দুদককে টিআইবি : সিন্ডিকেটের চাপেই কি শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি?

আগের সংবাদ

জীবনযাপনে মানসিক সুস্থতাও জরুরি

পরের সংবাদ

বাংলা ভাষার বিকৃতি : কী বলছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যথাযোগ্য ব্যবহার, চর্চা আর সর্বজনীনতার ওপর ভাষার সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভাষা দুর্বল হয়ে যাওয়ার নানাবিধ কারণও রয়েছে। এর মধ্যে আছে বিকৃতিসাধন, রূপান্তর, ভাষার ব্যবহারে অসচেতনতা, অপব্যবহার প্রভৃতি। বিশ্বায়ন, আকাশ সংস্কৃতি, ডিজিটাইজেশনের কারণে ইংরেজির অধিক ব্যবহারের প্রভাবে মাতৃভাষা প্রবহমানতা হারাচ্ছে। তার ওপর আছে বিদেশি ভাষার আগ্রাসন। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নানা বিদেশি শব্দ ঢুকিয়ে বাংলা ভাষাকে দূষিত করছে, বিকৃত করছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, নাটক বা চলচ্চিত্রে ‘জগাখিচুড়ি’ ভাষার ব্যবহার মূল ভাষায় প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে রেডিও ও টেলিভিশনে ‘বিকৃত উচ্চারণে’ এবং ‘ভাষা ব্যঙ্গ’ করেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। কী বলছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। শুনেছেন রোমান রায়

গণমাধ্যমে যাতে ভাষার বিকৃতি না ঘটে এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে
রামেন্দু মজুমদার

বর্তমানে নাটক, সিনেমা, গণমাধ্যমে যে আমরা কথা বলি সেখানে প্রমিত বাংলার ব্যবহারটা খুবই কম। আমরা না জেনেই যেভাবে কথা বলি এতে ভাষার বিকৃতি হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এফএম রেডিওগুলোতে। এই এফএম রেডিওগুলোর কারণেই ভাষার বিকৃতিটা আরো বাড়ছে। তারা ইচ্ছে করেই বিকৃতি করছে ভাষার। এটার জন্য একবার হাইকোর্ট থেকে আইন করা হয়েছিল। এরপর তো আর এগোইনি। এখন যেভাবে ভাষার বিকৃতি করা হচ্ছে এটা খুবই আপত্তিকর। পার্লামেন্টে যখন আমাদের জনপ্রতিনিধিরা বক্তৃতা দেন তারমধ্যে ১/২ শতাংশ প্রমিত বাংলায় বলতে পারেন। সুতরাং সেখান থেকেই তো অনেকে সেটা শিখছেন। বিশেষ করে আমি গণমাধ্যমের কথাই বলব। গণমাধ্যম থেকেই লোকজন শিখে। গণমাধ্যমে যাতে ভাষার বিকৃতি না ঘটে এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে।

বাংলাকে যখন অশুদ্ধ করে বলি তখনই আমরা অপরাধ করি
আবুল হায়াত

খুবই কষ্ট পাই যখন দেখি নাটকে ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। কিছু মানুষ এগুলো জোর করেই করাচ্ছে। তাদের কথা হচ্ছে আমরা তো প্রমিত বাংলায় কথা বলি না। তাহলে নাটকে কেন বলব। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের একটাই বক্তব্য- ন্যাচারাল অভিনয় করার জন্য এ ভাষায় কথা বলতে হবে। এটা হতে পারে না। আমরা তো এই বিকৃত ভাষার জন্য যুদ্ধ করিনি। মানুষ তো ওই ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। প্রাণ দিয়েছিলেন প্রমিত বাংলা ভাষার জন্য। যেটা আমাদের মাতৃভাষা। কেউ তার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই পারে; কিন্তু সেটাও সঠিক শুদ্ধভাবে বলতে হবে। বাংলাকে যখন অশুদ্ধ করে বলি তখনই আমরা অপরাধটা করি। সে অপরাধবোধটাই যদি না থাকে, তাহলে তো তাকে সেখান থেকে ফেরানো যায় না। আমি যতদূর জানি সরকারে একটা নির্দেশনাও আছে নাটক, সিনেমায় শুদ্ধ ভাষা ছাড়া ভাষাকে নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু এগুলো কেউ মানে না। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়। রেডিও টেলিভিশন সেখানে যারা খবর পড়ছেন তাদের উচ্চারণে প্রচুর ভুল থাকে। এগুলো নিয়েও কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। জানি না এর কোনো উত্তোরণ হবে কিনা। সবকিছু তো সরকারি নির্দেশনা দিয়ে হয় না। নিজেদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
ভাষার প্রতি মানুষের
দরদ কমে গেছে
রফিকুল আলম

ভাষার বিকৃতি কিন্তু শুধু বাংলায় না। সব ভাষায় কম বেশি বিকৃতি হচ্ছে। একটার মধ্যে আরেকটা ঢুকে পড়ছে। সেটা সত্যি খুব খারাপ। এটা নষ্ট হচ্ছে নানা কারণে। মানুষের ভাষার প্রতি দরদটা কমে গেছে। কেন যে মানুষের নিজস্ব ভাষার প্রতি দরদ কমে গিয়েছে ঠিক বলতে পারছি না। বাংলাদেশে ভাষায় যে অপভ্রংশ হচ্ছে এটা রোধ করা কঠিন। পৃথিবীর অনেক দেশেই ভাষায় অপভ্রংশ হচ্ছে। আমি গানের ক্ষেত্রে বলব খুব একটা বিকৃতি হচ্ছে না। আগে প্রেমিকাকে তুমি ছাড়া বলা যেত না। এখন তো তুই তুকারি হচ্ছে। আমি বলব এগুলো বাংলা ভাষার বিকৃতি না রুচির বিকৃতি। টেলিভিশন নাটকগুলোতে আঞ্চলিকতার প্রাধান্য পাচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে নাটক করলে সেটা সহজে মানুষ বলতে পারে। ওই নাটকগুলো গ্রাম-বাংলার মানুষরা পছন্দ করে। এখন তো তাদেরকে টার্গেট করে নাটক বানাচ্ছে। তাই সহজে এটা রোধ করা যাবে না।

ভাষার সঠিক চর্চা না হলে
পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে
শর্মিলী আহমেদ

আন্দোলন করে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি। এটা আমাদের মাতৃভাষা। এখন যদি মাতৃভাষাকে বিকৃতি করা হয়, তাহলে তো খারাপ লাগে। ভাষার সঠিক চর্চা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে। যেখানে ভাষার বিকৃতি হচ্ছে সেখানে আসলেই চিন্তা হয়। একটা অঞ্চলের ভাষা দিয়ে যদি পুরো নাটক করা হয় তাহলে অন্য কথা। কিন্তু যদি একটি শহরের শিক্ষিত পরিবারের গল্পের নাটকে ভাষার বিকৃতি করা হয় তাহলে তো সমস্যা। তাহলে এই নাটকগুলো থেকে মানুষ কী শিখবে। বিশেষ করে বাচ্চারা। এটা আসলে চিন্তার বিষয়। আমরা যখন বিটিভিতে নাটক করেছি তখন তো এমন ছিল না।
এটা আসলে হঠাৎ করে হয়েছে। কোনো একটা জনপ্রিয় নাটকে ভাষার এমন ব্যবহার করা হয়েছিল। তারপর থেকেই এটার প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি একটা সিরিয়াল করছি যেখানে ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে একটা পরিবার। এখানে আমার চরিত্র হচ্ছে গ্রামের মানুষ। ছেলে শিক্ষিত হয়ে শহরে চাকরি করে সবার সঙ্গে আমাকেও শহরে নিয়ে আসে।
এখানে সবাই শহরের শুদ্ধ ভাষায় কথা বললেও আমি গ্রাম শহরের ভাষায় কথা বলি। এটা নিয়ে মজার মজার দৃশ্য হয়। এখানে কিন্তু আমার চরিত্রের ভাষার কোনো বিকৃতি করা হয়নি। গল্পের প্রয়োজনে আমাকে সে ভাষায় কথা বলতে হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়