ক্ষমা চেয়েছেন চীনা নাগরিক, টাকা চাননি সার্জেন্ট

আগের সংবাদ

জাতীয় পুরুষ বেসবল শুরু

পরের সংবাদ

বড় দরপতনে লোকসানে নীলফামারীর আলুচাষিরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুল আহসান কল্লোল, নীলফামারী থেকে : নীলফামারীতে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে আলুর বাজারে। পাইকারি বাজারে সেভেন জাতের প্রতি কেজি আলু ৫-৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামের আশায় অনেক চাষি খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আলু নিয়ে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সেখানে প্রতি কেজি আলু ৭-৮ টাকায় বিক্রি হওয়ায় পরিবহন খরচও মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। একজন চাষির হিসাব মতে, আলু চাষে এবার বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে দেশে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত বছরের প্রকৃত উৎপাদনের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন বেশি। গত অর্থবছর দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯ লাখ ১৭ হাজার টন। দেশে বছরে আলুর চাহিদা মাত্র ৭৭ লাখ টন। এতে বছরে ২৬-৩৭ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। বছরে রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ৩৫-৫০ হাজার টন।
সরজমিন দেখা গেছে, নীলফামারীতে বর্তমানে পাইকারি বাজারে সেভেন জাতের আলু প্রতি কেজি ৫-৬ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা দোকানে এ জাতের আলু প্রতি কেজি ১০ টাকা, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকায়। গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি আলু ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সূত্রমতে, বিগত বছরে আলু নিয়ে সিন্ডিকেটের কারণে অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বেড়ে যায় আলুর। এ বছরও মধ্যস্বত্বভোগীদের ওই সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দরপতন ঘটেছে।
২০ বছর ধরে আলুর চাষ করছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলীর আকবর আলী। কখনো এমন দরপতন দেখেননি বলে জানান তিনি। এবার দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। শ্রমিক, সার ও বীজসহ প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। বিঘায় আলু পেয়েছেন ২৫০০ কেজি। দরপতনের কারণে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে তার।
নীলফামারী সদরের সোনারায়ের কৃষক আহমেদ আলী জানান, ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে ১৭ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে খুলনায় গিয়ে সাড়ে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। সেখানে ট্রাক থেকে প্রতি বস্তা আলু নামাতে কুলিকে ১৩ টাকা আর আড়তদারকে প্রতি কেজিতে ৩০ পয়সা করে দিতে হয়েছে। এসব দেয়ার পর লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। আলু বিক্রি করে ট্রাক ভাড়া দিতে পারেননি তিনি।
সৈয়দপুরের পাইকারি বাজারের আড়তদার কবিরুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার সেভেন জাতের আলু প্রতি কেজি ৫-৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এমন দরপতনে আলুচাষিদের আবাদি ও পরিবহন খরচ উঠছে না। তিনি জানান, এ জাতের আলুর উৎপাদন এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। এ পণ্যটি বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। তাই বাজারে দরের তারতম্য ঘটে। তবে সিন্ডিকেটের কারণে দরপতনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, আলুর ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু দরপতনের কারণে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এক-দেড় মাস আগে এ আলু ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ওই সব জমিতে নতুন করে ফের আলু চাষ করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বাজারে এ আলু আসছে। ফলে বাজারে আলুর সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দরপতন ঘটেছে বলে মনে করছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়