দুদককে টিআইবি : সিন্ডিকেটের চাপেই কি শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি?

আগের সংবাদ

জীবনযাপনে মানসিক সুস্থতাও জরুরি

পরের সংবাদ

ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলন ভাঙনে বিলীন জমি-ভিটা : ধামইরহাট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল আজিজ, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে : ধামইরহাটে আত্রাই, ছোট যমুনা ও শ্রী নদীর ১২টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জমি ও বসতভিটা। জমি মালিকরা বাধা দিলেও প্রভাবশালীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না
জানা গেছে, আত্রাই নদীর শিমুলতলী ঘাট, নন্দনপুর, চক হরিহরপুর, ছিলিমপুর. চকনটী, চাঁনপুর, রসুলবিল, ছালিগ্রাম, কেশবপুর, মাহমুদপুর পয়েন্ট, ইশবপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর ইনশিরা, দিওর, ইশবপুরঘাট, রাঙ্গালঘাট, ত্রিমোহনীঘাট এবং শ্রী নদীর রূপনারায়ণপুর, কোকিল, পাগলদেওয়ান ঘাটের বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে ছোট যমুনার ইনশিরা, দেওর, রাঙ্গালঘাটে বালু উত্তোলনে শতাধিক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চক হরিহরপুর, রসপুর, তালতলী, চাঁনপুর, কেশবপুর নদীর তীরবর্তী ভূমি আত্রাইগর্ভে বিলীন হয়েছে। শেখাহাটির বিশ্বনাথ দাস, দুখুমিয়া, মফিজউদ্দীন, গাদরু, ভোলানাথসহ আরো অনেকের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। পথে বসেছেন ওই সব এলাকার অনেক জমি মালিক। তারা বাধা দিয়েও প্রভাবশালীদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ইজারা না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদার অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জেলা প্রশাসন অভিযান চালাতে এলে তারা আগেই জেনে যায়। এর পর ট্রলি ট্রাক নিয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, রাঙ্গালঘাট ও ইসবপুরঘাটে নূর হাসান ট্রাক-ট্রলি দিয়ে বালু বিক্রি করছে। এতে রাঙ্গাল ঘাটে নদীর দুই পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। আত্রাই নদীর ব্রিজের কাছ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছের বালুদস্যুরা। বালু তোলার ফলে রসপুর, ছালিগ্রাম বন বিভাগের সহস্রাধিক গাছ নদীতে পড়ে গেছে। বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ভোলা চৌধুরী, ঘাটুয়াল, বিশ্বনাথ চৌধুরীর ওয়ারিশদের একাধিকবার মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে। তবু বালুদস্যুদের সঙ্গে ভূমি মালিকরা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। একইভাবে বালুদস্যুরা সংঘটিত হয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু বিক্রি করছে। তাদের নেই কোনো ইজারা। এদিকে শ্রী নদী থেকে একশ্রেণির লোক অজানা ক্ষমতার দাপটে বালু তুলে বিক্রি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আত্রাই, ছোট যমুনা ও পার্শ্ববর্তী জমি থেকে অর্ধশত ট্রাক-ট্রলি দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ওই গাড়িগুলোর চাপে অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাদের বালুর ট্রলিতে ত্রিপল বা ঢাকনা না থাকায় ধুলাবালু উড়ে পেছনের যানবাহন ও পথচারীদের চোখেমুখে বালু ছড়িয়ে পড়ছে। বালুদস্যুরা একইভাবে কয়েক বছর ধরে বালু বিক্রি করে আসছে। ভোলা চৌধুরী বলেন, আবু বক্কর ও ফজলুর রহমানের দাপটে পিছু হটে হাইকোর্র্টে মামলা দায়ের করেছি। তাদের নামে নোটিস জারি করা হয়, কিন্তু বালু কাটা বন্ধ করে না। জেলা প্রশাসক দখল পাচ্ছেন না, টেন্ডারও দিতে পারছেন না। জমিগুলো আমার বাবার নামে রেকর্ডভুক্ত। তারা জুলুম করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে আসছে। ওরা আমাকে শেয়ার নিতে প্রস্তাব দেয়, কিন্তু আমি রাজি হইনি। পতœীতলা ও ধামইরহাটের ইউএনও শিমুলতলী, চানপুর ঘাটে বালুদস্যুদের ধাওয়া করেছেন। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারেননি।
উল্লেখ্য, বালুবাহী ট্রাক ধামইরহাট থানা সদরের ওপর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ট্রাকের ধাক্কায় সম্প্রতি ৭ জন নিহত হয়েছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিব্বির আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আত্রাই নদীর ৩টি পয়েন্টে ইজারা আছে। বাকিগুলোর নেই। তিনির আরো বলেন, শিমুলতলীর তকিউদ্দীন সেতুর পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসন গিয়েও তাদের আটক করতে পারেনি। এর আগেই যানবাহন নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সারাদেশে নদী কমিশনের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকলেও ধামইরহাটে হচ্ছে না। বর্তমানে আবু বক্কর চেয়ারম্যান বালু বিক্রি করছেন। প্রশাসনক ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। থানার ওসি মোজাম্মেল হক কাজী হক বলেন, আমি নতুন এসেছি। কোনো এলাকা দেখা হয়নি- অনুমতি পেলে ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়