্মত না হওয়ায় কিংবা ভেজাল থাকায় অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশ ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এতে আমরা জানতেও পারি না যে, কী কারণে পণ্যগুলো ফেরত পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশ। আবার আমদানি করা পণ্যে অ্যাফ্লাটক্সিন আছে কিনা, তাও জানা নেই। তাই অনেক পণ্য গবেষণা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি পৃথক গবেষণায়ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রামের অধীনে গত বছর গবেষণাগুলো পরিচালিত হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্র্তৃপক্ষ বলছে, ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্যের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১০১ জনকে দায়ী করে ১০৫টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত পোস্টার, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, সেমিনার করা হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার খাদ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১০টি ডেজিগনেটেড ল্যাবের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেখান থেকে ৭২০টি নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে মানসম্মত নমুনা পাওয়া যায় ৬৩৭টি এবং মানহীন ৮৩টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়