নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

আগের সংবাদ

কালো টাকার অবাধ সুযোগ! : বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিরল উদ্যোগ, কর দেয়ায় নিরুৎসাহিত হবে সৎ করদাতারা

পরের সংবাদ

‘রেজিস্টার্ড এজেন্ট’ অর্ধশত : ফেনী পাসপোর্ট অফিসে বছরে ১০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য!

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুকদেব নাথ তপন, ফেনী থেকে : সাইনবোর্ড দেখে বাইরে থেকে মনে হবে স্টুডিও, কম্পিউটার বা ফটোকপির দোকান, কিন্তু ভেতরে ‘ব্যবসা’ ভিন্ন। ফেনীতে এভাবেই সাইনবোর্ডের আড়ালে চলে পাসপোর্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতির কারবার। ভুয়া সিল-প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হয় যাবতীয় নকল কাগজপত্র। হাত বাড়ালেই মেলে পাসপোর্ট। শহরের ৫০টি ট্রাভেল এজেন্ট ও খোদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের দোকানঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। সরজমিন গত ৬ মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেনীর প্রায় ৫০ জন চিহ্নিত দালাল নিজেদের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রেজিস্টার্ড এজেন্ট বলে পরিচয় দেয়। বেশির ভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে এই দালালদের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় তারা। চুক্তি না হলে বিড়ম্বনার শিকার হবেন বলে জানায় দালালরা।
পাসপোর্টসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অঙ্ক ভিন্ন। যেমন- সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ৫ থেকে ১৫ হাজার, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২০ হাজার, নামের বানান সংশোধনে সর্বনি¤œ ৩০ হাজার এবং জন্ম তারিখ সংশোধন ও নামপরিবর্তন বা ভুয়া নাম-ঠিকানায় জাল পাসপোর্ট তৈরি, আঙুলের ছাপ জালিয়াতি (মিস ফিঙ্গারিং) ইত্যাদি কাজ বাবদ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র দালালদের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়। ফেনী পাসপোর্ট অফিসের দালালদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানের বিষয়ে কথা হয় শহরের একাদিক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনলাইনে পাসপোর্টের ফরম পূরণ করা হয়। ফরমের উপর ৫০টি এজেন্টের সিল দেয়া হয়। সিল থাকলে তারা বলে দিতে পারেন এটি তাদের তালিকার সিল। প্রতিদিন বিকালে আনসার সদস্য করিম তালিকা ধরে টাকা আদায় করে নিয়ে যায়। টাকা উত্তোলন করে অফিসে দায়িত্বরত হিসাবরক্ষক আবুল মনসুর, অফিস সহকারী মাফতুল হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোলার অপারেটর মো. সাইফুল লতিফকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাদের মাধ্যমে অফিসের কর্মকর্তাদের পদ অনুসারে টাকার হিস্যা বণ্টন করা হয়। গত মার্চ মাসে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির শিকার হয়ে এক দল গ্রাহক ফেনী পৌর সভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজির কাছে অভিযোগ করলে তিনি তাৎক্ষণিক ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা পান। এ সময় ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অপেক্ষারত শত শত গ্রাহক মেয়রকে ঘিরে রেখে তাদের হয়রানির কথা জানান।
এ বিষয়ে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা সাধন সাহা বলেন, দালাল নির্মূলে অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য জেলা পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। আগের তুলনায় বর্তমানে কিছুটা হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অফিস সূত্র বলছে, বর্তমানে ফেনীর পুরো সিন্ডিকেট নেটওয়ার্কটির দায়িত্ব পালন করছেন ফেনী অফিসের হিসাবরক্ষক আবুল মনসুর, অফিস সহকারী মাফতুল হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোলার অপারেটর মো. সাইফুল লতিফ। কয়েক লাখ মানুষকে এই চক্রটি প্রতারিত করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক সাধন সাহা পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বাণিজ্যর কথা অস্বীকার করেন এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করি শিগগিরই এর কার্যকর সমাধানে আমরা যেতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়