খতিয়ে দেখতে শিগগিরই তদন্ত কমিটি : ঢাকা-টিটি কলেজ ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি

আগের সংবাদ

সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল : সড়ক পরিবহন আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

উইল স্মিথ : অস্কার মঞ্চে চড় ও যত বিতর্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এক চড়েই অস্কারের মঞ্চ কাঁপিয়ে দিয়েছেন উইল স্মিথ। হলিউড তারকা উইল স্মিথের স্ত্রী জাডা স্মিথকে নিয়ে অস্কারের উপস্থাপক ক্রিস রক রসিকতা ঠাট্টায় মজেছিল। এক পর্যায়ে মঞ্চে উঠে গিয়ে সঞ্চালক তথা কমেডিয়ান ক্রিস রককে কষে থাপ্পড় মারেন স্মিথ। এই অনাকাক্সিক্ষত ব্যবহারের জন্য উইল স্মিথের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে অস্কার কমিটি। ক্রিস রককে আঘাত করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত সোমবার একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস এ কথা জানিয়েছে। থাপ্পড়-কাণ্ডের জন্য স্মিথকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে একাডেমি তদন্ত করবে বলে জানানো হয়েছে।
অস্কারের আসরে মঞ্চে উঠে সঞ্চালককে থাপ্পড় কষিয়েছিলেন স্মিথ। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একাডেমি জানায়, তারা কোনো প্রকার সহিংসতা সমর্থন করে না। পরে গত সোমবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত রাতের ঘটনায় আমরা মি. স্মিথকে অভিযুক্ত করছি। আমরা এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছি, যেখানে ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে আমাদের নীতি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কমিটির পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে সম্পর্কে নানা মত ও আশঙ্কা রয়েছে। একাডেমির বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য হুপি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আমরা তার অস্কার কেড়ে নিতে পারি। কোনো না কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই।’ এছাড়া তাকে কয়েক বছরের জন্য অস্কার নমিনেশন দেয়া না হতে পারে।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানেই সহকর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন স্মিথ। সরাসরি ক্রিসের কাছে অবশ্য ক্ষমা চাননি তখন। স্মিথের কাণ্ড নিয়ে নানা রকম তর্ক-বিতর্ক চলেছে। শেষমেশ সোমবার ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে ক্রিসের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন স্মিথ। নিজের কাজকে অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য বলে তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রকাশ্যে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছা রাখি, ক্রিস। আমি সীমা ছাড়িয়েছি এবং ভুল করেছি।’
অভিনেতা স্মিথ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো লিখেছেন, ‘আমার কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত। আমি যে ধরনের মানুষ হতে চাই, এটা তার পরিচয় নয়।’ সেই সঙ্গে যোগ করেছেন যে, ‘হিংসা মাত্রই ক্ষতিকারক এবং ধ্বংসাত্মক। গত রাতের একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে আমার আচরণ গ্রহণযোগ্য ছিল না, ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি। কৌতুক আমাদের পেশার অংশ। কিন্তু জাডার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মজা করা আমার পক্ষে সহ্য কঠিন ছিল এবং আমি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম, যা ঠিক হয়নি।’ স্মিথ লিখেছেন, ‘আমার এই ব্যবহার বিশ্বজুড়ে যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমাপ্রার্থী অ্যাকাডেমি, অনুষ্ঠানের প্রযোজক এবং সব অংশগ্রহণকারীর কাছে। উইলিয়ামস পরিবার এবং কিং রিচার্ড পরিবারের কাছেও অপরাধ কবুল করছি। অস্কারের আলোকজ্জ্বল মঞ্চে আমার এ হেন আচরণ একটি দাগ ফেলে গিয়েছে। যা ক্ষমাহীন অপরাধ।’
উল্লেখ্য, এবারের অস্কারে ‘কিং রিচার্ড’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার শিরোপা জিতে নেন স্মিথ। পুরস্কার নিতে যেয়ে কেঁদে ফেলেন স্মিথ। সেই সঙ্গে স্মিথ তার কৃতকার্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। স্ত্রী জেডাকে নিয়ে ক্রিসের চটুল মন্তব্যেই ক্ষেপে ওঠেন উইল। ‘জি আই জেন’ ছবির নায়িকা ডেমি মুরের আদলে ছোট করে ছাঁটা চুলের জেডাকে নিয়ে ক্রিসের রসিকতা যে সহ্য করতে পারেননি, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন উইল। অ্যালোপেসিয়া-য় ভোগা জেডাকে নিয়ে মন্তব্যের পাল্টা হিসাবে চড় কষিয়ে দেন ক্রিসকে। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন উইল। গত বছরই ক্রিসের আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে। ‘উইল’ নামে সে আত্মকথায় উইলের সঙ্গে কলম ধরছেন মার্ক ম্যানসনও। তাতেই নিজের জীবনের অজানা বহু কথায় বিতর্কে জড়িয়েছেন উইল। জেডার সঙ্গে প্রায় ২৪ বছরের সম্পর্ক থেকে শুরু করে ছেলে জেডেন স্মিথের সম্পর্কে উইল নানা অজানা কথা জানিয়েছেন আত্মজীবনীতে। নিজের মানসিক অবস্থার বিষয়ে অকপটে জানিয়েছেন, কিশোর বয়সে আত্মহত্যার করার কথা ভাবতেন। ৫৩ বছরের অভিনেতার জীবনে খ্যাতি এসেছিল কম বয়সেই। ‘দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অব বেল এয়ার’-এর মতো সিটকমে অভিনয়ের আগে হিপ হপ মিউজিকে মন দিয়েছিলেন ডিজে জ্যাজি জেফের সঙ্গে। কম বয়সেই দেখেছেন, বাবার হাতে হেনস্থার শিকার মা। পরিবার ছেড়ে মায়ের চলে যাওয়ায় তিনি যে ভেঙে পড়েছিলেন, তাও স্বীকার করেছেন উইল। জানিয়েছেন, পরিবারের এই সংকটে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন। সে সময় তার বয়স ১৩। আত্মজীবনীতে উইল স্বীকার করেছেন, ১৯৯৩ সালে ‘সিক্স ডিগ্রিজ অব সেপারেশন’ ছবিতে কাজ করার সময় স্টকওয়ার্ড চ্যানিংয়ের ওপর টান জন্মেছে। সে সময় প্রথম স্ত্রী শেরি জ্যাম্পিনোর সঙ্গে চুটিয়ে ঘর করছেন উইল। যে জেডাকে ঘিরে মন্তব্যের পর ক্রিসের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উইল, তার সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ ছিল না। ২০১৬ সালে আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। এমনকি আত্মজীবনীর পাতায় স্ত্রীর সঙ্গে টুপাক শাকুরকে নিয়ে তার বিশ্বাসহীনতার কথাও জানিয়েছেন। আমেরিকান র‌্যাপার টুপাকের সঙ্গে জেডার ঘনিষ্ঠতা যে মেনে নিতে পারেননি, তাও স্বীকার করেছেন উইল। যদিও টুপাক এবং জেডা একসঙ্গে বড় হওয়ায় তাদের ঘনিষ্ঠতা যে স্বাভাবিক, তা জানিয়েছেন উইল। টুপাকের খ্যাতির কথা উল্লেখ করে উইল বলেছিলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের গোড়ায় সব সময় মনে হতো তাদের কথা। ও ছিল প্যাক। আর আমি তো আমিই।’
নিজের মতো ছেলে জেডেনও কম বয়সে পা রেখেছেন হলিউডে। তবে ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্কও যে সহজ ছিল না, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন উইল। ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার শাসনমুক্ত হতে চেয়েছিলেন জেডেন। ২০১৩ সালে ‘আফটার আর্থ’ ছবিতে জেডেনের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল উইলকে। বাবা-ছেলের জুটির বহু প্রতীক্ষিত সে ছবি অবশ্য বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সমালোচকেরা অখুশি ছিলেন বলে সাফ জানিয়েছিলেন। উইল জানিয়েছেন, এক দিকে বক্স অফিসে ব্যর্থতা। অন্যদিকে ছেলের আলাদা হওয়ার অনুরোধে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। উইলের জীবনে আরো বহু কাণ্ডে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে শোনা গিয়েছিল, জেডার সঙ্গে আলাদা থাকতে শুরু করেছেন উইল। সে সময় মা দ কে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। সেই সঙ্গে তন্ত্রনির্ভর যৌ নাচারেও লিপ্ত হতে শুরু করেছিলেন। এসবই জানিয়েছেন আত্মকথায়।
হলিউডের অন্যতম সুখী দম্পতি বলে পরিচিত উইল এবং জেডা। তবে ২০১১ সালে তিনি যে মাদকে আচ্ছন্ন থাকতেন, তা জানিয়েছেন আত্মজীবনীতে। দুবছরে চৌদ্দ বার সেই কড়া মাদক নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এমনকি যৌনচারের জন্য এক তান্ত্রিক সেক্স বিশেষজ্ঞের কাছেও নাকি গিয়েছিলেন।
এখানেই বিতর্ক থামেনি। গত বছর উইল বলে বসেন, নিজেদের সম্পর্কে খুবই খোলামেলা তারা। এমনকি বিবাহিত অবস্থায় থাকাকালীন দুজনেই অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বিয়ে মানেই যে জেলখানায় থাকা নয়, তাও বলেছিলেন উইল। এমনকি তাদের দুজনেই নাকি ইচ্ছে ছিল একটি হারেম রাখার। নিজের হারেমে হ্যালি বেরি এবং মিস্টি কোপল্যান্ডের মতো অভিনেতাদের রাখারও তার স্বপ্ন বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন উইল।
:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়