আবহাওয়া অধিদপ্তর : আগামী তিন দিন বৃষ্টি হতে পারে

আগের সংবাদ

ভাষানীতি প্রণয়নের তাগিদ : প্রযুক্তিতে পিছিয়ে, উচ্চশিক্ষায় অবহেলিত বাংলা ভাষা

পরের সংবাদ

জীবনযাপনে মানসিক সুস্থতাও জরুরি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীরে কোন রোগ নেই মানেই আপনি শতভাগ সুস্থ? না। সুস্থতা মানুষের এমন একটি অবস্থা, যা আপনার শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকাকে প্রকাশ করে। মূলত: কোভিডের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, সামাজিক মেলামেশা বা আচরণ নষ্ট হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যও প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, লোকলজ্জার ভয় ঝেড়ে ফেলে প্রত্যেককে তার নিজের মানসিক অবস্থা যাচাই করা প্রয়োজন।
ডা. আশরাফুন্নাহার চৈতী

সমাজে কোভিডে সৃষ্ট অসমতা মানুষের মধ্যে দুর্বলতা তৈরি করেছে। এটা মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনাকালের শুরু থেকেই অর্থনৈতিকভাবে সৃষ্ট সংকটের কারণে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভীত ও বিষন্নতায় ভোগা মানুষদের সংখ্যা যেন শুধু গাণিতিক হারে বেড়েই চলেছে। বেড়েছে বেকারত্ব। নানান শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে এ বিষয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। তবে নতুন নতুন গবেষণা বলছে, মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতা ক্ষয় ধরাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এক গবেষণা বলছে, করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতায় বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষে।

সংকটের সময়ে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার মানুষের মন ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের মনকে অবচেতনভাবে দিনের পর দিন আরও বেশি জাজমেন্টাল বানিয়ে ফেলছে। ধীর স্থিও মনোযোগের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।

নেতিবাচক মনোভাব
মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সারা বিশ্বেই ক্রমশই বাড়তির দিকে। মহামারিকালের বিধিনিষেধে মানসিক স্বাস্থ্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসাপদ্ধতিও উল্লেখ করার মতো উন্নত হয়েছে। তবে সচেতনতার অভাবে মানসিক রোগ ও রোগীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এখনো জোরালোভাবে বিদ্যমান। এ জন্য অনেক সময় কাউন্সিলিং নিয়ে রোগী অবহেলার শিকার হয়। সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা
একেকটা মানসিক রোগের ধরন ও লক্ষণ একেক রকম। তবে এগুলোর সবই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহ বেশি। ফলে এই রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নীরবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। মানসিক রোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সচেতনতা, যা প্রতিরোধ ও প্রতিকার উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি।
অ্যাংজাইটি, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, ওসিডি, হেলথ অ্যাংজাইটি, পোস্ট ট্রমাটিক ট্রেস ডিজঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া, কনভারশন ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার মানুষ প্রতিনিয়ত এগুলোতে ভুগছে। এ ছাড়া আরও নানা রকমের মানসিক রোগের অস্তিত্ব আছে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ যেকোনো বয়সের মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসা হওয়া জরুরি
মানসিক রোগীদের বিশাল একটা অংশ সুস্থ হওয়ার আশায় ( মেডিকেল চিকিৎসার বাইরে) নানা রকম অপচিকিৎসার আশ্রয় নেয়। এতে রোগী দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকে। ভুল জায়গায় প্রচুর টাকাপয়সা অপচয় করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফলে একটা সময় হতাশ হয়ে যায়, হাল ছেড়ে দেয়, আবার কেউ কেউ শেষ চেষ্টা হিসেবে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করে। তত দিনে রোগের জটিলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। আর আর্থিক সংগতিও থাকে না। সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে। সময়মতো রোগের লক্ষণ নির্ণয় করে তার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। যেন আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক রোগের কষ্ট ও ভয়াবহতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই একধরনের রোগ।
শারীরিক রোগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে এর চিকিৎসা হওয়া জরুরি। প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক মনোভাবের সুস্থ প্রয়োগও। একটু সচেতন হলেই ও সঠিক চিকিৎসা অনুসরণ করলে সহজেই ভালো থাকা সম্ভব।

সচেতনতা বাড়ানোর উপায়
মূল্যস্ফীতির চাপ যেমন সামলানো যাচ্ছে না, তেমনি নিত্যপণ্যের দামেও লাগাম টানা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশপাশে আটকে আছে। এ কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অর্থনৈতিক বা পারিবারিক বিবিধ সংকটও মানসিক অশান্তির কারণ।
প্রত্যেক মানুষের সামান্য সচেতনতা ও সহযোগিতা মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে পারে।

১. মানসিক রোগ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ও কুসংস্কার দূর করার জন্য এ বিষয়ে সব জায়গায় সহজ ও স্বাভাবিকভাবে আলোচনা করা, এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও অন্যের অভিজ্ঞতা (অনুমতি সাপেক্ষে) ভাগাভাগি করা

২. মানসিক রোগকে রোগ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া ও অন্যান্য শারীরিক রোগের মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যতœ নেওয়া ও অন্যকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা।

৩. স্বাভাবিক জীবনযাত্রার বাইরে অস্বাভাবিক যেকোনো লক্ষণ বা আচরণ দেখা দিলে নির্ভরযোগ্য কারও পরামর্শ নেওয়া, পেশাজীবীদের শরণাপন্ন হওয়া ।

৪. মানসিক রোগকে গালি হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেওয়া। রোগীকে রোগের নাম ধরে না ডাকা।

৫. কোভিড-উত্তর পরিস্থিতিতে শিশু-তরুণদের দক্ষতার সঙ্গে বেড়ে উঠতে কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়), অফিস বা কর্মস্থলগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা ও মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী নিয়োগ করা।

আমাদের চারপাশের নানাবিধ সম্পর্কের জটিলতা, মায়ায় বাঁধা সংসারের নানাবিধ ছলনা, জীবনযাপনের স্টাইল, পদ্ধতি, পারিবারিক-সামাজিক সম্বন্ধ, মিথস্ক্রিয়াসহ বৃহত্তর জাতীয় জীবনের অনেক প্রভাব আমাদের মনের ওপরে পড়ে।
তাই শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি যতœ নিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যরও। স্বাস্থ্যকর খাবার ও ডায়েট মানতে হবে। এছাড়া কর্মক্ষম ও সুস্থ থাকার ওপর বিশ্বাস রাখলেই সুস্থতাও ধরে রাখা সম্ভব।

লেখক : বর্তমানে মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ বিষয়ে (স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ) অধ্যায়নরত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়