নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল : ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্যে জিম্মি রোগীরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। আউটডোরে চিকিৎসা নিতে গেলেই রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে পরীক্ষার লম্বা তালিকা। সেই সঙ্গে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে সেটাও লিখে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশনে। বিনিময়ে ডাক্তাররা পাচ্ছেন কমিশন। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ সময় সরকারি হাসপাতালের ল্যাব বন্ধ থাকে। আর এতে করে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
সম্প্রতি মেহেরপুর সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ এক রোগীর প্রেসক্রিপশনে পরীক্ষার জন্য সনো ল্যাব লিখে দেন। এ নিয়ে রাবেয়া মেডিকেল সার্ভিসের মালিকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওই ডায়াগনস্টিক মালিকের জেল-জরিমানাও হয়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মকলেছুর রহমান বলেন, প্রেসক্রিপশনে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম লেখার সুযোগ নেই। যদিও কোনো ডাক্তার লিখে থাকেন তবে তিনি অন্যায় করেছেন। আমরা বিষষটি দেখব।
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য। তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। প্রতিনিধিদের খুশি করতে প্রেশক্রিপশনে লেখা হচ্ছে অতিরিক্ত ওষুধ। বিনিময়ে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ডাক্তার নিচ্ছেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার এই দুদিন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই দুই দিন তারা ডাক্তারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গতকাল রবিবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তারের কক্ষ থেকে রোগী বের হলেই ঘিরে ধরছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দেখছেন প্রেসক্রিপশনে তাদের কোম্পানির ওষুধ লেখা আছে কিনা। না থাকলে শুরু হয় ডাক্তার ম্যানেজ করার কাজ। নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে ডাক্তারের মন জয় করে প্রয়োজন না থাকলেও প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখতে প্ররোচিত করেন তারা। মাসুদ রানা নামের এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীদের প্রেসক্রিশনে আমাদের কোম্পানির ওষুধ আছে কিনা সেজন্য প্রেসক্রিপশনটি দেখা হয়। এটার ছবি তুলে পাঠানো হয় অফিসে। ওষুধ লেখাতে কী কী করেন- জানতে চাইলে অকপটে স্বীকার করেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা। তবে ডাক্তাররা বলছেন, প্রয়োজনের বেশি ওষুধ কখনোই লেখা হয় না এবং মানসম্পন্ন কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ৩০ শতাংশ টাকা ডাক্তারকে দেয়া হয়। কখনো কখনো এর চেয়ে বেশিও দিতে হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেশকিছু মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আমরা চাইলেও রোগীদের পরীক্ষা করতে পারি না। তাদের বাইরের কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারি ডাক্তারের কোনো রকম কমিশন নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া রিপ্রেজেন্টেটিভদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাসহ চিকিৎসা সেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়