জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

পর্যটন : পর্দা তুলছে সৌদি আরব

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : নেকাব সরিয়ে সৌদি আরবকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। সৌদি বাদশার এ সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো সৌদি আরব তো সস্তা কোনো গন্তব্য নয়। বছরের আট মাস সেখানে আগুনে গরম। রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, মদ্যপান নেই, নারী-পুরুষের প্রকাশ্য মেলামেশা নেই। সবচেয়ে বড় কথা টিপিক্যাল মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতো সৌদি আরবেরও মানবাধিকার রেকর্ড অতি ভয়ংকর।
তাহলে বিধিনিষেধে ভরা রক্ষণশীল এই দেশে মানুষ পয়সা খরচ করে যাবে কেন? দেখার কী আছে সে দেশে? বিবিসির দাবি, সৌদি আরবের নিসর্গের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য যে কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে- তা অনেক মানুষ কল্পনাও করেন না। এটা ঠিক দেশের সিংহভাগ এলাকাই মরুভূমি, কিন্তু সে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে ১০ হাজার ফুট উঁচু জুনিপার বৃক্ষে মোড়া আসির পর্বতমালা, নীলাভ জলের কোরালসমৃদ্ধ লোহিত সাগর, আল-হফুফের খেজুর গাছে ভরা মরুদ্যান আর জেদ্দার অতি সরু অলি-গলিতে মসলার বাজার। বলা যায় জেদ্দার কথা। লোহিত সাগরের তীরে এই বন্দর শহর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজধানী ছিল। লোহিত সাগর তীরবর্তী সব দেশের মানুষের দেখা মেলে এ শহরে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। দেখা যাবে মিসরীয়রা খোলা জায়গায় ক্যাফেতে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, অথবা হুক্কা টানছেন; কেউ আবার রাস্তার লাইট পোস্টের নিচে বসে বোর্ড-গেমে মশগুল।
দশ-বিশ বছর সৌদি আরবে রয়েছেন এমন বহু মানুষের কাছেও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আসির পর্বতমালা অপরিচিত। সবুজ জুনিপার বৃক্ষে ঢাকা এই পর্বতের সৌন্দর্য খুবই বিচিত্র। ভরা গ্রীষ্মেও সেখানে গেলে দেখা যাবে ব্যাপক এক শিলা বৃষ্টির পর জুনিপারের জঙ্গল পুরো সাদা হয়ে গেছে। পাঁচ লাখের মতো হামদ্রিয়াজ বেবুনের বসবাস এই পাহাড়ি জঙ্গলে। সেই সঙ্গে রয়েছে হর্নবিল, ঈগল আর নীলচে আগামিড গিরগিটি। স¤প্রতি অভ্যন্তরীণ পর্যটনের জন্য ইয়েমেন সীমান্তের কাছে এই জায়গাটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে ওঠার জন্য কেবল কারের ব্যবস্থা হয়েছে। পাহাড়ের খাদে খাদে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর সব গ্রাম। সেখানে থেকে আসির পাহাড়ের ঢালের সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমির মাঝে প্রাচীন নাবাতিয়ান সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। জর্ডানের পেত্রার বিভিন্ন নিদর্শনের সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোর। এটা হিযাজ, আরব উপদ্বীপের পশ্চিমাংশের সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে টি-ই লরেন্স ১৯১৭ সালে তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের সময় আরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। সে সময় তৈরি রেললাইনের অংশবিশেষ এখনো চোখে পড়বে। মাদিন সালেহ নিয়ে বহুদিন সৌদি সরকার খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ, ইসলাম-পূর্ব সভ্যতার এসব নিদর্শনের প্রচার রক্ষণশীলদের খুব একটা পছন্দের নয়। ঐ সময়কালকে তারা ‘অন্ধকার যুগ’ হিসাবে দেখেন। কিন্তু পর্যটন শিল্পের প্রসার নিয়ে যখন সৌদি আরব এখন ভাবতে শুরু করেছে। ফলে, ইসলাম-পূর্ব প্রাচীন সভ্যতার এসব নিদর্শন নিয়েও প্রচার শুরু হয়েছে।
সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে মরুভূমির মাঝে খেজুর গাছে আবৃত আদিগন্ত মরুদ্যান বিশ্বের সবচেয়ে বড়। বাগানের মধ্যে এখানে সেখানে সরু ঝরনা চোখে পড়ে। এর মাঝে রয়েছে আল-কুরা পর্বত এবং তার ভেতর জটিল গুহাপথ। ২০১৮ সালে এটি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এলাকার তালিকায় জায়গা পেয়েছে। পাহাড় পেয়ে এই গুহায় ঢুকলে বাইরের মরুভূমির উত্তাপ থেকে সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি। ঠাণ্ডা হয়ে যায় শরীর। সৌদিরা সাধারণত বিদেশি পর্যটকদের স্বাগত জানায়। তবে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। উদার পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেক কিছুই রক্ষণশীল এই দেশে তীব্র আপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন, রাস্তাঘাটে কখনই সৌদি নারীদের ছবি তোলার চেষ্টা করা উচিত হবে না। তাদের অভিভাবকরা এটাকে মর্যাদাহানি হিসেবে দেখতে পারেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়