কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনার এই ভয়ংকর রূপ গুণিতক আকারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আবারো বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। ১৩ জানুয়ারি থেকে নতুন বিধি-নিষেধে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে, রাত ৮টার পর সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করতে, টিকাপ্রাপ্তির সনদপত্র ছাড়া রেস্টুরেন্টে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং ট্রেনে আবারো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ দিন দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। এতে আবারো বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই সামান্য। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন স্কুলমুখী না হওয়ায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাঠ্যবই থেকে। অনুশীলনের অভাবে ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে পারছে না লেখাপড়ায়।
দেখা গেছে, দীর্ঘ ১৮ মাস পর স্কুল-কলেজ খোলার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের পাঠ্যবই ঠিকমতো দেখে পড়তে পারছে না। তারা এক প্রকার ভুলেই গেছে পরীক্ষা নামক শব্দটি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অল্প বয়সি মেয়েরা অধিক হারে ঝরে পড়ছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব ছেলেমেয়ে স্কুলে না এসে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন কাজ-কর্মে। অনেক বাবা-মা স্কুল বন্ধ থাকায় এসব ছোট ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ক্ষেত-খামারে, কলকারখানায় কাজ করাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মেধাবী ছাত্রছাত্রীর মেধা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও বাড়ছে। এমন চিত্র যে শুধু গ্রামাঞ্চলে তা নয়, করোনাকালে রাজধানীতেও যত্রতত্র শিশুশ্রমিকের দেখা মিলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন কারখানা, ওয়ার্কশপ, মুদি দোকান, হোটেল, পরিবহনে শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ বিরতির পর কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালিয়ে আবারো করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির কারণে সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষা স্তরের সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই কোমলমতি শিশুরা। তাই তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের অবশ্যই বিকল্প পথে হাঁটতে হবে।
এর আগে আমরা দেখেছি লকডাউন চলাকালীন অনলাইনে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। যেখানে দিন এনে দিন খাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়, সেখানে স্মার্ট ফোন কিংবা ডিভাইস কিনে সন্তানদের অনলাইনে ক্লাস করানো দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্দেশনা এলেও তারা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অনেক পরিবার থেকে বাচ্চাদের ক্লাস করতে ফোন কিনে দেয়ায় তারা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার, পাবজি খেলে তারা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যেটা নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক ব্যাপার। তাই করোনা সংক্রমণের ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা ভেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হলেও আমাদের উচিত হবে পারিবারিক শিক্ষায় জোর দেয়া। এজন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। পরিবার থেকেই শিক্ষার্থীর প্রাথমিক পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে আমরা জানি, শিক্ষার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। যেহেতু করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারো বন্ধের ঘোষণা আসছে সেহেতু অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুরা তো চাইবে লেখাপড়ায় ফাঁকি দিতে। কারণ তাদের তো এখনো ভালো-মন্দ বোঝার বয়স হয়নি। এজন্য প্রতিদিন অভিভাবককে নিজ দায়িত্বে ছেলেমেয়েকে নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পড়তে বসাতে হবে। কারণ বাচ্চারা পড়ার সময় পাশে অভিভাবক থাকলে কিছুটা জোর করে হলেও পড়ালেখায় মন দেয়। এজন্য স্কুল বন্ধের এই সময়টায় নিজ নিজ শিশুকে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে শিক্ষার সূতিকাগার পরিবার এবং মা-বাবার ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই।
রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়