করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ে ফের স্কুল বন্ধ

আগের সংবাদ

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯ দফা নির্দেশনা : ঝুঁকি মোকাবিলায় নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

পরের সংবাদ

লে লুল্লু লে

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চাকরি চলে গেল আঠারো দিনের মাথায়। ঘটনা ঠিকমতো বোধগম্য হয় না। সে ছুটির আবেদন করেছিল। অফিস নর্মস এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। তারপরও এসে শোনে চাকরি নেই। মালিক-সম্পাদক মহসিন আলি খাঁ জবাব দিয়েছেন। আবিদুর তখন যথারীতি সম্পাদকীয়র স্ক্রিপ্ট শেষ করে এনেছে প্রায়। সম্পাদকীয় পেজের জন্য দুটো কলাম এডিট হয়ে গেছে। মুরগির খোপরামতো ছোট্ট ঘর। এই ঘরের মধ্য দিয়ে উত্তরে ফাঁকা চত্বরে যেতে হয়। শেষপ্রান্তে প্রস্রাবখানা আর টয়লেট। একপাশে একটি টিউবওয়েল। প্রায়শ চেক-ভালভ নষ্ট। ওটাকে পানি খাইয়ে তবে পানি আদায় করা যায়। তারপর সীমানা প্রাচীর। ওপারে একটি ঝাঁকড়া কামরাঙা গাছ। বেগুনি রং ফুল ফুটে রয়েছে। শাখায় শাখায় কচি কামরাঙা। বেশ ভালো লাগে। সেই মুগ্ধতার মধ্যে আচমকা দক্ষিণমুখী বাতাসে প্রস্রাবের শুকনো-ঝাঁজালো গন্ধ। প্রায় সময় মানুষের গ্যাঞ্জাম। মানুষজন যখন-তখন যাওয়া-আসা করে। এর মধ্যেই মাথা গুঁজে কাজ করা। সকালের তিনখানা দৈনিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে বের করা হয় লেখার ইস্যু। চারদিকে শুধু ছিনতাই-অপহরণ-ধর্ষণ-খুন, পুকুরচুরি-লুটপাট-দুর্নীতি আর রাজনীতি কার্যকলাপ নামে পরস্পরের প্রতি বিষোদগার-গিবত। গ্রামাঞ্চলে গবাদি পশু চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু কেটে চামড়া তুলে মৃতদেহ ফেলে রাখছে চোরের দল, চিরকুটে লেখা হালাল উপায়ে জবাই করা ইত্যাদি। হাজারও খবরের সব নিয়ে রি-অ্যাক্ট করা যায় না। আবিদুরকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। তারপরও মন নিষেধ শোনে না। মস্তিষ্কের নিউরোনে ভাবনা চলে। উপায় কী? নিউজপ্রিন্টের খসড়া প্যাড। রেডলিফ বা ইকোনো বলপয়েন্ট ঘষে ঘষে লেখে। সমালোচনা-উপদেশ-পরামর্শ। কখনো স্বপ্নগাঁথা। স্বপ্ন দেখতে কার না ভালো লাগে! কখনো লেখার মতো ভাবনা কাজ করে না। তখন উপরে তাকিয়ে থাকে। টিনচালের নিচে কাঠের বর্গা, সেটায় হুকের সঙ্গে ফ্যান ঝোলে, ইলেকট্রিক ফুল ভোল্টেজ থাকলে ঘোরে নয়তো একরকম অনড়-স্থির। কখনো ঢিমেতালে কখনো বনবন। ফ্যানের মনমেজাজ বোঝা ভার। পৃথিবীর গতিপথের উল্টো দিক সব। মে মাসের শুরুতে তাপদিন বাতাসের কিছু ঢেউ। লঞ্চের সাঁতারকাটা শব্দ ছড়িয়ে যায়। এখন সেই ভোঁ-ভোঁ গুঞ্জন অভ্যেস হয়ে গেছে। হাশিম খোপরার পুব দেয়াল ঘেঁষে সাইকেল রেখে নিজের টেবিলে এগোয়। গেটের মুখোমুখি বসে। জেনারেল ম্যানেজার। মাথায় জবজবে কেয়োকার্পিন হেয়ার ওয়েল। আজ এই টেবিলের ওপাশের চেয়ারে বসে পড়ল। চোখ-মুখ ঘেমে একশা। অনেক দূর থেকে আসা হয় বটে। সিগারেট জ্বালিয়ে কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ চলে যায়। বেনসন এন্ড হেজেস। আবিদ বলপয়েন্ট রেখে বসে থাকে। কেউ সামনে বসে থাকলে লেখায় মনোযোগী হওয়া বেশ ঝামেলার।
‘আবিদ ভাই গতকাল বিকালে এসেছিলেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘কখন?’
‘এই তো সাড়ে তিনটের দিকে। কেউ ছিল না। স্যার একা মেশিন ঘরের ওখানে বসে লিখছিলেন।’
‘স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে কোনো?’
‘তেমনকিছু নয়। কেমন আছ টাইপের। কেন কী হয়েছে? কী ব্যাপার?’
‘ও!…স্যার কিছু বলেন নাই?’
‘কী কথা হাশিম ভাই?’ ??
হাশিম উপরে তাকিয়ে নীল-ধূসর ধোঁয়া ছেড়ে দেয়। সেই সার্কেল একটির সঙ্গে একটি গায়ে গায়ে লেগে মিশে যেতে থাকে। সকলে এটা পারে না। শিখতে হয়। আবিদ সিগারেট খায় না। কোনোদিন খেতে শুরু করলে এমন রিং তৈরি করা শিখবে। গোল গোল সার্কেল… ধোঁয়া চক্র। বাক্য ভুল হলো। সে হোক, এ তো আর ছাপা হবে না। তার কলম বন্ধ হয়ে গেছে। আজ দেশের বেকারত্ব এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ প্রাবল্য নিয়ে সম্পাদকীয় লিখতে বসেছে। গৎবাঁধা ইস্যু। কোনো রিসক ফ্যাকটর নেই। আগামাথা কিছু নেই। অনেকটা নিজের মতামত। সাম্প্রতিক গ্রিভিয়াস ইস্যুগুলো নিয়ে লিখতে বেশ ঝামেলা হয়। পলিটিক্যাল বিষয়গুলো আরো সমস্যার, কেউ খুশি হন কেউ রাগ; কোনোটি সার্বভৌমত্ব প্রশ্ন। পুলিশ-বিডিআর-আর্মি সম্পর্কে হাজারবার শব্দ-বাক্য ইত্যাদিতে মনোযোগ রাখতে হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলে কী হবে… সব কথা প্রাণখুলে লেখা যায় না। সেফগার্ড রেখেই তবে লেখা। একবার জজকোর্টের বিচারকের কোর্ট চত্বরে দোকানপাট উচ্ছেদ সিদ্ধান্ত নিয়ে লিখে বেশ ঝামেলা হলো। সাত দিনের মাথায় জজকোর্ট থেকে নোটিশ। উল্লিখিত সম্পাদকীয়র বক্তব্য পনেরো দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেন আদালত অবমাননার দায় নিতে হবে না ইত্যাদি। আবিদুর সাড়ে ছয় বছরের চাকরি জীবনে তেমন গ্যাঁড়াকলের মুখোমুখি হয়নি। সে ভয় পেয়ে যায়। কোর্টকাচারি থানা-পুলিশকে খুব ভয়। ধনাঢ্য মানুষের ভয় থাকে না। গরিব মানুষের হাজারও আতঙ্ক। কারো মানসম্মানের প্রশ্ন। বহুরূপী ভয় আসে। মহসিন আলি খাঁ সেদিন দুপুরে অফিসের দোরগোড়ায় মোটরসাইকেল থামিয়ে দুদ্দাড় ভেতরে আসেন। নিজের কক্ষে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ান। আবিদুরের তখন থাকার কথা নয়। সে সকাল নয়-দশটায় এসে সম্পাদকীয় পেজ রেডি করে দিয়ে চলে যায়। সেদিন একবার হাশিম আরেকবার বিজ্ঞাপন ম্যানেজার কমলের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছিল। কিছু টাকা দরকার। মহসিন আলি খাঁ তাই একটু বিস্মিত। তারপর বেশ কৌতুক মুখে বলে বসেন, –
‘আবিদুর ভয় পেয়েছ নাকি?’
আবিদুর ভরসা পায়। ভয় পেয়েছে বললে সাহসী সাংবাদিক হতে পারে না, আবার ভয় পায়নি জানালে মিথ্যে বলা হয়। সে কী করে? অনেকটা হাবা হাসমতের মতো বোকা বোকা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। তার হাতে কলম। টেবিলে নিউজপ্রিন্ট।
‘ভয়ের কিছু নাই বুঝেছ। আ রে না হয় পনেরো দিনের জেল হবে? এ গ্রেড আবাস। কোনোদিন জেলে গেছ?’
আবিদুর কী বলে? প্রশ্ন মাথার মধ্যে গোলকধাঁধা তৈরি করে। অন্ধকার সুড়ঙ্গ। রমেশ তৃতীয় পেজ পেস্টিং করছিল। ট্রেসিং পেপার কেটে কেটে বিস্রস্ত ছড়িয়ে আছে। স্কচটেপের টুকরো। ট্রেসিংয়ের কলাম মেলাতে মেলাতে ‘হা হা হা’ শব্দে হেসে ওঠে। মহসিন আলি খাঁর খাস মানুষ।
‘স্যার আবিদ ভাইকে ভয় দেখাচ্ছেন? ইনি তো ভেরি গুডবয় মানুষ, শেষে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে আর কি!’
‘হা হা হা!’
অফিসে হাসি-অট্টহাসি বজ্রপাতের মতো আছড়ে পড়ে। আবিদুর লজ্জা পায় বটে। মনে মনে ঠিক করে, এইসব জটিল বিষয় নিয়ে আর লিখবে না। সে কি সমাজ উন্নয়নের ঠিকাদার? তারপরও লিখতে হয়। সম্পাদকের নির্দেশ আসে। সেই সম্পাদকীয়ও আদেশমতো লেখা। ওইদিন অফিসে বেশ সময় পর্যন্ত বসেছিল। অনেক মনোযোগে বুঝে-শুনে ব্রিফিং অনুসরণ করে লেখে। প্রতিটি শব্দের প্রত্যেক বাক্যের ইতিবাচক-নেতিবাচক অর্থ ব্যাখ্যা নিজেকে শোনায়। এর মধ্যে কম্পোজিটার বিপ্লব সাহা দু-তিনবার এসে ‘লেখা শেষ হলো কি না’ জিজ্ঞেস বা তাগাদা রাখে। রমেশ দুপুরে এসে সব ম্যাটারের ট্রেসিং নিয়ে পেস্টিং-এ বসে যায়। তার মুখে কথায় কথায় সø্যাং শব্দ। সিগারেটে গালভাঙা টান। অ্যাডাল্ট কৌতুক। ইত্যাদি। আবিদুর লেখা শেষ করেছে, কিন্তু সম্পাদককে একবার না দেখিয়ে কীভাবে কম্পোজে দেয়? শেষে সব দায় তার একলার কাঁধে এসে পড়বে। সম্পাদক এলেন প্রায় সাড়ে চারটায়। রমেশ নড়েচড়ে মনোযোগী সতর্ক। সিগারেটে শেষটান দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে। মেশিন ঘরের পুবকোণার ফাঁকা স্পেসে পেস্টিং টেবিল। আবিদুর এগিয়ে বলে রাখে, –
‘রমেশদা, যেমন এডিটোরিয়াল লেখা হয়, সে-রকম এই ধরুন চার-সাড়ে চার ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে পোস্টগুলো বসিয়ে দিন।’
‘আজ কয়টা পোস্ট? সাহিত্য তো নেই। আমার বিনোদন পাতা যাবে। অলিভিয়ার ছবি দেখেছেন? ঝাক্কাস! হে হে হে!’
রমেশ ছবির ফিলম তুলে ধরে। অলিভিয়া তিন কলাম সাত ইঞ্চি আবক্ষ, চোখের দৃষ্টিতে অচেনা রহস্যময় আবেদন; রমেশের আঙুলে থিরথির নাচতে থাকে। দ্য রেইন ছবির সাহসী ছবি। পরদেশি মেঘ রে… আর কোথা যাস নে। আবিদুর ছবি দেখে, ছবির মধ্যে ডুবে যায়, নিজেকে পুরো নিমজ্জিত করে রাখে প্রায়; জীবন ছবির মতো নয়।

গতকাল দুপুর শেষে বিকেলের আগে আগে এসেছিল। মহসিন আলি খাঁ একাকী লিখতে বসেছেন। অসম্ভব দক্ষ লেখক-সাংবাদিক। মানুষের ভিড়-হট্টগোলেও চমৎকার লিখে যান। তখন তার বাঁ-হাতে সিগারেট, শিখরদেশে অনেকখানি ছাই জমে আছে; লিখছেন। সেই সময় আবিদুর হাজির। তার একহাতে বাজারের ব্যাগ। অন্যহাত একমাত্র পুত্র ধরে আছে। ছেলে তাকে ছাড়ে না। অনেকদিন পর বাসায় ফিরে আসা। প্রায় সতেরো-আঠারো দিন। এই কয়েকদিন বিরল-বোচাগঞ্জের গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে এসেছে। লোকাল এক এনজিওর কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা অধ্যাপক-বিশেষজ্ঞদের প্রণীত বারো পৃষ্ঠার সার্ভে ফরম পূরণ। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পরিস্থিতি এবং চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদন তৈরির কাজ। প্রতিদিনের মজুরি দুইশত টাকা। আবিদুরের কাছে প্রস্তাব আসে। এই দিনগুলোর জন্যই ছুটির আবেদন। বকেয়া বেতন থেকে তাগাদা দিয়েও পাওয়া যায়নি, অথচ টাকা খুব দরকার; সম্ভবত সেটি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। যে চাকরি, মাসের পর মাস বেতন নেই, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বছরে দু-বার ঈদের সময় কিছু টাকা পাওয়া যায়, এই যা; বোনাস তো দূরের কথা। চাকরির বাজারে এর চেয়ে বড় আর ভালো কী জোটাতে পেরেছে আবিদুর? তার সম্পাদকীয় লেখার ভাবনায় যতিচিহ্ন পড়ে এলোমেলো হতে শুরু করে। এখন কী করবে?

হাশিম আবার ধোঁয়ার রিং তৈরি করে। পারমাণবিক বোমার মতো চারপাশ প্রসারিত হয়ে রিং মিশে যায়। আবিদুরের অপেক্ষা। টেবিলের একপাশে আগামীকালের ম্যাটার। আজকের সম্পাদকীয়।
‘ও স্যার তা হলে কিছু বলেনি।’
‘কী কথা ভাই? বলে ফেলেন।’
‘না সে তো বলতে হবে। স্যার আমাকে বলেছেন যেন আপনাকে বলি।’
‘কোনো সমস্যা হয়েছে?’
‘আবিদ ভাই আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। বুঝতে পেরেছেন।’
হাশিম একটু থেমে বেনশন অ্যান্ড হেজেস-এ শেষটান দেয়। একমুখ ধোঁয়া বাতাসে রেখে যায় তামাকের সুগন্ধ। আবিদুরের মন অকারণ উদাস হতে শুরু করে অথবা অহেতুকও নয়। দোষ তো একটু হয়েছে তার।
‘গতকাল স্যার রাতে জানান যে, আপনি এসেছেন। আপনি তো ছুটির দরখাস্ত দিয়ে চলে গেলেন। অবশ্য দু-দিনের ম্যাটার ড্রয়ারে ছিল। ছুটি অনুমোদন হলো কি না জানেন?’
‘এমন তো হয়ই হাশিম ভাই। আপনার কাছে দরখাস্ত জমা দিই।’
‘এবার তো একদিনের ছুটি না, পনেরো-বিশ দিন। কে নেবে আপনার কাজের দায়িত্ব?’
‘সজল ভাই তো বললেন তিনি চালিয়ে নেবেন।’
‘তিনি তো আর স্টাফ নন। অফিসে কখনো আসেন কখনো যান। তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বড়ভাইয়ের অফিস।’
‘অতএব আমার এখানে আর কাজ নেই তাই তো?’
‘জি ভাই, আমি দুঃখিত।’
‘সরি হওয়ার কিছু নেই হাশিম ভাই। যে চাকরি…।’
‘আপনি যার হাতে আনঅফিসিয়ালি দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি এখন কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠান দুজনকে অ্যাফোর্ড করতে পারবে না। স্যার বলেছেন একজন থাক। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কে থাকবেন।’
‘আমি তো কাউকে দায়িত্ব দিই নাই। আমি দায়িত্ব দেয়ার কে? ছুটির দরখাস্ত দিয়েছি মাত্র। হাউএভার ভালো থাকুন ভাই।’
আবিদুর মাথা নিচু করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজেকে তার বড় কুৎসিত আর উদ্ভট লাগে। চোখের কোনায় একটু বাষ্প এসে কত কথা কত স্মৃতি জাগিয়ে যায়। অনেকগুলো দিন কাটিয়ে গেল। যে চাকরি সে নিয়ে কোনো মায়া নেই। নিয়মিত বেতন নেই। বিজ্ঞাপন সেকশনে ঘ্যানরঘ্যানর করে কখনো দু-একশ টাকা পাওয়া যায়। একে চাকরি বলে না, পাগলামি স্রেফ পাগলামি। তার লেখার নেশা। নেশায় পাগলপারা। লেখা এখনো চলবে, তেমন গতিময় হয়তো থাকবে না; এ তার কিশোরবেলার শখ। সে শেষ করে আনা সম্পাদকীয় একপাশে সরিয়ে রাখে। হাশিম একপলক শিরোনাম দেখে বলে, –
‘সজল ভাই আজকের ম্যাটার রাতে দিয়ে রেখেছেন। আগামীকাল যেতে পারে। সজল ভাই আসলে তাকে দিন।’
‘আচ্ছা। হাশিম ভাই থ্যাঙ্কিউ।’
‘ওয়েলকাম।’
হাশিম চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলে কিছু অবসর পাওয়া যায়। আবিদুর অসমাপ্ত লেখা প্যান্টের পেছন পকেটে রেখে উঠে পড়ে। সাইকেল হাতে নিয়ে বের হতে হতে গেটের বাইরে যেতে যেতে বলে উঠে, –
‘আসি হাশিম ভাই। খোদা হাফিজ।’
হাশিম কথা বলল কি বলল না শোনা হয় না। তার ঠোঁটে আরেকটা সিগারেট। দেবেন টেবিলে চা দিয়ে গেছে। সে ভাবলেশহীন একপলক দৃষ্টি ফেলে ভেতরে চলে যায়। এখন নির্দিষ্ট টুলে বসে থাকবে সে। সাতাশ-আটাশ বছরের যুবক। একা একা খুব চুপচাপ। চোখের দৃষ্টিতে মধ্যবয়স খেলা করে। জীবনকে অনেক দেখা হলো। আবিদুর ছোট দীর্ঘশ্বাস আলগোছে ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোয়। তার নিজেরও কি কম অভিজ্ঞতা? এই তো জীবন। দেবেনকে নিয়ে একটি গল্প লেখার কথা। আলসেমিতে হয়ে ওঠেনি। এবার হয়তো সুযোগ পাওয়া যাবে। আবিদুর দু-হাতে সাইকেল আলগা করে তিন সিঁড়ি পেরিয়ে উপরে ওঠে। ছোট গলি হেঁটে হেঁটে রাস্তার ভিড়ে এসে থমকে দাঁড়ায়। কোথায় যাবে এখন? মন আচমকা খারাপ হয়ে গেছে। এই চাকরি থাকা না থাকা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই, বরং একঅর্থে মুক্তি; তারপরও কোথাও বুঝি অপমানের সূ² কাঁটা খচখচ বিঁধতে থাকে। গতকালকেই বলতে পারতেন মালিক। কেন বলেন নাই? তখন আকাশের নৈর্ঋত কোনায় মেঘ। বৃষ্টি নামবে অথবা নয়। জুনের শুরুতে প্রকৃতি এমনই হয়। কখনো রোদ, উজ্জ্বল আকাশ, পরক্ষণে অন্ধকার নেমে আসে; অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। অনেকখানি জীবন-বেঁচে থাকা আর অস্তিত্বের রোদ-মেঘ-বৃষ্টিজল খেলা। এইসব আবোল-তাবোল ভাবনা মাথায় এসে কিলবিল শেষে বিমর্ষ রেশ রেখে যায়। কোথায় হারিয়ে গেল বেকারত্ব আর অপরাধ প্রবণতা সম্পাদকীয়র হাজার ভাবনার স্ফুলিঙ্গ। আজ থেকে বেকার সেও।
নিজের প্রতি অবহেলা আর তাচ্ছিল্য করে বেঁচে থাকা। সত্যিই কি তাই? একজন ব্যক্তি নিজেকে সম্মান না করলে বেঁচে থাকার মূলধন কোথায়? অনুপ্রেরণা আর দায়? অনেক আশা নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছিল। একটি চাকরির জন্য কার কাছে না গিয়েছে! ঢাকায় থাকার জায়গা নেই, হোটেলে-হোটেলে থেকেছে, সস্তা হোটেল। সেই আবাসনের ছোট্ট ছোট্ট কক্ষে মধ্যরাতে কত খেলার নিশ্চুপ গভীর শ্বাস খেলা শুনেছে। আবর্জনার মধ্যে থেকেও নিজেকে কলুষিত করেনি। ডিসিপ্লিনড জীবন। শৃঙ্খলা ভালো লাগে। দুর্বল মানুষের জন্য নিয়মনীতির অবিকল বাস্তবায়ন হলো রক্ষাকবচ। সেশনজটের কারণে সাড়ে তিন বছর খুইয়ে হাতে রইল তিনের মতো ছয় মাস, আবেদন আর পরীক্ষা নামক প্রহসনে অভিনয় করতে করতে যতনা নিজের প্রতি করুণা জমে উঠেছিল, সেই তুলনায় হাজার গুণ বিবমিষা-ঘৃণা এই সমাজ অনিয়মের নিয়মকানুন আর সিস্টেমের প্রতি; বুকের গোপন গহিনে বোধকরি লালন করে আজো।
আবিদুর গল্পপাগলা মানুষ, নির্বোধ, গল্পের কাহিনির মতো জগৎ সংসারে সবকিছু সাজানো-গোছানো সৎ পরিচ্ছন্ন থাকে না, এখানে ভিলেন মানুষেরাই নায়ক, আর তার মতো সহজ-সরল ডিসিপ্লিনড নির্বোধেরা বিবেক চোখে অশ্রæ নিয়ে নিয়মনীতি আর দর্শনতত্ত্বের গান গায়, দোতারা বাজে; পাবলিক মাথা দোলায়। আবিদুর তেমন গল্পই লেখে। একদিন সকলে গল্প পড়ে বাহবা দেবে এমন দিবাস্বপ্নের কাজল চোখের পাতায়। তেমনই কোনো লেখা দিতে এসে নোটিশ বোর্ডে দেখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। সাব-এডিটর নেয়া হবে। বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি আলোচনা সাপেক্ষে। পরদিন সকাল এগারোয় তিনবার ড্রাফট শেষে ফ্রেশ কপি আবেদনপত্র নিয়ে হাজির। নিউজ এডিটর শেখ আবুল হাসানাত কী বলবেন? তার ঠোঁটে সবসময় হাসি।
‘আবিদুর ভাই, করছেন কী? এ তো মেট্রিক-ইন্টার পাসের চাকরি। কাজ কী করতে হবে জানেন কিছু?’
‘শিখিয়ে দেবেন।’
‘হা হা হা! ওই যে দেখেন রমেশ ক্যাসেট প্লেয়ার শুনছে। সকাল সাতটার খবর। সেই রেকর্ডেড খবর শুনে শুনে লিখতে হবে। এরশাদ সরকারের আমল, তার অমিয়বাণী হলো নিউজ হেডিংস। নিউজ হেড বোঝেন? দুই কলাম আট ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট কত শুনেছেন? ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপন?’
‘না তো ভাই… বুঝি না।’
আবিদুর তখন যতটুকু না জানার লজ্জায় বিব্রত, তার চেয়ে কেন এত যতেœ আবেদনপত্র লিখে বড় আশা নিয়ে এসেছে ভাবনায় মরে যেতে শুরু করে। কে বলবে এই তো কয়েক মাস আগে মৎস্য অধিদপ্তরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পদে পরীক্ষা দিয়েছিল, ভালো পরীক্ষা, কিন্তু সবই নাকি পুরনো লোকবলের বৈধকরণ। এই দেশে কোনটা যে বৈধ আর কে অবৈধ বোঝা বড় দায়।
‘আবিদুর ভাই, আপনি দরখাস্ত নিয়ে যান, এই চাকরি আপনার জন্য নয়, এখানে বেতন-টেতন নেই, কোনো মাসে হয়… হয় না, কীভাবে কাজ করবেন? এসব ক্লিন মানুষের চাকরি নয় রে ভাই।’
আবিদুর আর একটিও কথা না বলে আলগোছে চলে আসে। নিজের ভাবনা আর অজ্ঞতায় চোখ-মুখ লাল। তারপর দিন-মাস পেরিয়ে আকস্মিক একদিন ডাক পড়ে। দৈনিকের সহকারী সম্পাদক পদে কাজ করবেন? ইতোমধ্যে গল্প-কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে সমাজ উন্নয়নের ঠিকাদারের মতো বেশ কতগুলো আর্টিকেল লেখা হয়েছে। কেউ বলে পোস্ট-এডিটোরিয়াল কেউ উপসম্পাদকীয়। লিখতে ভালো লাগে। একদিন বিকালে খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম হল এন্ড পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান নাম হেমায়েত আলী পাবলিক লাইব্রেরি) গ্রন্থাগারিক আবুল কালাম আজাদ স্যার জিজ্ঞেস করেন, –
‘দেশের দুর্নীতি নিয়ে পরপর তিনটি লেখা তোমার?’
‘জি স্যার।’
এইসব লেখায় সমস্যার সমাধান হয় কিনা, হলে কতটুকু সেই ভাবনা কখনো অনুরণিত হয়… হয় না, সবচেয়ে বড় বিষয় তৃপ্তি আসে, অহমও, তার লেখা ছাপা হয়, মানুষজন পড়ে, কেউ কেউ ‘উচিত কথা… ভালো লিখেছেন’ বলে মন্তব্য করে আর উৎসাহ দেয়। আবিদুর তেমনই কোনো কেরামতি ভেবে নেয়। আসলে মজেজা অন্যখানে, যিনি কাজ করছেন, বিসিএসে টিকে অন্যত্র চলে যাবেন, তাই পদ ফাঁকা; আবিদুর সেখানে জয়েন করতে পারে।
‘আমি তো স্যার সময় দিতে পারব না।’
‘সকালে বা সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা কাজ করবে। এই এডিটোরিয়াল পেজ তৈরি করে দেয়া। তোমার ইন্টারেস্টেড বিষয়।’
আবিদুরের লোভ হলো, লোভ আগুপিছু ভাবে না, সোনার আপেল মিলবে কি না, নাকি কোন গভীর খাদে আছড়ে পড়তে হবে বোঝে না, আহা কিছু পেতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয়, ঝাঁপ দিতে হয়; সে রাজি হয়ে গেল। নেপথ্যে দু-একজন বন্ধুর উসকানিও ছিল। সেই কাজের বেতন কত, কী কী সুবিধা জানা হলো না, জানা হয়ে যাবে, আগে চেয়ারে তো বসা হোক। চেয়ার সেই মুরগির খোপরামতো আলো-অন্ধকার ঘর, মাথার উপর ব্রিটিশ আমলের ফ্যান, যখন অন করা হয়, সত্তরের সাইক্লোন; তীব্র গরমেও তাই বন্ধ করে রাখে সে। এডিটোরিয়াল লেখায় মনোযোগ নষ্ট হয়। প্রতিদিন অন্যূন তিনটি দৈনিক দেখে বেছে বেছে নিউজ পড়ে। কোন বিষয়ের উপর লেখা যায়? এডিটোরিয়াল হলো ভিউজ, নিউজের ভিউজ, সম্পাদকের কথা, জনগণের বার্তা; দিনে দিনে ক বছরে দেড়-দুই হাজার সম্পাদকীয় লেখা হলো। কাল থেকে ছুটি। কোনো কোনো ছুটি মন খারাপ করে তোলে। সেই ছুটি যদি অকারণ অব্যাখ্যাত থাকে, আরো পীড়া দেয়।

কয়েকদিনের মধ্যে প্রেস ক্লাবে চাউর হয়ে গেল নিউজ। আবিদুর রহমান ছ্যাকড। পত্রিকার মানুষও কখনো কখনো খবর হয়, তার বেশিরভাগই মন্দ ঘটনার বার্তা। অ ইধফ ঘবংি রং এড়ড়ফ ঘবংি ভড়ৎ ঔড়ঁৎহধষ. আবিদুর নিশ্চুপ বসে ঢাকার দৈনিক পড়ে। এরই মধ্যে চার-পাঁচজনকে কাহিনি শুনিয়েছে। কেন? যে চাকরি নিয়ে তেমন মায়া নেই, বেতন ঠিকমতো হয় না, সে আবার কী গল্প? আসলে নিজেকে বড় অপমানিত মনে হতে থাকে। যদি বুকের নিশ্বাস হালকা হয়। কোন কারণে চাকরি যেতে পারে? সে কি ছুটি নিতে পারে না? পত্রিকায় বছরে ধর্মীয় দিনগুলোয় মাত্র ছুটি। সরকারের জরুরি সেবার মতো সপ্তাহের সাত দিনই কাজ। তার আবার কাজ কী? সকাল অথবা বিকালে দেড়-দুই ঘণ্টা, কখনো লেখক-প্রদায়ক এলে একটু আড্ডা হয়, লাল চা চলে; ভালো লাগে। এই তো!
শাহিনুর হিরু পত্রিকার ইউনিয়ন ইউনিটের সভাপতি। প্রেস ক্লাবে এদিক-ওদিক ব্যস্ত হেঁটে হেঁটে সামনে এসে বসে। তারপর কোনো ভূমিকা নেই, পটভূমি নেই; প্রস্তাব।
‘শোনেন আবিদ ভাই, আপনি একটা আবেদন দেন, মালিক-সম্পাদক কীভাবে চাকরি খায় দেখি।’
‘আচ্ছা দেব।’
‘আজকের মধ্যেই দেবেন বুঝলেন?’
‘আচ্ছা।’
আবিদুর জানে এরা মালিকেরই মানুষ। কখন কোথায় কম্বল পাওয়া যাবে, রমজান আর ঈদ উপলক্ষে চিনি-সেমাই-খেজুর-কিশমিশ, কোথাও কোনো ঘাপলা ধরতে পারলে দু-পাঁচশ টাকা, চা-শিঙাড়া, সঙ্গে ট্রিপল ফাইভ ইত্যাদি। আবিদুর এসব পারে না। এও জানে তার কাঁধে রাইফেল রেখে মিছিমিছি গুলি গুলি খেলা হবে মাত্র, যা চলে গেছে, মাথাব্যথা নেই, বিশ্বাসও; তারপরও শেষ দেখতে সাধ জাগে।
‘শোনেন ভাই আজ একটু পর ইউনিয়নের মিটিং, আমি আপনার বিষয়টা তুলব, আপনি পুরো ইতিহাস বলবেন; তারপর যা করার… দেখেন খেল।’
‘আচ্ছা।’
শেষ তামাশা দেখার আগ্রহ হয় আবিদুরের। পত্রিকার মালিক আবার ইউনিয়ন সভাপতি। কীভাবে হয়? কেননা তিনি রাজধানী থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত দৈনিকের স্পেশাল করেসপন্ডেন্স। সকলের পরিচিত সাজেদুর রহমান লুলু। সকলের লুলু ভাই। সিটিং-মিটিং এন্ড ইটিং। বিকালের আলো ধূপছায়া। প্রেস ক্লাবের রুম থেকে পুবে সবুজ ঘাসের চত্বর। তারপর সীমানা দেয়াল পেরিয়ে ফুটপাত আর রাস্তা। ফুটপাতে স্পঞ্জ স্যান্ডেলের দোকান। দোকানদার মাদুর বিছিয়ে পসরা সাজিয়ে রেখেছে। সূর্যের শেষ তীর্যক আলোয় রং-বাহারি স্যান্ডেলগুলো চকমক করতে থাকে। আবিদুরের পায়ের স্যান্ডেল অনেক ময়লা। মনের গহিনে জমে উঠেছে অকারণ ক্লেদ। ছবিলাল একে একে প্লাস্টিকের চেয়ার সাজিয়ে দিলে আলোচনা শুরু। মানুষ কত কথা বলে! শপথ নেয়। তারপর সবশেষে পরস্পরের কাছে জিজ্ঞেস করে, –
‘কেমন বক্তব্য দিলাম?’
‘মারহাবা! ফাটিয়ে দিয়েছেন বস।’
আবিদুর নিশ্চুপ শুনে যায়। পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছে, যাদের কলম নিখুঁত লেখে কিন্তু মুখ চলে না। সে সেই গোত্রের। তারপরও কথা বলতে হয়, এলোমেলো বাক্যেও যদি সকল যন্ত্রণা কমে আসে, বুক হালকা হয়, কিন্তু তেমন কিছু ঘটে না। সভাপতি লুলু ঠিক সে-সময় পকেট থেকে নিউজপ্রিন্ট কাগজে ছাপা এক পুস্তিকা বের তুলে ধরে বলে উঠে, –
‘যে বা যাহারা এই প্লেবয় চটি আমার টেবিলে রাখিয়াছ, তাহাদের জন্য শাস্তি রহিয়াছে। হা হা হা!’
‘কী বই… কী বই? দেখি বস কয়টা ছবি?।’
আবিদুরের বক্তব্য সেই হট্টগোল আর চটি কাড়াকাড়িতে কোথায় কোন তলায় ভেসে যায় কে জানে। সে আকস্মিক থমকে নিশ্চুপ তামাশা দেখা শুরু করে। খেল দেখেন খেল! নোংরা কদর্য। তখন কেন জানি সেই ফ্যানটাসি উপন্যাসের কথা মনে আসে। জগৎ এখন এমনই। এখানে-ওখানে আজগুবি প্রহসন। লুলুদের দখলে সবকিছুই।

লে লুল্লু লে… লুল্লু লে!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়