তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী : পুরস্কারদাতাদের ওয়েবসাইটে নাম নেই খালেদার

আগের সংবাদ

‘গণপাসে’ বেড়েছে দুর্ভাবনা : তিন কারণে পাসের উল্লম্ফন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, মাত্র ৩ বিষয়ে পরীক্ষা হ ইংরেজি-গণিত পরীক্ষা না হওয়া

পরের সংবাদ

সাহিনুদ্দিন খুনের মাস্টারমাইন্ড সাবেক এমপি আউয়াল : ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত করেছে ডিবি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : রাজধানীর পল্লবীতে ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ল²ীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ আউয়ালকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নেপথ্য সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন আউয়ালের সেকেন্ড ইন কমান্ড তাহের ও প্রজেক্ট ম্যানেজার কিবরিয়া। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন ১৪ জন আর পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন তিনজন। ইতোমধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে নয়জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দুজন। আর পলাতক আছে দুজন। মূলত পল্লবী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে ব্যবসায়ী সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। এম এ আউয়াল ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব।
দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে এম এ আউয়ালসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগ। এ সপ্তাহের মধ্যেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হতে পারে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকে আলিনগর আবাসিক এলাকায় নিহত সাহিনুদ্দিনের বাপ-দাদার সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে ল²ীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়াল হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড নামে একটি প্রজেক্ট করেন। আউয়াল ওই প্রজেক্টের এমডি ছিলেন। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন তাহের আর প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন কিবরিয়া। আউয়াল প্রজেক্টের সুবিধার্থে স্থানীয় সাহিনুদ্দিনকে হাত করেন। তার মাধ্যমে প্রজেক্টের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতেন। এছাড়া ওই এলাকায় সুমনেরও আধিপত্য ছিল। তাকেও হাত করেন আউয়াল। এই দুজনকে দিয়ে তার প্রজেক্টের সার্বিক কাজ করতেন। কিন্তু এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সুমন ও সাহিনুদ্দিনের মধ্যে দ্ব›দ্ব ছিল অনেকটা প্রকাশ্য। তারা একে অন্যকে দেখতে পারতেন না। অন্যদিকে সাহিনুদ্দিনও আউয়ালের কথা সব সময় শুনতেন না।
আউয়ালের প্রজেক্ট ছাড়াও মোস্তফা নামে আরেকজনের প্রজেক্টে কাজ করতেন সাহিনুদ্দিন। এতে আউয়ালের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। গত বছরের মে মাসে আউয়াল তার প্রজেক্টের অংশ হিসেবে একটি দেয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু ওই দেয়াল নিজের জায়গায় করা হয়েছে বলে সাহিনুদ্দিন তা ভেঙে ফেলেন। এতে আউয়াল ক্ষুদ্ধ হন। পরে সাহিনুদ্দিনকে শিক্ষা দিতেই সুমনকে

তার হাত-পা ভেঙে দিতে বলেন। সুমন এই সুযোগে পূর্ব শত্রæতার জের ধরে এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করতে সাহিনুদ্দিনকে খুনের পরিকল্পনা সাজান। পরে সুযোগ বুঝে ১৬ মে সুমন তার সহযোগীদের নিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন। এই হত্যার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করেন ডিবি ও র‌্যাবের একাধিক টিম।
১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত : সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত করেছে ডিবি। তারা হলো- সাবেক এমপি এম এ আউয়াল, সুমন বেপারি, টিটু, তাহের, কিবরিয়া, মুরাদ, ইব্রাহিম সুমন, রকি তালুকদার, শফিকুল ইসলাম, শরীফ, তুহিন মিয়া, হারুন, ইমন, নূর মোহাম্মদ হাসান, ইকবাল হোসেন, মনির ও মানিক। এদের মধ্যে মনির ও মানিক ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। আর শফিকুল ইসলাম ও ইব্রাহিম সুমন এখনো পলাতক রয়েছে।
নয়জনের আদালতে স্বীকারোক্তি : সাহিনুদ্দিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নয়জন। তারা হলো- সুমন বেপারি, মুরাদ, ইকবাল, নূর মো. হাসান, রকি, শরীফ, তুহিন, হারুন ও ইমন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মামলার আসামিদের শনাক্ত করতে ভিডিও ফুটেজের সহযোগিতা নেয়া হয়। পরে আসামিদের একে একে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২৮ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে বিকালে সুমন ও টিটু নামে দুই যুবক সাহিনুদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে উল্লেখ করে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। সাহিনুদ্দিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে সুমন ও টিটুসহ ১৪/১৫ জন তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়। এ সময় সাহিনুদ্দিনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল।
গ্যারেজে ঢুকিয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর তাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে নিয়ে ফের কুপিয়ে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়। ছেলের সামনেই নৃশংসভাবে খুন হন সাহিনুদ্দিন। পরে ১৭ মে আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা আকলিমা বেগম।
আকলিমা বেগমের অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকে আলিনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এমএ আউয়ালের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবর দখলে বাধা দেয়ায় খুন হতে হয় তাকে। মামলায় এজাহারভুক্ত ২০ জন ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় ল²ীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এমএ আউয়ালকে।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির মিরপুর বিভাগের এডিসি মো. মোস্তফা কামাল ভোরের কাগজকে জানান, পল্লবীর আলোচিত সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আদালতে দাখিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় ১৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন এবং দুজন পলাতক রয়েছেন। বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুজনের নামে ফাইনাল রিপোর্ট এবং বাকি ১৫ জনের নামে চার্জশিট দেয়া হবে আদালতে। পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়